ছবি: সংগৃহীত।
উত্তরবঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দুয়ারে সরকারের শিবিরগুলিতে যোগাযোগকারী মানুষের সংখ্যা। ডিসেম্বরের শুরুতেই উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির হাজিরা-তথ্য অনেক কম ছিল। এখন সেখানেই তা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। পর্যবেক্ষক শিবিরের ধারণা, গত লোকসভা ভোটের পর উত্তরবঙ্গের বদলানো রাজনৈতিক পরিস্থিতির দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই তথ্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
শিবিরে হাজিরার নিরিখে যে জেলাগুলি এত দিন পিছিয়ে ছিল, সেই জেলাগুলিই এখন চলে আসছে ক্রমতালিকার শীর্ষে। তথ্য বলছে, ২১-২৬ ডিসেম্বরের মধ্যে রাজ্যে সার্বিক ভাবে শিবিরে হাজিরা বেড়েছে তিন শতাংশের বেশি। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় হাজিরা প্রায় ১০%, কোথাও ৯%, আবার কোনও জেলায় ৮% বেড়েছে। ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আলিপুরদুয়ারে জনসংখ্যার ১৯.৮৫% মানুষ নথিবদ্ধ হন। ২৬ ডিসেম্বর তা হয় ২৯.৭৩%। দক্ষিণ দিনাজপুরে শিবিরগুলিতে যোগাযোগকারীদের সংখ্যা ওই সময়ের মধ্যে ২১.০৫% থেকে হয়েছে ৩০.৫৬%। কোচবিহারে জনসংখ্যার ২০.৩৮% মানুষ পরিষেবা চাইতে শিবিরগুলিতে গিয়েছিলেন, বৃদ্ধি প্রায় ৬%।
একই সময়ের মধ্যে উত্তরবঙ্গেরই মুর্শিদাবাদ, কালিম্পং, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর জেলায় ৫% করে বেশি মানুষ শিবিরগুলিতে যোগাযোগ করেছিলেন। জলপাইগুড়ি, মালদহে ৪%। হুগলি এবং পশ্চিম বর্ধমানে বৃদ্ধির হার ৫%, পুরুলিয়ায় ৪%। বাঁকুড়া, নদিয়া, দুই মেদিনীপুর, বীরভূম, উত্তর ২৪ পরগনার শিবিরগুলিতে ৩%। দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও হাওড়াতে ২% এবং কলকাতায় তা ১%। ঝাড়গ্রামে বেড়েছে ৮%।
৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুয়ারে সরকার
• রাজ্য জুড়ে চলা মোট শিবির ১৩,৭১৪
• শিবিরগুলিতে গিয়েছেন ১ কোটি ৪৬ লক্ষ
• আবেদনপত্রের মোট সংখ্যা ৯৩ লক্ষ ৮০ হাজার (৬৪.৮৪%)
• পরিষেবা দেওয়া হয়েছে ৫৪ লক্ষ ২৫ হাজার (৫৭.৮৫%)
• আবেদনপত্র বিবেচনাধীন ৩০ লক্ষ ৪৮ হাজার (৩২.৫%)
• আবেদনপত্র বাতিল ৯ লক্ষ ৫ হাজার (৯.৬৫%)
শীর্ষে স্বাস্থ্যসাথী
• আবেদনপত্র ৫২ লক্ষ ৯১ হাজার ৭৫৪
• আবেদনপত্র মঞ্জুর ৩৮ লক্ষ ৪৮ হাজার ৪৩৭
• বিবেচনাধীন ৭ লক্ষ ৯৪ হাজার ৩৮৭
• বাতিল ৬ লক্ষ ৪৮ হাজার ৯৩০
• স্মার্টকার্ড প্রদান ৮ লক্ষ ১১ হাজার ৯১৬
সরকারি সূত্রের খবর, দু’টি মানদণ্ডে তথ্যভাণ্ডার তৈরি করছে রাজ্য। প্রথমটি জেলাওয়াড়ি জনসংখ্যার নিরিখে এবং দ্বিতীয়টি রাজ্যের জনসংখ্যার ভিত্তিতে। প্রথম দফার কর্মসূচি চলেছিল ১ থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১৫-২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে দ্বিতীয় দফার কর্মসূচি। রাজ্য জানিয়েছিল, ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ কোটি ১২ লক্ষের বেশি মানুষ শিবিরগুলিতে যোগাযোগ করেছিলেন। ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে জনসংখ্যার ১৬.৫১% অর্থাৎ দেড় কোটির বেশি মানুষই শিবিরগুলিতে নথিবদ্ধ হয়েছিলেন। সরকারি হিসেবে গোটা রাজ্যের এখন জনসংখ্যা ৯ কোটি ১২ লক্ষ ৮৬ হাজার ৮৪৮জন (সরকারি সূত্রের দাবি, এ তথ্য ২০১১ সালের জনগণনার নিরিখে)।
জেলা প্রশাসনের একটি অংশের দাবি, দুয়ারে সরকার কর্মসূচি রাজ্যের উদ্যোগ এবং তৎপরতার উদাহরণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তাই জেলাগুলির মধ্যে ‘প্রতিযোগিতা’ শুরু হয়েছে হাজিরা নথিবদ্ধ করা নিয়ে। হাজির প্রত্যেকের নামই তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। তাই দ্বিতীয় দফার শেষে জনসংখ্যার নিরিখে এত মানুষের হাজিরার শতাংশের হার বাড়ছে। গত আট-ন’বছরে সরকারি পরিষেবা দেওয়ার যে দাবি রাজ্য করেছে, তা সকলের কাছে পৌঁছে থাকলে এত সংখ্যক মানুষকে রাতারাতি শিবিরগুলির সঙ্গে যোগাযোগ কেন করতে হচ্ছে, সেই প্রশ্নও অবশ্য উঠেছে। এই তত্ত্ব মানতে নারাজ অভিজ্ঞ আমলাদের অনেকেই। তাঁদের যুক্তি, আগে স্বাস্থ্যসাথী, কৃষকবন্ধু, জাতি শংসাপত্রের মতো বহু প্রকল্পে নাম নথিবদ্ধ করায় সীমাবদ্ধতা ছিল। এখন নাম নথিবদ্ধের পদ্ধতি বেশি সরল। এক কর্তা বলেন, “বহু মানুষ ন’বছরে কোনও না কোনও পরিষেবার আওতায় এসেছেন। যাঁরা ছিলেন না, তাঁরাও এখন সেই সুবিধা পাচ্ছেন।”