CPM

CPM: সম্মেলন গড়াতেই প্রশ্ন সিপিএমে বয়স-নীতি ঘিরে

কলকাতা ও সংলগ্ন দুই ২৪ পরগনার কিছু এলাকা বাদ দিলে সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্মেলন সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:১৮
Share:

ফাইল ছবি

কংগ্রেসের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্ক কেমন হবে, সেই প্রশ্নে বিতর্ক আছেই। সাংগঠনিক স্তরে বয়স-নীতি যে ভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে, তা নিয়েও এ বার প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সিপিএমের সম্মেলন-পর্বে।

Advertisement

কলকাতা ও সংলগ্ন দুই ২৪ পরগনার কিছু এলাকা বাদ দিলে সিপিএমের এরিয়া কমিটির সম্মেলন সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এখন শুরু হয়েছে জেলা সম্মেলনের পর্ব। দক্ষিণ ও উত্তর দিনাজপুর, দার্জিলিং, পুরুলিয়া এবং বীরভূম জেলায় সম্মেলন সম্পন্ন। এর মধ্যে উত্তর দিনাজপুর, দার্জিলিং ও বীরভূমে জেলা সম্পাদক পরিবর্তন হয়েছে। তবে বিতর্ক জেলা সম্পাদক পদ নিয়ে নয়।

নতুন কমিটিতে গড়ে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫% পরিবর্তন হচ্ছে। রাজনীতিতে এবং বিশেষত, বামপন্থী দলে এ ভাবে বয়সের নীতি ফলানো যায় কি না, সম্মেলনে সেই প্রশ্ন তুলছেন প্রতিনিধিদের একাংশ।

Advertisement

উত্তর দিনাজপুরে অপূর্ব পালের জায়গায় নতুন জেলা সম্পাদক হয়েছেন আনোয়ারুল হক। বীরভূমে জেলা সম্পাদকের মৃত্যুতে পরিবর্তন অনিবার্যই ছিল। দার্জিলিঙে জীবেশ সরকার অব্যাহতি নেওয়ায় নতুন জেলা সম্পাদক এ বার সমন পাঠক। মুর্শিদাবাদ, হাওড়া-সহ আরও বেশ কিছু জেলায় সম্পাদক বদল আসন্ন বলেই সিপিএম সূত্রের খবর। এখনও পর্যন্ত সম্মেলন যত দূর গড়িয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নেতাদের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে দার্জিলিং জেলা কমিটিতেই। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং শিলিগুড়ির প্রাক্তন বিধায়ক ও মেয়র অশোক ভট্টাচার্য জেলা কমিটি থেকে সরে গিয়েছেন, জীবেশকে রাখা হয়েছে আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে। শারীরিক ভাবে সক্ষম থেকেও কমিটি থেকে সরে যেতে হওয়ার ‘বেদনা’ গোপন না রেখে অশোকবাবু বলেও ফেলেছেন, ‘‘বিরোধীদের চোখে চোখ রেখে এত দিন লড়াই করেছি। বয়স কোনও বাধা হয়নি। তবে দলের সিদ্ধান্ত তো মানতেই হবে!’’ শিলিগুড়ির পুরভোটেও এ বার আর প্রার্থী না হয়ে ‘নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন’ হয়ে থাকার কথা তাঁর!

সিপিএম এ বার রাজ্য, জেলা ও এরিয়া কমিটির সদস্যদের জন্য সর্বোচ্চ বয়সের সীমা যথাক্রমে ৭২, ৭০ ও ৬৫ বছরে বেঁধে দিয়েছে। কিছু এরিয়া কমিটি এই সূত্র না মেনেই নতুন কমিটি তৈরি করায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে ফের নির্দেশিকা জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, দলের নীতি মেনে চলতেই হবে। কিন্তু সম্মেলনে প্রতিনিধিদের একাংশের বক্তব্য, টানা অনেক বছর ধরে দলের ভোটের বাক্সে খরা চলছে। সদ্য বিধানসভা নির্বাচনে অন্তত ৭৫% প্রার্থী ছিলেন তরুণ। তাতেও কি ভোটের ফলে বিশেষ কোনও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে? বরং, হারের পরে লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন পুরনো নেতাদের অনেকেই। শিলিগুড়িতে অশোকবাবুও তার উদাহরণ। এরিয়া কমিটির এক নেতা যেমন বলছেন, ‘‘আগে প্রমোদ দাশগুপ্ত, জ্যোতি বসু, হরকিষেণ সিংহ সুরজিতেরা যা করে গিয়েছেন, সব কি ভুল ছিল? এখন এমন অদ্ভুত নিয়ম দরকার হচ্ছে কেন?’’

দলের মধ্যে ‘ক্ষোভ ও বেদনা’র কথা মানলেও সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব অবশ্য পিছনে হাঁটতে নারাজ। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘কলকাতা প্লেনামে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে নতুন মুখ বেশি করে আনার সূত্র ধার্য করা হয়েছিল। তার পরে ৬ বছর কেটে গেলেও স্বেচ্ছায় অনেকেই জায়গা ছাড়েননি। তাই এখন কঠোর ভাবে নীতি মানতে হচ্ছে।’’

পরবর্তী স্তরের নেতৃত্বকে এগিয়ে দেওয়ার বার্তা দিতেই তিন জেলায় তিন পলিটবুরো সদস্য বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র ও মহম্মদ সেলিমের উপস্থিতিতেও সম্মেলন উদ্বোধন করেছেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য, আভাস রায়চৌধুরী, পলাশ দাসেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement