হিমন্তের সঙ্গে বৈঠকে জীবন-পুত্র দেবরাজ। নিজস্ব চিত্র।
নতুন বছরে কেএলও নিয়ে আলোচনায় নতুন ইঙ্গিত। রবিবার সকালে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার সঙ্গে বৈঠক করেন কেএলও প্রধান জীবন সিংহের ধর্মপুত্র দেবরাজ সিংহ। দেবরাজ জানান, এই সংক্রান্ত আলোচনার বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দিক থেকেও ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলেছে। যদিও রাজ্য সরকারের দিক থেকে এ নিয়ে এখনও কিছু বলা হয়নি। তবে, মধ্যস্থতাকারী হিসাবে যে প্রাক্তন কেএলও জঙ্গিদের এতদিন কাজে লাগানো হচ্ছিল, তাঁদের একাংশের মত, জীবন সিংহকে এতদিন ভুল পথে চালিত করা হচ্ছিল।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মাকে শান্তি আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ভার দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কিন্তু সেই আলোচনার প্রক্রিয়ায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ। দেবরাজের কথা অনুযায়ী, জীবন সিংহের অভিযোগ ছিল, অতীতে আত্মসমর্পণ করা টম অধিকারী, মালখান সিংহদের মতো নেতাদের জোর করে সমান্তরাল শান্তি আলোচনায় বাধ্য করছে তৃণমূল সরকার। পৃথক রাজ্যের বদলে স্বশাসিত পরিষদের দাবিতে রাজি হওয়ার জন্য তাঁদের চাপ দেওয়া হচ্ছে। যা কোনও ভাবেই মানা হবে না। ছেলে দেবরাজের মাধ্যমে জীবন স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, তাঁরা শুধু কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। এই পরিস্থিতিতে দিশাহীন ও জটিল হয়ে পড়েছিল শান্তি আলোচনা।
টম অবশ্য আগেই দেবরাজের অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছিলেন। আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা প্রাক্তন আর এক কেএলও জঙ্গির মতে, “জীবন এ রাজ্যের বাসিন্দা। তাই পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে বাদ দিয়ে শান্তি আলোচনা ফলপ্রসূ হওয়ার কোনও সম্ভবনাই নেই। আমার বিশ্বাস জীবনও সেটা জানেন। কিন্তু মনে হচ্ছে তাঁকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। ভুল পথে চালিত করা হচ্ছে।” এরই মধ্যে দেবরাজ এ দিন দাবি করেন, নতুন বছরের শুরুতেই শান্তি আলোচনায় অনেকটা অগ্রগতি হল। প্রথম বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার আলোচনায় বসতে তৈরি হয়েছে। হিমন্ত দেবরাজকে জানিয়েছেন, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলবেন। সব ঠিক থাকলে এই মাসেই বহু প্রতীক্ষিত শান্তি আলোচনা শুরু হবে। দেবরাজের দাবি, আলোচনা শুরু হলে শান্তি চুক্তি সারতেও বেশি দেরি হওয়ার কথা নয়।
কেএলও যে পৃথক কোচ রাজ্যের দাবি তুলেছে, তার মধ্যে নমনি অসমের একটি অংশ ও উত্তরবঙ্গের ৮টি জেলা রয়েছে। তাই পশ্চিমবঙ্গকে বাদ দিয়ে আলোচনা যে কোনও ভাবেই সম্ভব নয়, তা কেএলও-ও জানত। এ দিকে জীবন সিংহকে হাতে রেখে উত্তরবঙ্গ ও নমনি অসমে কোচ-রাজবংশীদের হাতে রাখার পন্থা নিয়েছিল বিজেপি।
অসমে কোচ-রাজবংশীরা দীর্ঘদিন ধরেই তফসিল উপজাতির মর্যাদা দাবি করছেন। হিমন্ত জানান, সেই বিষয়টিও অনেকটাই অগ্রগতি হয়েছে।