নতুন বিধানসভার প্রথম বাজেট অধিবেশনে ইতি পড়তে চলেছে সাত দিনের মাথায়। অর্থ বিল এবং অ্যাপ্রোপ্রিয়েশন বিল পাশ করানোর আগে আজ, শুক্রবার দু’টি দফতরের বাজেট বরাদ্দ নিয়ে বিধানসভায় বিতর্ক হওয়ার কথা। মোট ৪৮টি দফতরের মধ্যে বাকি ৪৬টি দফতরের বাজেট চলে যাবে গিলোটিনে। অর্থাৎ আলোচনা ছাড়াই পাশ হবে ওই দফতরগুলির ব্যয়-বরাদ্দের প্রস্তাব।
বিরোধীশূন্য অবস্থায় বিধানসভার কার্য উপদেষ্টা (বি এ) কমিটির বৈঠকে বৃহস্পতিবার যে সূচি চূড়ান্ত হয়েছে, সেই অনুযায়ী আজই চলতি অধিবেশনের শেষ দিন। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন, শশী পাঁজার নারী ও শিশু উন্নয়ন এবং সমাজকল্যাণ— এই দু’টি দফতরের বাজেট নিয়ে এক ঘণ্টা করে আলোচনার সময় রাখা হয়েছে। বাকি দফতরগুলি গিলোটিনে তোলার জন্য সময় বরাদ্দ হয়েছে আরও এক ঘণ্টা। গত কয়েক বছর ধরেই হাতে গোনা ও গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি দফতর বাদ দিয়ে একগুচ্ছ দফতরের ব্যয়-বরাদ্দের প্রস্তাব নিয়ে আলাদা করে আলোচনা হয় না বিধানসভায়। যা নিয়ে অতীতে সরব ছিল বিরোধী বাম ও কংগ্রেস। তবে এ বার গিলোটিনে যাওয়া দফতরের সংখ্যা বাড়তে চলেছে। বর্তমান বিরোধী বিজেপির অভিযোগ, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংসদীয় রীতি-নীতি না মেনে নিজেদের ইচ্ছামতো চলতে চাইছে রাজ্য সরকার। অন্য দিকে সরকার পক্ষের দাবি, মূল বাজেট নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। সব দফতরের বাজেট নিয়ে কোনও সময়েই বিশদ আলোচনা হয় না, একাধিক দফতরের ব্যয়-বরাদ্দ একসঙ্গে পাশ হয়ে যায়।
অধিবেশনের বিরতিতে বি এ কমিটির বৈঠকে এ দিন যাননি বিরোধী দল বিজেপির বিধায়কেরা। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘মুলতুবি প্রস্তাব নিয়ে সভায় আলোচনা করতে দেননি স্পিকার। বিরোধীদের কথা বলার সুযোগ কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা ২৩৫-এর মতো এখন ২১৩-র দম্ভে চলছে সরকার! যারা সব কথায় ক্ষমতা দেখাতে চায়, তারাই আলোচনার সূচি ঠিক করে নিচ্ছে। সেই জন্যই বৈঠকে আমরা যাইনি।’’ পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পাল্টা বলেছেন, ‘‘আলোচনায় ওঁদের কোনও উৎসাহ নেই। কাগজে বিভিন্ন জিনিস লিখে নিয়ে এসে বাইরে হইচই করতেই ওঁরা পছন্দ করেন। পরিষদীয় রীতি-নীতি জানেন না, জানতে চানও না!’’
এত বেশিসংখ্যক দফতরের বাজেট গিলোটিনে যাওয়া বেনজির কি না, তা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তার প্রেক্ষিতে পার্থবাবুর মন্তব্য, ‘‘এ বার বাজেট-বিতর্কে বিরোধী দলনেতা অংশগ্রহণ করেননি। সেটাও তো ঐতিহাসিক!’’ যদিও পরিষদীয় বিষয়ে অভিজ্ঞ নেতারা জানাচ্ছেন, অতীতে বিরোধী দলনেতা হিসেবে কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান বা সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্রও সব সময়ে বাজেট-বিতর্কে বক্তা থাকতেন না। দলে অর্থনীতির বিষয়ে যাঁরা চর্চা করেন, তাঁদেরই মুখ্য বক্তা হিসেবে রাখা হত। এ বার সে ভাবেই বিজেপি সামনে রেখেছিল তাদের অর্থনীতিবিদ-বিধায়ক এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অশোক লাহিড়ীকে।