— প্রতীকী চিত্র।
সংগঠনের কাজে কিংবা শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য বিশেষ অ্যাপ ব্যবহার করত কাশ্মীরি জঙ্গি জাভেদ মুন্সি। এই অ্যাপে কথাবার্তা সবই ‘এনক্রিপটেড’, অর্থাৎ ব্যবহারকারী ছাড়া অন্য কারও পক্ষে তা দেখা বা জানা সম্ভব নয়। কিন্তু দিল্লি থেকে কলকাতায় আসার পথে আত্মীয়দের সঙ্গে সাধারণ ফোনে কথা বলেছিল এই জঙ্গি। গোয়েন্দাদের দাবি, সেই সূত্র ধরেই ক্যানিং পৌঁছে গিয়ে তাকে গ্রেফতার করেছে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ এবং এ রাজ্যের গোয়েন্দারা।
পুলিশ সূত্রের খবর, বাসে চেপে জম্মু-কাশ্মীর থেকে দিল্লিতে আসে জাভেদ। লস্কর-ই-তইবার এক জঙ্গির মাধ্যমে জাভেদ দিল্লিতে এক মাংসের ব্যবসায়ীর ফ্ল্যাটে থাকত। জানা গিয়েছে, সেখানে সে প্রায় দশ দিন ছিল। সংগঠনের তরফে এক ব্যক্তি তাকে কলকাতার বিমানের টিকিট করে দেয়, যাতে সে কলকাতায় আসে গত শুক্রবার রাতে। এর পরেই জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ এবং সেন্ট্রাল আইবি-র তরফে রাজ্য পুলিশের এসটিএফ-কে বিষয়টি জানানো হয়। তারা ক্যানিং থেকে জাভেদকে গ্রেফতার করে।
তদন্তকারী সূত্রের খবর, ধৃতের কাছ থেকে দু’টি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়। গোয়েন্দা সূত্রে দাবি, দিল্লিতে একটি ফোন তাকে লস্কর-ই-তইবার এক সদস্য দিয়েছে। গোয়েন্দাদের আরও দাবি, পাকিস্তানে বসে থাকা লস্করের এক শীর্ষ নেতা এবং তেহরিক-ই-মুজাহিদিনের প্রধান সঙ্গে ওই ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখত জাভেদ। তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সব কথাই হয়েছিল বিশেষ কিছু অ্যাপের মাধ্যমে। শুধুমাত্র একবার সাধারণ ফোন থেকে কথা বলে সে। এক তদন্তকারী জানান, ধৃত কথা বলার জন্য বিভিন্ন ‘এনক্রিপটেড মেসেজ অ্যাপ’ ব্যবহার করত। কথা বলার পর সেই সব মেসেজ মুছেও দিত। ফলে কার কার সঙ্গে তার যোগাযোগ, ছিল সেই ব্যাপারে স্পষ্ট করে এখনও জানা যায়নি। সূত্রের দাবি, তবে ধৃত স্বীকার করেছে, পাকিস্তানে থাকা একাধিক জঙ্গি নেতার সঙ্গে সে কথা বলত। তার দু’টো মোবাইল থেকে মাত্র একটি অ্যাপ উদ্ধার করা হয়েছে। সেই অ্যাপেরও সব মেসেজ মুছে ফেলা হয়েছে। মোবাইল ফোন দু’টোর ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হবে বলে সূত্রের দাবি। দিল্লিতে যাদের সঙ্গে জাভেদ কথা বলেছে বা দেখা করেছে, তাদের খোঁজ শুরু করেছে জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ।
গোয়েন্দারা জানান, ধৃত জেরার মুখে জানিয়েছে, তাঁকে গত কয়েক মাস ধরেই সেখানকার পুলিশ খুঁজছিল। তার ভয় ছিল, হাতে পেলেই তাকে খতম করা হবে। তাই সে জম্মু-কাশ্মীর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল। সে আরও স্বীকার করেছে যে, পাকিস্তান থেকেও তাকে নানা নির্দেশ দেওয়া হয়। বছর দুয়েক আগে ক্যানিংয়ে এসেছিল জাভেদ। তাই এখানকার বিভিন্ন এলাকা তার পরিচিত। সে কারণেই তাকে এখানকার জন্য বেছে নেওয়া হয়। মনে করা হচ্ছে, বাংলাদেশ সীমান্ত পারাপারের বিষয়ে সমম্বয়ের জন্য জাভেদকে এ রাজ্য পাঠায় পাকিস্তান বসা লস্কর এবং তেহরিকের নেতারা।
গোয়েন্দাদের মতে, বাংলাদেশের পূর্ববর্তী সরকারের আমলে সে দেশ থেকে এ রাজ্যে অনুপ্রবেশ কঠিন ছিল। বিশেষ করে পাকিস্তানের জঙ্গিদের ক্ষেত্রে। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান শাসকের সঙ্গে পাকিস্তানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশে মাথা তুলছে ভারত-বিরোধী, মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। অভিযোগ উঠেছে, এমন কয়েক জনকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে, যাদের কারও কারও বিরুদ্ধে জঙ্গি কার্যকলাপ চালানোর নালিশ রয়েছে। গোয়েন্দাদের একাংশের মতে, সেই সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে পাকিস্তান। গোয়েন্দারা জানান, তেহরিক-ই-মুজাহিদিনের বাংলাদেশের কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে আগে থেকেই। পুরোনো সেই নেটওয়ার্ককে কাজে লাগিয়ে কী ভাবে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত পার হয়ে এ-পার বা ও-পারে যাতায়াত করা যাবে, সে বিষয়টি সমন্বয়ের দায়িত্বই দেওয়া হয়েছিল জাভেদকে, মনে করছেন গোয়েন্দারা।