প্রাথমিক তদন্তের পর আইসিকে সাসপেন্ড। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
দুই মাধ্যমিক পড়ুয়া নিখোঁজ এবং পরে মৃত্যুর ঘটনায় সাসপেন্ড করা হল বাগুইআটি থানার আইসি কল্লোল ঘোষকে। প্রাথমিক তদন্তের পর কর্তব্যে গাফিলতির দায়ে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে বলে খবর মিলেছে।
গোটা ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে গোড়া থেকেই। পরিবারের তরফে দুই ছাত্রের নিখোঁজের বিষয়টি জানানোর পরেও কেন পদক্ষেপ করা হল না পুলিশের তরফে, সেই প্রশ্ন উঠেছে। শুধু তাই নয়, মুক্তিপণ চেয়ে এসএমএসের কথা জানিয়ে এফআইআর দায়ের হওয়ার পরেও তদন্তে গড়িমসি কেন, এই প্রশ্নও তুলেছে নিহতদের পরিবার।
বাগুইআটির হিন্দু বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণির ছাত্র অতনু এবং অভিষেক। পুলিশ সূত্রে খবর, দুই স্কুল পড়ুয়া নিখোঁজ হয় গত ২২ অগস্ট। দু’দিন তাদের কোনও খোঁজ না পেয়ে বাগুইআটি থানায় অভিযোগ জানায় পরিবার। পরিবারের অভিযোগ ছিল, দু’জনকেই অপহরণ করা হয়েছে। পুলিশের কাছে অতনুর বাবা অভিযোগ করেন, তিনি বেশ কয়েক বার উড়ো ফোন পেয়েছেন। মুক্তিপণ চেয়ে মেসেজও পেয়েছেন। অপহরণকারীরা নির্দিষ্ট কোনও জায়গা বলেনি। বরং বার বার বদলেছে মুক্তিপণের অঙ্ক।
এর মধ্যে গত ২৪ অগস্ট থেকে দুই কিশোরের খোঁজ শুরু করে পুলিশ। তদন্তে উঠে আসে বেশ কিছু তথ্য। পুলিশ জানতে পারে, দুই কিশোরকে অচেনা কেউ নয়, ‘অপহরণ’ করেছে তাদের পরিচিতই।
অতনুর পরিবারের সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক সত্যেন্দ্র চৌধুরির। পুলিশ সূত্রে খবর, গত ২২ অগস্ট স্কুল থেকে বাড়ি ফেরে অতনু। ঠিক তখনই সত্যেন্দ্রর ফোন। কী কারণে অতনুকে ফোন করেছিলেন সত্যেন্দ্র? অতনুর পরিবার পুলিশকে জানিয়েছে, একটি বাইক কেনার জন্য সত্যেন্দ্রকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিল দশম শ্রেণির পড়ুয়া অতনু। কিন্তু বাইক কেনা হয়নি। অভিযোগ, ওই দিন অতনুকে নিজেই ফোন করে বাইক কেনার জন্য ডাকেন সত্যেন্দ্র। বেশ খুশি মনেই বাড়ি থেকে বার হয় অতনু। সঙ্গে নেয় সমবয়সি তুতো ভাই অভিষেককে।
তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, সত্যেন্দ্র গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। সেই গাড়িতেই দুই কিশোরকে নিয়ে রাজারহাটে একটি বাইক শোরুমে যান। কিন্তু বাইক পছন্দ হয়নি সত্যেন্দ্রের। তাই শোরুম থেকে দু’জনকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। বাসন্তী হাইওয়ে ধরে ছোটে গাড়ি। বিধাননগর পুলিশের দাবি, ওই দিন রাতেই খুন করা হয় দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে। সূত্রের খবর, তদন্ত যে ভাবে এগিয়েছে, তাতে পুলিশের ভূমিকায় ‘ক্ষুব্ধ’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যে কারণেই ওই পদক্ষেপ করা হল বলে মনে করা হচ্ছে।