জিতেন্দ্র তিওয়ারি এবং ফিরহাদ হাকিম। ফাইল চিত্র।
দ্বন্দ্ব মেটাতে মঙ্গলবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের দফতরে আসানসোল পুরসভার প্রধান প্রশাসক জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে বৈঠকে ডেকেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। ওই বৈঠকে থাকবেন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। থাকার কথা ভৌটকৌশলী প্রশান্ত কিশোরেরও।
কিন্তু তার আগের দিন, সোমবার ফিরহাদকে লক্ষ্য করে তোপ দাগলেন জিতেন্দ্র। তাঁর কথায়, ‘‘উনি আমার নামে যা বলছেন, তা বলতে পারেন না। লোকসভা ভোটের পর সকলে ঘরে ঢুকে গিয়েছিলেন! বিজেপি যখন একের পর এক পার্টি অফিস দখল করছিল আসানসোলে, তখন তো ববি (ফিরহাদ) হাকিমকে খুঁজে পাওয়া যায়নি! তখন এই জিতেন্দ্র তেওয়ারিই তো ছিল!’’ শান্তি বৈঠকের আগে জিতেন্দ্রর এই তোপধ্বনি কতটা শান্তির বাতাবরণ রাখে, সেটাই এখন দেখার।
এর আগে সোমবার জিতেন্দ্রর ফিরহাদকে লেখা একটি চিঠি প্রকাশ্যে আসে। যেখানে তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, ‘রাজনৈতিক কারণে’ কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওই টাকায় আসানসোলের অনেক উন্নতি হতে পারত। সেই চিঠির বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে ফিরহাদ বলেছিলেন, ‘‘ওই ভাবে চিঠি লিখে জিতেন্দ্র অন্যায় করেছেন। উনি আমার সঙ্গে আলোচনা করতে পারতেন।’’ সূত্রের খবর, ফিরহাদ পরে ফোনও করেন জিতেন্দ্রকে। তখনই ঠিক হয়, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় ক্যামাক স্ট্রিটের দু’পক্ষের বৈঠক হবে। প্রসঙ্গত, ওই অফিসে অভিষেকও বসেন। ফলে, তিনি বৈঠকে থাকবেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, অভিষেক বৈঠকে থাকলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। প্রশান্ত বৈঠকে থাকবেন বলেই এখনও পর্যন্ত খবর।
কী বললেন জিতেন্দ্র
আরও পড়ুন: কেন্দ্রের টাকা কেন ফেরত, ফিরহাদকে চিঠি আসানসোলের তৃণমূল ‘মেয়রের’
তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, জিতেন্দ্রর মান ভাঙাতেই তাঁকে বৈঠকে ডাকা হয়েছে। কারণ, জিতেন্দ্র ওই চিঠি নিয়ে শোরগোল পড়েছে। রাজ্যঠ বিজেপি-র সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালব্য টুইট করে বলেছেন, তৃণমূলের লোকই এখন স্বীকার করে নিচ্ছেন যে, কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা রাজনৈতিক কারণে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বস্তুত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে বহু নেতা এই অভিযোগ বারবার করেছেন। জিতেন্দ্রর চিঠিতে সেই অভিযোগ ‘বৈধতা’ পেল বলে প্রশাসনের একাংশ মনে করছে।
চিঠি প্রকাশ্যে আসায় তৃণমূল খানিক বিড়ম্বনায়। রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এই চিঠি কী করে বাইরে বেরিয়ে গেল জানি না। আমরা অনেক সময়েই টাকাপয়সা চেয়ে সরকারি চিঠি লিখে থাকি। কিন্তু তা প্রকাশ্যে আনা উচিত নয়।’’ ফিরহাদের বক্তব্য, বিজেপি ‘চরবৃত্তি’ শুরু করেছে। সোমবার আসানসোলের দু’টি কলেজের পরিচালন বোর্ড থেকে ইস্তফাও দিয়েছেন জিতেন্দ্র। তার পরেই তাঁকে ঘিরে তীব্র জল্পনা রাজনৈতিক মহলে। একই সঙ্গে বেজায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসক দল তৃণমূল। জিতেন্দ্রর চিঠি দেওয়া ভাল ভাবে নেননি ফিরহাদও। তিনি বলেন, “জিতেন কোনওদিন এ বিষয়ে বলেনি। কেন চিঠি দিয়েছে জানি না। এটা তো রাজ্যের পলিসির ব্যাপার। ও তো বিধায়ক। আমরা কোনটা পারব, কোনটা পারব না ও জানে। এটা অত্যন্ত খারাপ। কেন ও চিঠি দেবে!’’ তার পরেই ফিরহাদ বলেন, ‘‘যদি কারও যাওয়ার থাকে। সে চলে যাবে। অর্থহীন এসব। বিজেপির লোক ভুল বোঝাচ্ছে। কথা বললেই মিটে যাবে আমার মনে হয়।”
অন্যদিকে, জিতেন্দ্র বক্তব্য, “এটা দলের কোনও ব্যাপার নয়। আমি প্রশাসক। উনি মন্ত্রী। আমি গোপন (কনফিডেনশিয়াল) চিঠি দিয়েছি। আসানসোলের মানুষের অসুবিধার কথা জানানো কি অন্যায়? কেন উনি এমন করছেন, বুঝতে পারছি না।”
তিনি বৈঠকে যোগ দিতে যাবেন জানিয়ে জিতেন্দ্র বলেন, “আমি যাব। অসুবিধার কথা বলব না। মন্ত্রী হিসাবে বলেছিলাম ওঁকে (ফিরহাদকে)। যদি বলেন, দলকে বলতে হবে, বলব। আমি তো পুরো বিষয়টাই গোপনে জানিয়েছি। কেন প্রেসকে জানানো হল, সেটাই তো বুঝতে পারছি না। দিদির স্বপ্ন ছিল, আসানসোলকে কলকাতার মতো সুন্দর করতে হবে। ওই চিঠি নিয়ে এত আলোচনা কেন? আমার কী অপরাধ? বৈঠকে যা বলার সব বলব।” জিতেন্দ্রর আরও আশা, “দল নিশ্চয়ই আমার বক্তব্য শুনবে। কেন বিজেপি নিয়ে বলা হচ্ছে বুঝতে পারছি না! আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটে যাওয়ামে উচিত। এটা তো আমার ব্যক্তিগত সমস্যা নয়। আমি সাধারণ ঘর থেকে এসেছি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে মানসম্মান দিয়েছেন। এটা (আসনসোলের উন্নয়ন) করা গেলে দলেরই ভাল হবে। নইলে দলের ক্ষতি হবে। আমি সঠিক তথ্য তুলে ধরেছি। তাই আমার মনে আর কোনও বোঝা থাকবে না। এর পর যদি খারাপ হয় ওরা বুঝবে।”
অভিযোগ, ফিরহাদ বলেছিলেন, জিতেন্দ্র বিজেপি-র সঙ্গে কথধা বলেছেন। সেই বিষয়েও ফিরহাদকে একহাত নিয়েছেন আসানসোলের প্রধান প্রশাসক। তাঁর কথায়, “আমি যদি ফিরহাদকে বলি, উনি পাকিস্তানের ইমরান খানের পার্টির সঙ্গে কথা বলে এ সব বলছেন, তা হলে কি ওঁর ভাল লাগবে?’’ তার পরেই জিতেন্দ্র বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের পর বিজেপি যখন আসানসোলে একের পর এক পার্টি অফিস দখল করছিল, তখন তো আমিই ছিলাম! তখন কোথায় ছিলেন ফিরহাদ হাকিম? এ সব বলা ঠিক হচ্ছে না।” আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র নির্বাচিত বোর্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর এখন প্রধান পুর প্রশাসক। কেন্দ্রের স্মার্ট সিটি প্রকল্পের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল পশ্চিম বর্ধমানের শিল্পশহর আসানসোল। স্মার্ট সিটির তালিকায় নথিভুক্ত হলে সেই শহরের উন্নয়নে ২০০০ কোটি টাকা দেয় কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন মন্ত্রক। পাশাপাশি, কেন্দ্রের কঠিন বর্জ্য নিষ্কাশন প্রকল্পে ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। সেটাও ‘রাজনৈতিক কারণে’ নেওয়া হয়নি বলে জিতেন্দ্রর অভিযোগ।