শিলিগুড়ি পুরসভার সেমিনারে (বাঁ দিক থেকে) অসীম দাশগুপ্ত, মহম্মদ সেলিম, অশোক ভট্টাচার্য ও জয়রাম রমেশ। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
শাসক দলের বাধায় বিরোধী দলের দখলে থাকা পুরসভা-পঞ্চায়েতের কাজ থমকে যাওয়ার অভিযোগ নতুন কিছু নয়। সে অভিযোগকে সামনে রেখেই এ রাজ্যে বিরোধী দল ও বিশিষ্ট জনদের নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে আলোচনাসভায় তৃণমূলকে বিঁধলেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ-সহ সকলে। তবে উদ্যোক্তা তথা শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র অশোক ভট্টাচার্যকেও ছাড় দিলেন না অরুণাভ ঘোষ, সুখবিলাস বর্মার মতো প্রবীণ নেতারা। রবিবার শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়িতে এক অভিজাত হোটেলে ওই আলোচনাসভা হয়।
তবে আমন্ত্রিত হয়েও তৃণমূলের কোনও নেতা এই সভায় আসেননি। ঘটনাচক্রে কংগ্রেসের কোনও স্থানীয় কাউন্সিলরও যাননি। এমনকি, বামেদের সাহায্যে যিনি শিলিগুড়ির বরো চেয়ারম্যান হয়েছেন, সেই সুজয় ঘটককেও আলোচনাসভায় দেখা যায়নি। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘সমস্যা ছিল বলে যেতে পারিনি।’’
অশোকবাবুর আয়োজিত সেমিনারে অরুণাভবাবু প্রশ্ন তোলেন, অশোকবাবু দীর্ঘদিন পুরমন্ত্রী ছিলেন, সে সময় কংগ্রেসের দখলে থাকা পুরসভা বারংবার ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। তখন কিন্তু অশোকবাবুকে জাতীয় পর্যায়ে দূরের কথা, স্থানীয় স্তরেও আলোচনা সভা করতে দেখা যায়নি। এর পর হাসতে হাসতে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমার তো মনে হয়, অশোকবাবু এখন মন্ত্রী থাকলে এ ধরনের সেমিনার কখনওই করতেন না।’’ অশোকবাবুর জবাব, ‘‘বিষয়টি তা নয়। আমরা ক্ষমতায় থাকার সময়েই ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের চেষ্টা করেছি। পুরসভা পঞ্চায়েতগুলিকে ক্ষমতা দিতে চেষ্টা করেছি।’’ তাঁর বক্তব্য, তা ছাড়া বহরমপুর পুরসভার বিষয়টি তিনি মন্ত্রী হওয়ার অনেক আগের ঘটনা। তিনি বলেন, ‘‘অরুণাভবাবু তাঁর মতো করে বলেছেন। সব তিনি পক্ষে বলবেন এমন কথা নেই। তবে সমস্ত দ্বন্দ্বের মধ্যে থেকেই স্বায়ত্তশাসন, গণতন্ত্র, সংবিধান মেনে চলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত উঠে আসুক।’’
বামেরা বোর্ড গঠন করার পর থেকেই শিলিগুড়ি পুরসভায় রাজ্য সরকার উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ অশোকবাবুর। তবে পুরসভা এবং পঞ্চায়েতগুলিকে প্রাপ্য বরাদ্দ না দেওয়ার ধারা বাম আমল থেকেই শুরু বলে এ দিন সেমিনারের অপর বক্তা তথা জলপাইগুড়ির বিধায়ক সুখবিলাস বর্মাও দাবি করেছেন। জয়রাম রমেশ অবশ্য তৃণমূলকেই আক্রমণ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এই রাজ্যে সন্ত্রাসের যে পরিবেশ চলছে, তা কোথাও নেই। মানুষ যে পরিবর্তন চেয়েছিল তা মেলেনি।’’ অরুণাভবাবুও বলেন, ‘‘অশোকবাবু ভাল কাজেই উদ্যোগী হয়েছেন। তবে এই সরকার না বদলালে স্বায়ত্তশাসন, গণতন্ত্র, সংবিধান সংশোধন কিছুই কার্যকর হবে না।’’ আলোচনাসভায় ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত, সাংসদ মহম্মদ সেলিম, কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও।
সুখবিলাসবাবু বলেন, ‘‘রাজ্যের অর্থ কমিশন থেকে পঞ্চায়েতগুলি কত টাকা পাবে তা বিস্তারিত ভাবে ঠিক হয়েছিল। বাম জমানায় শেষ দু’বছর পঞ্চায়েতগুলি সেই টাকা পায়নি। বর্তমান সরকারও এখনও পর্যন্ত অর্ধেক টাকা দেয়নি। আগেও স্টেট প্ল্যানিং কমিটি বা জেলাস্তরের পরিকল্পনা কমিটির বৈঠক হত না, এখনও হয় না।’’
কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি সমরেশবাবু রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতির সমালোচনা করে বলেন, ‘‘এ রাজ্যে মানবাধিকার কমিশন শেষ করে দেওয়া হয়েছে। তথ্য জানার অধিকার আইন মানা হচ্ছে না। এখন ‘সিএম টু ডিএম’। মুখ্যমন্ত্রী বৈঠক করে জেলাশাসক, বিডিও’দের দিয়ে চালাচ্ছেন। পুরসভা, পঞ্চায়েতকে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে দেওয়া হচ্ছে না।’’