—প্রতীকী চিত্র।
রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল বিধায়ক শিউলি সাহার নাম করে গাড়ি ভাড়ায় নিয়ে হরিদেবপুরের অপহরণের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। এই মামলার তদন্তে নেমে প্রাথমিক ভাবে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ। ভাড়ায় নেওয়া গাড়িটির মালিক শঙ্করপ্রসাদ সর্দার পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, মন্ত্রী বিয়েবাড়ি যাবেন— এই কথা শুনে তিনি ১৭০০ টাকা ভাড়ায় নিজের সাদা এসইউভি-টি দিয়েছিলেন। যদিও তদন্তকারীরা শঙ্করের এই বক্তব্য খতিয়ে দেখছেন। এ বিষয়ে রবিবার শিউলি বলেন, ‘‘আমার নাম করে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে আমি নিজে পুলিশে এফআইআর করব।’’
শুক্রবার রাতে হরিদেবপুরের একটি পানশালার সামনে থেকে নীতিন সাউ নামে বছর বাইশের এক ব্যবসায়ী-পুত্রকে অপহরণ করা হয়। একটি সাদা এসইউভি-তে কয়েক জন এসে নীতিনকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। এর পরে অপহৃতের পরিবারের কাছে ২০ লক্ষ টাকা দাবি করে তারা। দ্রুত তদন্তে নেমে পুলিশ তিন ঘণ্টার মধ্যেই গাড়িটি আটক করে। নীতিনকে উদ্ধার করার পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয় বিপ্লব পাত্র ওরফে ভিক্টর, অশোক মাঝি এবং অরুণাংশু দাস ওরফে খোকন নামে তিন জনকে। গাড়িটিতে ‘পুলিশ’ লেখা বোর্ড লাগানো ছিল বলে তদন্তে উঠে আসে। এই অপহরণের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও দু’জনের খোঁজ চালাচ্ছেন তদন্তকারীরা।
গাড়িটি সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে, সেটি নথিভুক্ত রয়েছে ঠাকুরপুকুর থানা এলাকার চকঠাকুরানির বাসিন্দা শঙ্করের নামে। ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গাড়িটি বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের জন্য সরকারি খাতায় নথিবদ্ধ করা হয়। সেটির বিরুদ্ধে মোট সাতটি মামলা ঝুলে রয়েছে। এর মধ্যে একটি আদালতে বিচারাধীন। গাড়ির মালিকের ব্যাপারে খোঁজ শুরু করে তদন্তকারীরা আরও জানতে পারেন, তাঁর গাড়ির ব্যবসা ছিল। করোনার পর থেকে তাতে মন্দা চলছে। অতীতে পুলিশের বেশ কিছু শীর্ষ কর্তা গাড়িটি ব্যবহার করেছেন। ব্যক্তিগত কাজে গাড়িটি ভাড়া নিয়েছিলেন রাজ্যের কয়েক জন উচ্চপদস্থ আইপিএস-ও। কিন্তু করোনার পরে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাড়িটির চাহিদা কমতে থাকে।
শঙ্করের দাবি, গত কয়েক মাস গ্যারাজে পড়ে থাকার পরে সম্প্রতি তিনি গাড়িটির স্বাস্থ্যপরীক্ষা করিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘গাড়িটা ভাড়ায় খাটানোর জন্য জায়গা খুঁজছিলাম। খোকন আমাদের পাড়ার ছেলে। ওকে বিধায়ক শিউলি সাহার গাড়ি চালাতে দেখেছি। এক সময়ে সিবিআই অফিসেও গাড়ি চালাত। আর এক নেতার গাড়িও চালাতে দেখেছি। শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ খোকন আমার ভাইকে বলে, কাছেই বিয়েবাড়ি যাওয়ার জন্য শিউলিদি-র গাড়ি লাগবে। রাত ১১টার মধ্যে তিনি ফিরে আসবেন। ১৭০০ টাকা ভাড়া ঠিক হয়। শিউলিদির নাম করায় আমার সন্দেহ হয়নি। দিদি ৫০০ টাকা পাঠিয়েছেন বলে অনলাইনে বাকি টাকা দিতে চায় খোকন। কিন্তু নগদ লাগবে জানানোয় টাকা তুলে এনে দিয়ে গাড়ি নিয়ে যায়।’’
শঙ্কর আরও বলেন, ‘‘আমার গাড়ি নিয়ে গিয়ে এ ভাবে কেউ যে এমন অপহরণ ঘটাতে পারে, স্বপ্নেও ভাবিনি। এটা তো মন্ত্রীর নাম করে আমাকেও ঠকানো হল। পুলিশ গাড়ির নম্বর ধরে আমাদের ফোন করার পর থেকে আমি খোকনকে ফোন করা শুরু করি। এক বার বলে, এই তো এসে গিয়েছি। এক বার বলে, রাস্তা খারাপ, তাই আটকে আছি। পরে তো পুলিশ গাড়িটা নিয়ে গিয়েছে।’’
শিউলি কি অরুণাংশু ওরফে খোকন নামে ওই ব্যক্তিকে চেনেন?
মন্ত্রী জানান, কবরডাঙায় তাঁর বাড়ির কাছে থাকেন খোকন। সেই সূত্রেই তাঁকে নিজের গাড়ি চালানোর জন্য এক সময়ে নিয়োগ করেছিলেন তিনি। কিন্তু বছর পাঁচেক আগে ছাড়িয়ে দেন। শিউলি বলেন, ‘‘ওই
ব্যক্তি পাঁচ বছর আগে আমার গাড়ি চালাত। কিন্তু প্রচুর মদ্যপান করায় আমি ওকে ছাড়িয়ে দিয়েছিলাম। সে এখন আমার নাম করে গাড়ি ভাড়া নিয়ে এমন কাণ্ড ঘটিয়ে থাকলে আমাকেও পুলিশের দ্বারস্থ হতে হবে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘কোন শিউলি গাড়ি নিচ্ছেন, সেটা নিশ্চিত হয়ে তবেই গাড়ির মালিকেরও গাড়ি দেওয়া উচিত ছিল।’’