— প্রতীকী চিত্র।
‘প্রত্যাবর্তনে স্বাগত, ক্রু-৯। পৃথিবী আপনাদের অভাব বোধ করছিল।’ সুনীতা উইলিয়ামসরা পৃথিবীতে ফেরার পরে তাঁদের উদ্দেশে আজ এক্স হ্যান্ডলে এই কথা লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গত ১ মার্চ মোদী অবশ্য সুনীতাকে চিঠিও পাঠিয়েছিলেন। ওই চিঠি লেখা নিয়ে মোদীকে গত কাল থেকে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে কংগ্রেস।
একাধিক সংবাদ প্রতিবেদনকে হাতিয়ার করে কংগ্রেসের অভিযোগ, ২০০৭ ও ২০১৩ সালে সুনীতা গুজরাতে নিজের পৈতৃক বাড়িতে যখন এসেছিলেন, তখন তাঁকে খুব একটা পাত্তা দেননি ওই রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মোদী। কারণ, সুনীতার তুতো ভাই গুজরাতের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হরেন পাণ্ড্য, যিনি ২০০২-এর দাঙ্গায় মোদীর ভূমিকা নিয়ে মুখ খোলার পরে খুন হন। হরেনের কথা উল্লেখ করে গত কাল কেরল কংগ্রেস বলেছে, মোদীর এ বারের চিঠিটিকে সম্ভবত আবর্জনায় ফেলে দেবেন সুনীতা। তবে কংগ্রেস এই দাবি করলেও ইন্টারনেটে ২০০৭ সালে গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে মোদীর সুনীতাকে সংবর্ধনা দেওয়ার ভিডিয়ো রয়েছে।
কেরল কংগ্রেসের পোস্ট করা সংবাদ প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছিল প্রথম মহাকাশ অভিযান সেরে সুনীতা পৃথিবীতে ফেরার ঠিক আগে। তত দিনে মহিলা মহাকাশচারী হিসেবে মহাকাশে সবচেয়ে বেশি দিন কাটানোর রেকর্ড গড়ে ফেলেছেন সুনীতা। কিন্তু গুজরাতের মাটিতে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা মোদী বা তাঁর রাজ্য সরকারের নেই বলেই জানিয়েছিলেন বিজেপির তৎকালীন মুখপাত্র বিজয় রূপাণী। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুনীতার পারিবারিক পরিচয়ই হয়তো এই শৈত্যের কারণ। সংবাদমাধ্যমের একাংশ লিখেছিল যে, হরেন পাণ্ড্য দাবি করেছিলেন, গোধরায় ট্রেনে আগুনের পরে গুজরাতে দাঙ্গা শুরু হলে মোদী তাঁর বাসভবনে ডাকা এক বৈঠকে আমলা ও পুলিশকর্তাদের নিষ্ক্রিয় থাকতে বলেছিলেন। ২০০৩ সালে আততায়ীর গুলিতে খুন হয়ে যান হরেন। প্রতিবেদনটি বলছে, হরেনের মৃত্যুর জন্য মোদীকেই দায়ী করেছিলেন হরেনের বাবা বিঠ্ঠলভাই পাণ্ড্য।
সেই প্রসঙ্গ উস্কে দিয়েই গত কাল কেরল কংগ্রেসের তরফে এক্স হ্যান্ডলে লেখা হয়, ‘মোদীর লেখা চিঠিটিকে সম্ভবত আবর্জনায় ফেলে দেবেন সুনীতা উইলিয়ামস। হরেন পাণ্ড্য মোদীকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং গুজরাত দাঙ্গায় মোদীর ভূমিকা নিয়ে বিচারপতি ভি আর কৃষ্ণআইয়ারের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এর পরেই প্রাতর্ভ্রমণের সময়ে তিনি খুন হয়ে যান। পর পর আরও অনেকগুলি খুন হয়েছিল, যে পর্ব শেষ হয় বিচারক বি এইচ লোয়ার মৃত্যুতে।’ এর পরে আজ এআইসিসি নেতা পবন খেরা কেরল কংগ্রেসের পোস্ট করা প্রতিবেদনটির পাশাপাশি সুনীতার ২০১৩ সালের গুজরাত সফর নিয়ে আরও একটি প্রতিবেদন পোস্ট করেন এক্স হ্যান্ডলে। সেটিতে লেখা হয়েছে, সে বার মোদীর সঙ্গে সাক্ষাতের কোনও কর্মসূচি রাখেননি সুনীতা। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর চেষ্টা করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। বরং হরেন পাণ্ড্যের স্ত্রী জাগৃতির সঙ্গেই তিনি সারাক্ষণ থাকছিলেন সুনীতা। গুজরাত সরকারও সুনীতার জন্য কোনও বিশেষ আয়োজন করেনি।
পবন খেরা লিখেছেন, ‘আজ মোদী যখন প্রধানমন্ত্রী, তখন তাঁর রূপ যেন বদলে গিয়েছে। সুনীতা সেই নজির গড়েছেন, যার জন্য প্রত্যেক ভারতবাসী গর্বিত। আজ তিনি এত বড় ব্যক্তিত্ব যে, মোদী চান বা না চান, তাঁকে সুনীতাকে স্বাগত জানিয়ে চিঠি লিখতেই হচ্ছে।’