গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বিরল সমঝোতার ছবি। কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রকল্পের নামকরণ ঘিরে ‘জটিলতা’ চলছিল বেশ কয়েক বছর ধরে। জটিলতা কাটাতে অবশেষে ‘সুস্বাস্থ্য’ বিসর্জন দিল রাজ্য। আর ‘মন্দির’ ছেড়ে দিল কেন্দ্র। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের আওতায় তৈরি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির নাম কী হবে, তা নিয়ে অবশেষে একমত হতে পারল দুই সরকার। সংসদে মঙ্গলবার এ কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রান্তে গত কয়েক বছরে ‘সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ নামে অনেক ছোট ছোট স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রের ‘আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য ও সুস্থতা কেন্দ্র’ প্রকল্পের আওতায় এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির নির্মাণ। শুধু বাংলায় নয়, দেশের অন্যান্য রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলেও সেগুলি তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির জন্য কেন্দ্রের দেওয়া নাম এত দিন গ্রহণ করা হয়নি। রাজ্য নিজের মতো করে সেগুলির নাম রেখেছিল ‘সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র’। কেন্দ্রের চাপে এ বার সেই নাম বদলাতে চলেছে। রাজ্য সরকারই সে কথা চিঠি দিয়ে কেন্দ্রকে জানিয়েছে। তবে যে নামকরণ কেন্দ্র করতে চায়, হুবহু সেই নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মানছে না। রাজ্য এ বারও সেই নাম কিছুটা বদলেই নিচ্ছে। সেই বদলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক কোনও আপত্তি করছে না।
রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য প্রশ্ন তুলেছিলেন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির নামকরণের বিষয়ে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে শমীকের করা প্রশ্নের চারটি ভাগ ছিল। প্রথম ভাগেই প্রশ্ন ছিল, ‘‘ভারত সরকার কি এ বিষয়ে অবহিত যে, পশ্চিমবঙ্গে ‘আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য ও সুস্থতা কেন্দ্র’গুলির নাম বদল করে ‘সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ করা হয়েছে? যদি কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হয়ে থাকে, তা হলে এই নাম পরিবর্তনে কি কেন্দ্রের অনুমোদন রয়েছে?’’ মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তরফ থেকে রাজ্যসভায় এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়েছে। তাতে জানানো হয়েছে যে, কেন্দ্র নিজেই ওই প্রকল্পের আওতায় তৈরি ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির নাম বদলে ‘আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির’ করেছে। ২০২৩ সালের ২৫ নভেম্বর সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে চিঠি দিয়ে সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলেও সংসদে পেশ করা জবাবে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী প্রতাপরাও জাধব মঙ্গলবার জানিয়েছেন।
অর্থাৎ, প্রায় ১৬ মাস আগে কেন্দ্রীয় সরকারের চিঠি পেয়েছে মমতার সরকার। কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাজ্যের নানা প্রান্তে ওই প্রকল্পের আওতায় তৈরি কাঠামোগুলোর গায়ে ‘সুসাস্থ্য কেন্দ্র’ নামটিই লেখা রয়েছে। তা হলে কি কেন্দ্রের নির্দেশিকা বাংলার সরকার এ বারও অগ্রাহ্য করবে? কেন্দ্রের দেওয়া নাম মানতে রাজি না হলে এই প্রকল্পে টাকা আসাও কি বন্ধ হয়ে যেতে পারে? শমীককে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর দেওয়া জবাব বুঝিয়ে দিচ্ছে, তহবিল হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা নেই। কারণ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০২৫ সালের ১৮ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছে যে, গোটা রাজ্যে ওই স্বাস্থ্য ও সুস্থতা কেন্দ্রগুলির নাম বদলে ‘আয়ুষ্মান আরোগ্য কেন্দ্র’ করা হচ্ছে। সেই প্রস্তাবই মেনে নেওয়া হয়েছে।’’
রাজ্য সরকার কেন্দ্রকে নতুন নামকরণের বিষয়ে যা জানিয়েছে, তার রূপায়ণ কবে থেকে শুরু হবে স্পষ্ট নয়। কিন্তু সরকারি স্বাস্থ্যবিমার ক্ষেত্রে যে ‘আয়ুষ্মান’ নামকে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে দেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা, স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ক্ষেত্রে তিনি সেই নাম আর ঠেকিয়ে রাখলেন না। শুধু কেন্দ্রের দেওয়া নাম থেকে ‘মন্দির’ শব্দটি ছেঁটে ফেললেন। তার বদলে আনালেন ‘কেন্দ্র’ শব্দটি। পশ্চিমবঙ্গে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির নাম হতে চলেছে ‘আয়ুষ্মান আরোগ্য কেন্দ্র’। ‘আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির’ নয়।
বিজেপির রাজনৈতিক ঘরানায় সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নামে ‘মন্দির’ শব্দ খাপ খেয়ে যায়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মমতার যে রাজনীতি, সেই ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ঘরানায় ওই শব্দ সমস্যা তৈরি করতে পারে। অনেকের ধারণা, সেই কারণেই ‘মন্দির’ বদলে ‘কেন্দ্র’ লেখা হবে বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রককে রাজ্য সরকার জানিয়েছে। তবে কেন্দ্র তাতে আর আপত্তি করেনি। কারণ, দীর্ঘ টানাপড়েনের পর বাংলায় কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রকল্পের গায়ে ‘আয়ুষ্মান’ শব্দটি লেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে।