Haridevpur

‘অয়ন নিজেই ওই ছবি বন্ধুদের দেখিয়েছিল, সম্প্রতি বান্ধবীর বাবা সেই খবর জানতে পারেন’

তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের একাংশের দাবি, মোবাইলে থাকা ছবি এবং ভিডিয়ো নিয়েই গোলমালের সূত্রপাত। এবং তার জেরেই পরিকল্পিত ভাবে অয়নকে খুন করা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও মগরাহাট শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২২ ০৭:২৫
Share:

অয়ন মণ্ডল খুনের তদন্তে ক্রমশ সামনে আসছে মোবাইলের তথ্যও। ফাইল চিত্র।

খুনের পিছনে ত্রিকোণ-সম্পর্কের জটের সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে আগেই। এ বার হরিদেবপুরের অয়ন মণ্ডল খুনের তদন্তে ক্রমশ সামনে আসছে মোবাইলের তথ্যও। পুলিশের একটি সূত্রের ইঙ্গিত, অয়নের মোবাইলে তাঁর বান্ধবী এবং বান্ধবীর মায়ের সঙ্গে ‘ঘনিষ্ঠ’ মুহূর্তের ছবি এবং ভিডিয়ো এই খুনের পিছনে অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে আসতে পারে। যদিও এই মোবাইল ‘খোয়া যাওয়া’র পরে এখনও পর্যন্ত পুলিশের হাতে আসেনি।

Advertisement

তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের একাংশের দাবি, মোবাইলে থাকা ওই ছবি এবং ভিডিয়ো নিয়েই গোলমালের সূত্রপাত। এবং তার জেরেই পরিকল্পিত ভাবে অয়নকে খুন করা হয়েছে কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে। তবে পুলিশের তরফ থেকে এ ব্যাপারে এখনও পর্যন্ত কোনও নিশ্চিত উত্তর দেওয়া হয়নি। তদন্তকারীদের দাবি, তদন্তে নানা বিষয় একের পর এক উঠে আসছে। সেগুলি নিয়ে ধৃতদের জেরাও করা হচ্ছে।

দশমীর রাতে বান্ধবীর বাড়িতে গিয়েছিলেন কলকাতার হরিদেবপুরের বাসিন্দা, পেশায় অ্যাপ-বাইক চালক অয়ন মণ্ডল (২১)। তার পর থেকেই নিখোঁজ হন তিনি। শুক্রবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাটের মাগুরপুকুরে তাঁর মরদেহ শনাক্ত করা হয়। সেই ঘটনার সূত্রে অয়নের বান্ধবী, বান্ধবীর বাবা, মা, নাবালক ভাই-সহ মোট ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, মাথায় আঘাতের জেরে অয়ন মারা যান এবং তার পরে পণ্যবাহী গাড়ি ভাড়া করে তাঁর দেহ মাগুরপুকুরে ফেলে দেওয়া হয়।

Advertisement

ঘটনার দিন অয়নের সঙ্গে এক বন্ধু গিয়েছিলেন। তিনি বান্ধবীর বাড়ির বাইরে ছিলেন। পুলিশ সূত্রের খবর, সেই সময়ে বান্ধবীর বাবা এবং ভাই বাড়িতে ছিলেন না। বাড়িতে ঢুকতেই বান্ধবীর মায়ের সঙ্গে অয়নের বচসা হয়েছিল। অন্য একটি সূত্রের দাবি, মোবাইলে বান্ধবী এবং তাঁর মায়ের সঙ্গে অয়নের ঘনিষ্ঠ ছবি নিয়ে সম্প্রতি গোলমাল হয়েছিল। ওই ছবি এবং ভিডিয়ো সম্পর্কে অয়নের কয়েক জন বন্ধুও জানতেন। অয়নের এক বন্ধু বলেন, “অয়ন নিজেই ওই ছবি বন্ধুদের দেখিয়েছিল। সম্প্রতি সেই খবর বান্ধবীর বাবা জানতে পারেন।” প্রশ্ন উঠেছে, ওই ছবি এবং ভিডিয়ো মুছে ফেলা নিয়েই কি গোলমাল? বহু ক্ষেত্রে এই ধরনের ছবি এবং ভিডিয়ো নিয়ে ব্ল্যাকমেল করার অভিযোগ ওঠে। এ ক্ষেত্রেও তেমন কিছু হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

সে দিন অয়নের সঙ্গে বান্ধবীর বাড়ির বাইরে ছিলেন রাজু প্রামাণিক নামে এক যুবক। বান্ধবীর বাবাকে আসতে দেখে তিনি অয়নকে জানিয়েছিলেন। অয়ন সেই সময়ে তাঁকে জানান, তিনি ছাদে আছেন। রাজু যেন বাড়ি চলে যান। তিনি পরে ফিরবেন। অয়নের কথা শুনে রাজু ফিরে আসেন। রাজুর দাবি, সেই সময়ে অয়ন তাঁকে এ-ও জানিয়েছিলেন যে, বান্ধবীর মা অয়নের বুকে মেরেছেন। বন্ধুদের দাবি, রাত তিনটে পর্যন্ত অয়নের ফোন সক্রিয় ছিল। তা হলে কি তার পরেই অয়নকে খুন করা হয়? তদন্তকারীদের একাংশের যদিও অনুমান, অয়নকে তার আগেও খুন করা হয়ে থাকতে পারে। তিনটের পরে হয়তো শুধু মোবাইল বন্ধ করা হয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, দোতলার ঘরেই খুন করা হয় অয়নকে। প্রমাণ লোপাটের জন্য ঘর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলা হয়। তাই ফরেন্সিক পরীক্ষায় ঘর থেকে রক্তের বিশেষ নমুনা মেলেনি। এমনকি, পুলিশের নজর এড়াতে ধস্তাধস্তির পরে এলোমেলো হওয়া ঘরের জিনিসও ফের সাজিয়ে ফেলা হয়। অয়নের বান্ধবী এবং তাঁর মা ঘর গোছানোর কাজ করেছিলেন। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, অয়নের দেহ লোপাটের পরে বাবা-মায়ের পরামর্শেই ধৃত তরুণী একাদশীর দিন অয়নের বাড়িতে গিয়েছিলেন। সম্ভবত উদ্দেশ্য ছিল, তদন্তে নিজেদের দিক থেকে নজর ঘুরিয়ে দেওয়া।

এ দিকে, মগরাহাটের মাগুরপুকুর খালে ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হতে পারে বলে খবর ছড়িয়েছিল। মগরাহাট পুলিশ আধিকারিকেরাও এ দিন ঘটনাস্থলে একাধিক বার যান। কিন্তু কলকাতা পুলিশের কোনও দল মাগুরপুকুরে যায়নি। স্থানীয় এবং পুলিশ সূত্রের দাবি, মাগুরপুকুরের ওই এলাকায় কয়েকটি মোড়ে সিসি ক্যামেরা আছে। তার তথ্য থেকে তদন্তকারীরা সাহায্য পেতে পারেন। মাগুরপুকুরের যেখান থেকে দেহ উদ্ধার হয়, তার আধ কিলোমিটার দূরে পুলিশ ফাঁড়ি। মগরাহাট পুলিশ সূত্রের খবর, দশমীর রাত তিনটে পর্যন্ত ওই ফাঁড়ির কর্মীরা এলাকায় টহল দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা কোনও সন্দেহভাজন গতিবিধি দেখেননি। তা থেকে অনুমান, তিনটের পরেই অয়নের দেহ মাগুরপুকুরে ফেলা হয়েছিল। পরে সকালে দেহ মেলে। এর পরে হরিদেবপুর থানার যুবক নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনে মগরাহাট থানার এক অফিসার তৎপর হয়ে হরিদেবপুর থানায় যোগাযোগ করেছিলেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement