CPM's Party Office

বাঘা যতীনের মামার বাড়িই সিপিএমের জীর্ণ অফিস

যতীনের জন্ম অবিভক্ত নদিয়া জেলার কুষ্টিয়া মহকুমার কয়াগ্রামে (এখন বাংলাদেশে)। মাত্র পাঁচ বয়সে বাবা উমেশচন্দ্রের মৃত্যুর পরে মা শরৎশশী ও দিদির সঙ্গে তিনি মামার বাড়িতে চলে আসেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৩ ০৫:৫১
Share:

কৃষ্ণনগরের বাঘা যতীনের বাড়ি। ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।

বিশাল পুলিশ বাহিনী ধরতে এসেছে যতীনকে। গোটা বাড়ি ঘিরে ফেলেছে পুলিশ। পালানোর পথ নেই। খাটা পায়খানা সাফ করার ‘মেথর’ সেজে পালালেন যতীন। তার পর থেকে আর কখনও তিনি নদিয়ার কৃষ্ণনগরে মামার বাড়িতে পা দেননি।

Advertisement

যতীনের পুরো নাম যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, যিনি বাঘা যতীন নামে সমধিক খ্যাত। এই পুজোয় রুপোলি পর্দায় যাঁর নামভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন অভিনেতা-সাংসদ দীপক অধিকারী ওরফে দেব।

যতীনের জন্ম অবিভক্ত নদিয়া জেলার কুষ্টিয়া মহকুমার কয়াগ্রামে (এখন বাংলাদেশে)। মাত্র পাঁচ বয়সে বাবা উমেশচন্দ্রের মৃত্যুর পরে মা শরৎশশী ও দিদির সঙ্গে তিনি মামার বাড়িতে চলে আসেন। ভর্তি হন কৃষ্ণনগরের অ্যাংলো ভার্নাকুলার (এভি) স্কুলে, ১৮৯৮ সালে সেখান থেকেই প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাশ করেন। যতীনের মামাতো ভাইয়ের ছেলে, অশীতিপর সুজিত চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “বড়দের মুখে ওঁর ওই পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালানোর গল্প অনেক বার শুনেছি।”

Advertisement

কৃষ্ণ-নাগরিকেরা অনেকেই কিন্তু এই বাড়িটিকে বাঘা যতীনের মামার বাড়ি হিসেবে চেনেন না। তাঁরা বরং এটিকে অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি বলেই জানেন। অথবা সিপিএমের পার্টি অফিস!

পরিবার সূত্রে জানা যায়, জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির শিলাইদহ এস্টেটের অন্যতম পরামর্শদাতা ছিলেন যতীনের বড়মামা, আইনজীবী বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়। তিনিই কৃষ্ণনগরের হাই স্ট্রিটে বসত স্থাপন করেন। কিছু দিন পরে কাছেই বাড়ি করে চলে আসেন যতীনের ছোট মামা ললিতকুমার। এঁর সঙ্গেই বেশি ভাব ছিল যতীনের। সুজিতের কথায়, “শুনেছি, যতীন আমাদের বাড়িতেই বেশি থাকতেন।”

ললিতকুমারও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন, এক সময়ে কৃষ্ণনগরের উপ-পুরপ্রধান হয়েছিলেন। পরে তাঁর ছেলে সুহৃদ চট্টোপাধ্যায় পুরপ্রধান হন। সুজিত তাঁরই ছেলে। তিনি ধরিয়ে দেন, “ললিতকুমারের আর এক ছেলে, আমার জেঠা মোহিত চট্টোপাধ্যায়ই অভিনেতা সৌমিত্রের বাবা।”

এখন আর সেই বাড়িতে কেউ থাকেন না। পরিবারের সকলেই কৃষ্ণনগর ছেড়েছেন বহু আগে। সুজিত বলেন, “সৌমিত্র ও তাঁর ভাইবোনেরা তাঁদের অংশ বিক্রি করতে চাইলে আমি আর ভাই কিনে নিই। কিন্তু আমরা বাইরে থাকি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বাড়িটা ভগ্নদশা হয়েছিল। বাধ্য হয়ে আমরাও বাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিই।” তিনি জানান, মোট ১১ কাঠা জমির মধ্যে দেড় কাঠা কিনে নেন এক পুরনো ভাড়াটিয়া। বাকিটা ২০০৭ সালে কেনে বিপ্লবী অমৃতেন্দু মুখোপাধ্যায় ট্রাস্ট, যার সদস্যেরা সকলেই সিপিএম নেতা।

এখন সেই জীর্ণ বাড়ির সামনের অংশে কোনও মতে গোটা তিনেক ঘর টিকে আছে। সেই ঘরেই সিপিএমের কৃষ্ণনগর শহর এরিয়া কমিটির অফিস। কিন্তু বাঘা যতীন ও সৌমিত্রের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি সংস্কারের কী হবে?

পঞ্চমীতে ‘বাঘা যতীন’ ছবিটি কৃষ্ণনগরের মাল্টিপ্লেক্সেও মুক্তি পেয়েছে। তাতেও এই মামার বাড়ির পর্ব নেই। তবে ট্রাস্টের সম্পাদক তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর নেতা এসএম সাদি বলেন, “বাড়ি সংস্কারের একটা পরিকল্পনা আমাদের আছে। বাঘা যতীনের স্মৃতিরক্ষা করেই সবটা করা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement