বাবুল সুপ্রিয়। ফাইল চিত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছেন। লোডেড ম্যাগাজিন ক্যাম্পাসে পাওয়া গিয়েছে। প্ররোচনার সূত্রপাত আপনার দিক থেকেই?
ওই রকম টানা গালাগাল, জামা ছেঁড়া, চুল টানা, চাঁটি মারা চলছিল। আমি মাথা গরম করলে কী ঘটে যেতে পারতো, বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই! ছাত্র-ছাত্রীদের ধাক্কাধাক্কিতে সিআইএসএফ জওয়ানের অস্ত্র এবং ম্যাগাজিন মাটিতে পড়েছে। তার পরে সেটা নিয়েই ‘ইস্যু’! আমার এক নিরাপত্তারক্ষীর হাতেই তো চোট লেগেছে।
আপনি ছাত্রদের জামা টেনে ধরেছেন, ছাত্রীদের প্রতি অশালীন মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ। এগুলো প্ররোচনা নয়?
আত্মরক্ষায় দু’টো ঘুষি চালানোর অধিকার আমারও তো আছে। কিন্তু আমি তা করিনি। সঙ্গে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদেরও সংযত থাকতে বলেছি। তার জন্য আমাকে ভৎর্সনার মুখে পড়তে হয়েছে যে, আমি আধা-সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের কর্তব্য পালন করতে দিচ্ছি না। কিন্তু ওই হেনস্থা, অসভ্যতার মধ্যেও পাল্টা কিছু করিনি। জামা ছিঁড়ে দেওয়া বা চুল টানার সময়ে প্রতিবর্ত ক্রিয়ায় নিজেকে বাঁচাতে চেয়েছি শুধু।
ছবি দেখিয়ে বলা হচ্ছে, এক ছাত্রীকে কনুই দিয়ে আঘাত করেছেন আপনি। অন্য এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেছেন। অভিযোগ, ছাত্রীদের উদ্দেশে অশালীন মন্তব্য ও অঙ্গভঙ্গিও ছিল।
আমার জামা ছিঁড়ে দেওয়ার পরে আমি সেই সময় নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিলাম। আমার হাতের ভঙ্গি দেখলে সেটা বোঝা যাবে। কনুই দিয়ে আঘাত করার কোনও প্রশ্নই নেই। অন্য এক ছাত্রী আমার গায়ের কাছে এসে জামা ধরতে যাচ্ছিলেন। ওঁরা কী করে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেন, জানি না! বলা হচ্ছে, আমি নাকি কোনও ছাত্রীকে বলেছি আমার ঘরে এলে বুঝিয়ে দেব আমি কে! আমার মুখে এই কথার ফুটেজ কেউ দেখাতে পারবেন?
যে ভাবে আপনি কথা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে কি ওই ভাবে কথা বলা সঙ্গত? উপাচার্যের সম্মানহানি আপনি করেননি?
হেনস্থা, অসভ্যতার মধ্যে হাত-পা নেড়ে কথা বলতে দেখে রূঢ় মনে হতেই পারে। কিন্তু আমার বক্তব্য থেকে আমি সরছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ে কী পরিস্থিতি হয়ে আছে, উপাচার্য জানতেন। তিনি আগে সেটা এক বার জানিয়ে দিলে আমি ওখানে যেতামই না। আবার ওখানে গিয়ে আমি গোলমালের মধ্যে পড়ার পরে উনি পুলিশ ডাকবেন না। তৃণমূলের মন্ত্রী ওই পরিস্থিতিতে পড়লে উনি কি একই মনোভাব নিতেন? উপাচার্য রাজনৈতিক নেতার মতো আচরণ করছেন কি না, এই প্রশ্নটা আমি ওঁকে করেছি। আমি বিজেপির লোক হতে পারি কিন্তু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং মন্ত্রী তো বটে।’’
আপনার ক্ষোভ কার বিরুদ্ধে?
ছাত্র-ছাত্রীরা কী করেছে, দেখাই গিয়েছে। কিন্তু টানা ছয়-সাড়ে ছয় ঘণ্টা ধরে এক জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে ঘিরে এই রকম হেনস্থা চলল আর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নীরব দর্শক থাকলেন— এর জবাব ওঁকে দিতে হবে! নিরাপত্তারক্ষীদের কাজে লাগিয়ে আমি হলে ঢুকতে পারতাম। কিন্তু আমি বলেছিলাম, এ ভাবে ঢুকব না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে গিয়ে আবার ঢুকেছি বলে যেটা বলা হচ্ছে, সেটাও ঠিক নয়। রাজ্যপালের সঙ্গে বেরোনোর আগে পর্যন্ত আগাগোড়া ক্যাম্পাসের ভিতরেই ছিলাম।
কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবেন?
আমি কোনও এফআইআর করছি না। যা ঘটেছে, সবটাই ক্যামেরার সামনে। গোটা ঘটনা জনসমক্ষে আছে। কে ঠিক বলছে, কে ভুল, মানুষ বুঝে নিতে পারবেন। এবং ঠিক সময়ে জবাব তাঁরাই দেবেন!
বিশ্ববিদ্যালয়ে এবিভিপি-র তাণ্ডব নিয়ে কিছু বলার নেই?
দলের এক জন নেতা বা মন্ত্রী ওই ভাবে হেনস্থার শিকার হওয়ার পরে ছাত্র সংগঠন কিছুই করবে না, এটা মনে করা একটু অবাস্তব! আগের ঘটনা না ঘটলে পরেরটাও ঘটতো না!