—প্রতীকী চিত্র।
তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আকস্মিক মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে শুরু হয়েছিল গবেষণা। সেই সংক্রান্ত একটি সমীক্ষায় এ রাজ্যের যে তথ্য উঠে এসেছে, তা উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন চিকিৎসকেরা। দেখা গিয়েছে, স্ট্রোক ও হৃদ্রোগই ওই সমস্ত আকস্মিক মৃত্যুর প্রধান কারণ। যার নেপথ্যে রয়েছে কোমর্বিডিটির বিষয়টিকে উপেক্ষা করা কিংবা অল্পবয়সিদের সেই সম্পর্কে পুরোপুরি অন্ধকারে থাকা।
কোভিডের সময়ে, অর্থাৎ ২০২১ সালে ওই রোগের প্রতিষেধক চালু হওয়ার পরবর্তী সময়ে আকস্মিক মৃত্যুর কবলে পড়তে দেখা যায় অল্পবয়সি অনেককেই। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে মৃত্যুর এই প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করে বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। বিশেষজ্ঞদের মনে প্রশ্ন জাগে, তা হলে কি এই সমস্ত মৃত্যুর সঙ্গে করোনার কোনও যোগ রয়েছে? এর পরেই আইসিএমআর এবং চেন্নাইয়ের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিয়োলজি’ যৌথ ভাবে আকস্মিক মৃত্যুর কারণ খোঁজার চেষ্টা শুরু করে। তাতে প্রথম পর্যায়ে রায়পুর, ভুবনেশ্বর, যোধপুর, ভোপাল ও হৃষীকেশের এমস হাসপাতাল, সিএমসি ভেলোর, এসজিপিজিআই লখনউ, পিজিআই চণ্ডীগড়, জিপমার পুদুচেরি এবং বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি এ রাজ্যের আইপিজিএমই অ্যান্ড আর (এসএসকেএম)-কে গবেষণার কাজে যুক্ত করা হয়। এসএসকেএম থেকে সংক্রামক রোগের শিক্ষক-চিকিৎসক অয়ন বসু সমীক্ষার কাজটি শুরু করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সংক্রামক রোগের আর এক চিকিৎসক যোগীরাজ রায় ও কমিউনিটি মেডিসিনের চিকিৎসক সিঞ্জিতা দত্ত এবং শুভ্রসমুজ্জ্বল বসু।
অয়ন জানান, সমীক্ষায় স্পষ্ট বলা ছিল, আকস্মিক মারা যাওয়া সকলেরই বয়স হতে হবে ১৮ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে, যাঁদের আপাতদৃষ্টিতে কোনও কোমর্বিডিটি ছিল না এবং যাঁরা হাসপাতালে ভর্তি বা উপসর্গ শুরু হওয়ার এক দিনের মধ্যে মারা গিয়েছেন। এই বিষয়গুলির উপরে ভিত্তি করেই ২০২১-এর অক্টোবর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর ধরে সমীক্ষা চালান অয়ন-যোগীরাজেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ওই সময়কালে পিজিতে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সি মৃত রোগীর সংখ্যা আড়াই হাজার। তাঁদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তির এক দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫০০ জনের। অয়ন বলেন, ‘‘দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা কিংবা অন্য কোনও রোগের কারণে মৃতদের বাদ দিয়ে আপাতদৃষ্টিতে কোমর্বিডিটি ছিল না, কিন্তু হঠাৎ মারা গিয়েছেন, এমন ৬২ জনকে চিহ্নিত করা হয়। তাঁদের বেড টিকিট নিয়ে বিভিন্ন তথ্য খতিয়ে দেখা হয়। এঁদের বড় অংশের মৃত্যু হয়েছে স্ট্রোকে। বাকিদের হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে।’’
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওই ৬২ জনের মধ্যে ২৫-৩০ জনের বাড়িতে গিয়ে সরাসরি কথা বলেন তাঁরা। দেখা যায়, ২৫ বছরের নীচে বয়স ছিল, এমন ১০ জনের কখনও কোনও কোমর্বিডিটির কথা কেউ জানতেনই না। আবার এক-দু’জন আচমকা অত্যধিক হারে শারীরচর্চা করে অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন। বাকিদের ক্ষেত্রে বেশির ভাগই রক্তচাপ, সুগারের মতো কোমর্বিডিটি নিয়ে কখনও কোনও মাথা ঘামাননি। অয়ন জানাচ্ছেন, আকস্মিক মৃত ওই ৬২ জনের কারওই মারাত্মক কোভিড হয়নি। তাঁদের মধ্যে প্রতিষেধক পেয়েছিলেন ৪৫ জন। যাঁদের মধ্যে চার-পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে প্রতিষেধক নেওয়ার পাঁচ-ছ’দিনের মধ্যে।
অয়ন বলেন, ‘‘দেশের সর্বত্রই গবেষণায় একই রকমের বিষয় উঠে এসেছে। সেখানে কোভিডের প্রভাব কতটা, তা এখনই নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না। জীবনযাপনের ধরন, কোমর্বিডিটিকে উপেক্ষা করা কিংবা সে বিষয়ে না জানার ফলেই আকস্মিক মৃত্যু ঘটছে অল্পবয়সিদের মধ্যে। এই বিষয়টি কিন্তু স্পষ্ট।’’ তাই কোমর্বিডিটি সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মকে আরও সজাগ ও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।