অভীক দে-র (সবুজ পাঞ্জাবি) সঙ্গে নূপুর ঘোষ (ডান দিকে)। —ফাইল ছবি।
এক বছর আগেই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতি বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট চিকিৎসক পদের মেয়াদ ফুরিয়েছিল তাঁর। তার পর ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশালিটিতে বাধ্যতামূলক ভাবে যোগ দেওয়ার নির্দেশ এলেও মানেননি নূপুর ঘোষ। আর জি কর আবহে ‘দাদাগিরি’-তে নাম জড়ানো অভীক দে-র স্ত্রী নূপুর। দীর্ঘ এক বছর তিনি নির্দেশ না মানায় কার্যত ফের পুরনো নির্দেশই কার্যকর করতে বলেছে স্বাস্থ্য ভবন।
নানা প্রশ্নের মুখে জেনারেল সার্জারির স্নাতকোত্তর পড়ুয়া অভীককে ইতিমধ্যে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী-ই বা কেন স্বাস্থ্য ভবনের নির্দেশ মানেননি, চর্চা শুরু হয়েছে তা নিয়েও। নূপুরের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে গোপীবল্লভপুর সুপার স্পেশালিটির সুপার বিদ্যুৎ পাতর মানছেন, ‘‘গত বছর অগস্টে নতুন এক জন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের যোগ দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল। কিন্তু তিনি আসেননি।’’ জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভুবনচন্দ্র হাঁসদাও বলেন, ‘‘এখনও কেউ আমাদের কাছে রিপোর্ট করেননি।’’
গত বছর ১১ অগস্ট স্বাস্থ্য ভবনের ওই বিজ্ঞপ্তিতে (নম্বর: এইচএফ/ও/এইচএস(এমএ)/১২০৭/এইচএডি/১২এম-৫২-২০২৩-এইচএফডব্লিউ-২৫০৯৯/১০২/২০২৩-এমএ) চিকিৎসাবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ মোট ৫৮৭ জনকে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে বাধ্যতামূলক ভাবে যোগ দিতে বলা হয়। সেখানে ২৩১ নম্বরে নূপুরের নাম ছিল (পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রেশন নম্বর: ১১৮৩২০১১২০১২)। নিয়মমতো রাজ্যের সরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তরদের তিন বছর সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা দেওয়া বাধ্যতামূলক। যেখান থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন, সেখানে প্রথম এক বছর ও পরের দু’বছর অন্য সরকারি হাসপাতালে পরিষেবা দিতে হয়। বন্ডের শর্ত অনুযায়ী সিনিয়র রেসিডেন্টের যাবতীয় নথি স্বাস্থ্যভবনে জমা থাকে। নিয়ম না মানলে ৩০ লক্ষ টাকা দিয়ে সরকারি অথবা বেসরকারি ক্ষেত্রে চিকিৎসক হিসেবে পরিষেবা দেওয়ার অনুমতি মেলে।
সব নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই বর্ধমান মেডিক্যালে থেকে যান নূপুর। প্রশ্ন উঠেছে, আর জি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, বর্তমানে সিবিআই হেফাজতে থাকা সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ হওয়াতেই কি অভীক প্রভাব খাটিয়ে নূপুরের স্থানান্তর আটকে দেয়? ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক প্রণবরঞ্জন মজুমদারের মতে, ‘‘প্রভাবশালী যোগাযোগে এ ধরনের নানা অনিয়ম হয়।’’
জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুরও দাবি, ‘‘স্বাস্থ্যক্ষেত্রে চরম দলবাজি, স্বজনপোষণ এবং প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপের এ রকম উদাহরণ আরও হয়তো আছে। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বাকি যাঁদের নাম ছিল, তাঁদের কে কোথায় যোগ দিয়েছেন, সেই তথ্য প্রকাশ্যে আনা হোক।’’ বিষয়টি না জেনে মন্তব্য করতে চাননি জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু।