রেললাইন পরীক্ষায় আইআইটির আবিষ্কৃত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর রোবট। —নিজস্ব চিত্র।
দেশ জুড়ে বাড়ছে রেল দুর্ঘটনা। একাধিক কারণের মাঝে উঠে আসছে ফাটল-সহ রেললাইনে নানা ত্রুটি। আপাতত রেললাইন পরীক্ষায় মানুষের চোখ ও কানের উপরে নির্ভরশীল ভারতীয় রেল। তবে তাতে ফাঁক থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সেই ‘হিউম্যান এরর’ এড়াতে রেলপথের সুরক্ষায় ব্যবহার হতে চলেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ‘এআই’ ব্যবহার করে ‘রেল ট্র্যাক-ইনস্পেপেকশন রোবট’ বানিয়েছে রেলশহরের আইআইটি।
খড়্গপুর আইআইটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষণায় এই রোবট আবিষ্কৃত হয়েছে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক দিলীপকুমার প্রতিহার গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন গবেষক পড়ুয়া আনন্দ রোনাল্ড, স্বপ্নজয় সাহা ও অন্য একটি প্রতিষ্ঠান থেকে গ্রীষ্মকালীন ‘ইন্টার্নশিপ’-এ আসা কিছু পড়ুয়া। ২০১৮ সাল থেকে চলা এই গবেষণায় মাস কয়েক আগে ‘পেটেন্ট’ মিলেছে।
গোটা দেশে বর্তমানে যে পদ্ধতিতে রেললাইন পরীক্ষা করা হয়, তা স্বয়ংক্রিয় নয়। সাধারণ বা যান্ত্রিক ট্রলিতে পরিদর্শক শ্রমিকদের সঙ্গে লাইন পরীক্ষা করেন। লাইনে কোথায় ফাটল, কোথায় ‘ফিশপ্লেট’ নেই বা ‘ক্লিপ’ খোলা রয়েছে, তা দেখেন। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষায় একই পদ্ধতিতে চলে পরীক্ষা। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ছোটে ট্রেন।
‘গ্লোবাল পজ়িশনিং সিস্টেম’ বা ‘জিপিএস’ নির্ভর আইআইটির রোবট অবশ্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভিত্তিতে বলতে পারবে রেলপথে কোথায়, কী সমস্যা। প্রয়োজন হবে না পরিদর্শকের। আবিষ্কর্তা অধ্যাপক দিলীপকুমার বলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর নানা রোবট নিয়েই কাজ করি। ২০১৮ সাল নাগাদ মাথায় আসে, সেই মান্ধাতার আমলের রেলপথ পরীক্ষার বিষয়টি। তাতে ‘হিউম্যান এরর’ থাকার সম্ভাবনা প্রবল। দেশ জুড়ে যে ভাবে রেল দুর্ঘটনা বাড়ছে, তাতে রেললাইনের নির্ভুল পরীক্ষা খুব জরুরি। তাই এই রোবটের গবেষণা শুরু করি।”
আইআইটির এই রোবট দেখতে অনেকটা ছোট গাড়ির মতো। তাতে রয়েছে ক্যামেরা। সে ক্যামেরায় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে রেললাইনের ছবি উঠবে। তার পরে গাড়িতে থাকা ‘প্রসেসিং ইউনিট’ ছবির খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করে ত্রুটি ধরবে। গাড়িটি ব্যাটারিচালিত। অধ্যাপক দিলীপকুমার বলেন, “রেললাইন দিয়ে যন্ত্রমানব যাওয়ার পথে কোথাও ত্রুটি পেলে, দাঁড়িয়ে পড়বে। জিপিএসে দূরবর্তী স্টেশনে থেকেও তা দেখতে পারবেন অপারেটর বা আধিকারিকেরা। লাইন মেরামত করলে, তবেই এগোবে ওই রোবট।”
প্রাথমিক ভাবে ছোট আকারের এই রোবট তৈরিতে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। তবে আইআইটির গবেষকদের দাবি, আরও উন্নত পরিকাঠামো নিয়ে সমান্তরাল দু’টি লাইনের উপর দিয়ে চলার মতো যন্ত্রের বাজারমূল্য দু’লক্ষ টাকা হবে।
কী ভাবছে ভারতীয় রেল? দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এক কর্তা বলেন, “আইআইটির ওই অধ্যাপকের গবেষণা সম্পর্কে জেনেছি। খড়্গপুরের ডিআরএমের সঙ্গে আলোচনা করে এক দিন রোবটটি দেখব। তার পরে রেল-বোর্ডে জানাব। আশা করি, মানুষের তুলনায় অনেক নির্ভুল হবে রোবটের রেললাইন পরীক্ষা।”