ফাইল চিত্র
নিজে গাড়ি চালিয়ে গেলেন এবং ‘নতুন পথে’ চলার নির্দেশ নিয়ে ফিরলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাবুল সুপ্রিয়র সোমবারের বৈঠকের এটাই নির্যাস। অন্তত ৪০ মিনিটের এই বৈঠকে ছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শনিবার অভিষেকের হাত ধরেই তৃণমূলে এসেছেন বাবুল।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিতে হয়েছে বলে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ জানিয়েছেন বাবুল। তৃণমূলে আসার পরে তাঁকে কী ভাবে ‘কাজে লাগানো’ হবে, এটিই এখন সবচেয়ে বেশি আলোচ্য। এক দিকে তৃণমূলের চড়া সমালোচনায় বিজেপি শিবিরে তিনি ছিলেন অন্যতম মুখ। আবার স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী যাঁকে পর পর দু’দফায় কেন্দ্রে মন্ত্রী করেছিলেন, সেই বাবুলকে ‘রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বহীন’ বলার ক্ষেত্রেও বিজেপি দ্বিধায় ভুগছে। সূত্রের খবর, তৃণমূল নেতৃত্ব আপাতত এই পরিস্থিতি কাজে লাগাতে চান।
মমতার সঙ্গে বৈঠকের পরে বাবুল বলেছেন, তাঁকে কী কাজ দেওয়া হবে, তা বলা তাঁর এক্তিয়ারভুক্ত নয়। যখন বলার সময় আসবে, ‘দিদি’ বলবেন। সেই সঙ্গেই তাঁর দাবি, ‘‘যখন যে কাজ করেছি, তাতে পুরো মন দিয়েছি। এখনও যা করব, অন্তর থেকে করব।’’
কেন্দ্রে নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন বাবুল। সূত্রের খবর, মমতা তাঁকে অনুরূপ কোনও ভূমিকায় কাজে লাগাতে পারেন। গুঞ্জন— পুজোর পরে রাজ্য মন্ত্রিসভায় একটু রদবদল হতে পারে। কারণ বিধায়ক নন বলে অমিত মিত্র আর অর্থমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী অর্থ দফতর নিজের হাতে নিলে হয়তো এক জন রাখা হবে। একটি সূত্রের ইঙ্গিত, তখন নগরোন্নয়ন দফতরে বাবুলের নাম বিবেচনায় আসতে পারে। যদি তা হয়, তা হলে তাঁকেও ছ’মাসের মধ্যে বিধায়ক হয়ে আসতে হবে। তবে এখনও পর্যন্ত এ সবই জল্পনার স্তরে।
আপাতত বাবুল তৃণমূলের পরিচয় নিয়ে বিভিন্ন জেলায় ঘুরতে চান। মমতা এবং অভিষেক তাতে সম্মত হয়েছেন।
বাবুল জানিয়েছেন, তিনি আজ, মঙ্গলবার বিকেলে দিল্লি যাবেন। লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা কাল, বুধবার তাঁকে সময় দিলে কালই তিনি সাংসদ পদে ইস্তফা দেবেন।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি (তখনও ওই পদে) হিসাবে দিলীপ ঘোষ এ দিন বিকেলে বলেন, ‘‘বাবুলকে নিয়ে আমাদের কোনও জ্বালা নেই। থাকলে চলে যাওয়ার পর আসানসোলের লোক মিষ্টি খেত না। বোঝাই যাচ্ছে, সাংসদ হিসেবে মানুষের সঙ্গে ওঁর সম্পর্ক কেমন ছিল। তিনি বলছেন খেলতে পারেননি। আমরা ওঁকে স্ট্রাইকার করেছিলাম। গোল দিতে না পারলে কী করব। পারলে বিধানসভায় টালিগঞ্জে এই ফল হত না।’’ উল্লেখ্য, বাবুল টালিগঞ্জে ভোটে দাঁড়িয়ে অরূপ বিশ্বাসের কাছে বিপুল ভোটে হেরেছেন। দিলীপের সংযোজন, ‘‘বাবুল বিশিষ্ট মানুষ। যে দলেই থাকুন, মানুষের সেবা করুন।’’
বাবুল তৃণমূলে যাওয়ার পরে এ দিন তাঁর লোকসভা কেন্দ্র আসানসোলে গিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিজেপির কার্যালয়ে বৈঠক করেন। এটা এই কেন্দ্রে আগামী উপনির্বাচনের প্রস্তুতির বৈঠক কি না, সেই প্রশ্নে শুভেন্দু বলেন, “বিজেপি সব সময় প্রস্তুত থাকে। সাংসদ দল বদল করলে লোকসভা থেকে পদত্যাগ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে ছ’মাসের মধ্যে ভোট হয়। এ বারও তাই হবে। আরও কয়েকটি রাজ্যে উপনির্বাচন আছে। সম্ভবত সেগুলির সঙ্গে ফেব্রুয়ারি মাসে আসানসোলের নির্বাচন করে দেওয়া হতে পারে। এখানে বাবুল সুপ্রিয় চলে গিয়েছেন। তাই কর্মী-সমর্থকদের সজাগ করতে এসেছি। এসে দেখলাম, কর্মী-সমর্থকেরা আগে থেকেই সজাগ আছেন। তাঁরা তো হতাশ হননি। উল্টে দ্বিগুণ উৎসাহ ফিরে এসেছে সংগঠনে।”
রাজনৈতিক জল্পনায় এ দিন নতুন যুক্ত হয়েছে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের নাম। তিনি রবিবার রাতে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করেছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু লকেট এ দিন টুইট করে দাবি করেছেন, ‘‘এ সব ডাহা মিথ্যা। তিনি দিল্লিতে।’’