ভয় নেই মেয়েদের, ব্যাগে আছে ‘অশনি’ পিস্তল

‘অশনি মার্ক টু’। ০.৩২ বোরের সেমি-অটোম্যাটিক এই পিস্তল চালাতে প্রায় কোনও পরিশ্রমই নেই। বিনা বাক্যব্যয়ে ট্রিগারটা টানলেই হল। গুলি লাগলে নিশ্চিত মৃত্যু। মূলত মহিলাদের কথা মাথায় রেখেই এই আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করেছে কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি (জিএসএফ)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:৩৩
Share:

০.৩২ বোরের ‘অশনি মার্ক টু’ পিস্তল। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়।

আকারে ছোট, কিন্তু ভয়ঙ্কর। একটা ভ্যানিটি ব্যাগেও অনায়াসে লুকিয়ে রাখা যেতে পারে এই মারণাস্ত্র।

Advertisement

‘অশনি মার্ক টু’। ০.৩২ বোরের সেমি-অটোম্যাটিক এই পিস্তল চালাতে প্রায় কোনও পরিশ্রমই নেই। বিনা বাক্যব্যয়ে ট্রিগারটা টানলেই হল। গুলি লাগলে নিশ্চিত মৃত্যু। মূলত মহিলাদের কথা মাথায় রেখেই এই আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করেছে কাশীপুর গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরি (জিএসএফ)। শনিবার নতুন পিস্তলের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে জিএসএফের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার রাজীব চক্রবর্তী বললেন, ‘‘মহিলাদের আত্মরক্ষা এবং ক্ষমতায়নের কথা মাথায় রেখেই এই নতুন পিস্তলের উদ্ভাবন। চালানোও সহজ। বিদেশি পিস্তলের সমতুল এই আগ্নেয়াস্ত্রের দাম তুলনামূলক কম।’’

কারখানা সূত্রের খবর, ১৯৯৭ সালে প্রথম ‘অশনি’ পিস্তল বাজারে আনে তারা। তার পর থেকে এ যাবৎ প্রায় দেড় লক্ষ পিস্তল বিক্রি হয়েছে। দীর্ঘ দু’দশক পরে এল অশনি পিস্তলের নতুন সংস্করণ। রাজীববাবুর কথায়, ‘‘অশনির চেহারা, প্রযুক্তিতে অনেক বদল হয়েছে। বিদেশি বিভিন্ন পিস্তলের প্রযুক্তি খতিয়ে দেখে কারখানার ইঞ্জিনিয়ারেরাই এই পিস্তল তৈরি করেছেন।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: প্রার্থী কি কম পড়ছে? সূর্যকান্তের কথায় শুরু জল্পনা

কাশীপুরের কর্তাদের একাংশের দাবি, মোদী সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পের কথা মাথায় রেখেই দেশীয় পিস্তল তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছিল। তার আগে বাজারে এর চাহিদাও যাচাই করা হয়েছে। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা আলাদা মডেল তৈরি হলেও দু’টোই মহিলাদের পক্ষে ব্যবহার করা সুবিধাজনক। কর-সহ এই পিস্তলের দাম পড়বে প্রায় ৯২ হাজার টাকা। প্রায় ১৮ মিটার (প্রায় ৬০ ফুট) দূরে থাকা নিশানাকে ঘায়েল করা যাবে। চিরাচরিত পিস্তলের ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে এই পিস্তলে রয়েছে হ্যামারও। প্রত্যেক ম্যাগাজিনে থাকবে ৮টি করে বুলেট। পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনীর একাংশেরও পছন্দ হয়েছে এই পিস্তল। তবে বাহিনীতে এই পিস্তল দেওয়া হবে কি না, তা এখনও চূড়ান্ত নয়।

অনেকেই অবশ্য বলছেন, উত্তর ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স তুলনামূলক ভাবে বেশি দেওয়া হয়। কিন্তু এ রাজ্যে সার্বিক ভাবে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি রয়েছে। ফলে বাঙালি মহিলাদের হাতে এই পিস্তল কত সহজে পৌঁছবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। যেমন প্রশ্ন রয়েছে, মহিলাদের ব্যাগে বন্দুক থাকার মানে কি শহরের আইনরক্ষকেরা যথাযথ ভাবে তাঁদের নিরাপত্তা দিতে পারছেন না? রাজীববাবু অবশ্য বলছেন, বহু উন্নত দেশেও তো ঘরে ঘরে অস্ত্র রাখা হয়।

এ দেশে প্রথাগত ভাবে এবং সরকারি আনুকূল্যে বন্দুক তৈরি প্রথম শুরু হয়েছিল কাশীপুরের গান অ্যান্ড শেল ফ্যাক্টরিতেই (তৎকালীন নাম ছিল গান ক্যারেজ এজেন্সি)। পরবর্তী কালে অবশ্য নানা বদল ঘটেছে এই ঐতিহাসিক অস্ত্র কারখানায়। এ বার মহিলাদের পিস্তল এনে ফের বদল আনল তারা। ‘‘অশনির এই নতুন রূপের হাত ধরেই নতুন পথে এগোতে চাইছি’’— বলছেন এক শীর্ষ কর্তা। কারখানা সূত্রে জানা যাচ্ছে, বাজারের চাহিদা মাথায় রেখে হাজার পাঁচেক পিস্তল তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও উৎপাদন বাড়ানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement