rape

Bagda: ‘কাঁকরোলের মাচার নীচ থেকে টেনে বার করে ধর্ষণ!’ দুই বিএসএফ কর্মী পুলিশ হেফাজতে

বিএসএফের তাড়া খেয়ে তরুণী শিশুকন্যাকে নিয়ে জমিতে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিএসএফের এক কনস্টেবল ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বাগদা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২২ ১৫:৫৭
Share:

সীমান্তে তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

বিএসএফের ভয়ে লুকিয়ে পড়েছিলেন কাঁকরোলের মাচার নীচে। মধ্যরাতে সেখান থেকে টেনে বার করে ধর্ষণ করা হয় বছর তেইশের তরুণীকে! বিএসএফের কমান্ডার পদমর্যাদার এক অফিসারের নির্দেশেই ওই তরুণীকে ধর্ষণ করেছেন বাহিনীর এক কনস্টেবল! বাগদায় ধর্ষণের ঘটনায় এমন চাঞ্চল্যকর তথ্যই জানতে পেরেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতের ওই ঘটনায় শুক্রবার গ্রেফতার হওয়া দুই বিএসএফ-কর্মীকে শনিবার বনগাঁ মহকুমা আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাঁদের সাত দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

Advertisement

তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদার জিতপুর বর্ডার আউটপোস্টের কাছাকাছি এলাকায় সীমান্ত পেরোনোর চেষ্টা করছিলেন বছর তেইশের ওই তরুণী। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্বামী ও দুই সন্তান। তাঁরা আদতে উত্তর ২৪ পরগনারই বসিরহাটের ত্রিমোহিনী এলাকার বাসিন্দা। পুলিশের কাছে করা অভিযোগে ওই তরুণী জানিয়েছেন, তাঁরা রাতের অন্ধকারে সীমান্তের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ওই সীমান্ত এলাকায় পাহারার দায়িত্ব বিএসএফের ৬৮ নম্বর ব্যাটালিয়নের। ওই রাতে বিএসএফ-কর্মীদের টর্চের আলোয় ওই তরুণীদের গতিবিধি টের পেয়ে যায় বিএসএফ। এর পর সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর তাড়া খেয়ে ওই তরুণী স্বামী-সন্তান-সহ পালানোর চেষ্টা করেন। সেই সময় স্বামী এবং এক সন্তানের কাছ থেকে তিনি অন্য সন্তান-সহ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

পুলিশের কাছে ওই তরুণী জানিয়েছেন, এর পর ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে ওই তরুণী আশ্রয় নেন সীমান্তবর্তী একটি কাঁকরোল ক্ষেতে। কাঁকরোলের মাচার নীচে তিনি যখন সন্তান নিয়ে লুকিয়ে, তখনই এক বিএসএফ কনস্টেবল তাঁদের দেখতে পান টর্চের আলোয়। এর পর তিনি ওই তরুণী এবং তাঁর শিশুকন্যাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে পৌঁছন বিএসএফের এএসআই পদমর্যাদার এক অফিসার। তিনি পোস্ট কমান্ডার। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, ওই এএসআইয়ের নির্দেশেই তাঁর অধীনস্থ কনস্টেবল তরুণীকে এর পর ধর্ষণ করেন। তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁকে বলা হয়েছিল, ‘‘কনস্টেবলের কাজ শেষ হয়ে গেলেই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হবে।’’ ‘প্রতিশ্রুতি’ মতো তাঁদের দু’জনকে ছেড়েও দেয় বিএসএফ।

Advertisement

এর পর শুক্রবার বিকেল ৪টে নাগাদ ওই তরুণী বাগদা থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দুই বিএসএফ-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতেরা জিজ্ঞাসাবাদের সময় নিজেদের অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। ধৃতদের শনিবার বনগাঁ আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক অভিযুক্তদের সাত দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই তরুণীর মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়েছে। তাঁর দেহে মারধরের চিহ্নও মিলেছে। ধৃতদের নিজেদের হেফাজতে পেয়ে ঘটনার পুনর্নিমাণ করা হবে বলেও জানা গিয়েছে তদন্তকারীদের সূত্রে। পাশাপাশি, শনিবার ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগকারিণীর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে।

শনিবার ঘটনাস্থলে যান বাগদার বিধায়ক তথা তৃণমূলের বনগাঁ সংসদীয় জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস। এলাকা ঘুরে দেখেন তিনি। বিএসএফকে বিঁধে তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিএসএফ এক জন অসহায় মহিলাকে ধর্ষণ করেছে। এ নিয়ে এলাকায় মানুষের মধ্যে চাপা আতঙ্ক আছে। বিএসএস যা করেছে তাতে সাধারণ মানুষ আরও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন। আমরা আগামিদিনে এটা নিয়ে মিছিল করব। আজ যা দেখলাম তা সবিস্তারে মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বিএসএফ নববিবাহিত কোনও মহিলা দেখলেই তাঁকে আটকে রাখছে। ফোন নম্বর চাইছে।’’

বিশ্বজিতের অভিযোগ নিয়ে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক দেবদাস মণ্ডলের পাল্টা তোপ, ‘‘বিশ্বজিৎবাবুরা ঘোলা জলে মাছ ধরতে নেমেছেন। আইন আইনের পথে চলবে। যদি ওঁরা দোষ করে থাকেন তা হলে শাস্তি পাবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement