Terrorism

পদ্মার বাঁকেই বসত সাপ্তাহিক বৈঠক 

এনআইএ-র দাবি, ওই মসজিদে ‘মাথা মোড়ানোর’ কাজ হত। এলাকার তরুণ, কিশোরদের নিয়েও বৈঠক হত নিয়মিত।

Advertisement

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস

জলঙ্গি শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৪:০৬
Share:

প্রতীকী ছবি।

জলঙ্গি বাজার ছাড়িয়ে খানিক এগোলেই পদ্মার বাঁক। লোকালয়ের হট্টগোল এড়িয়ে সেখানেই মাঝারি মাপের একটি মসজিদ। আল কায়দার সুতোয় জড়িয়ে পড়ার প্রাথমিক পাঠ মসজিদ লাগোয়া নির্জন পদ্মা-ঘাটেই হয় মইনুলদের—দাবি এনআইএ-র।

Advertisement

গোয়েন্দাদের জেরায় সে কথা কবুলও করেছে মধুবোনার মইনুল মণ্ডল, কিংবা কালীনগরের মুর্শিদ হাসান। গত শুক্রবার, মুর্শিদাবাদের ডোমকল-জলঙ্গি-রানিনগর এলাকার বিভিন্ন গ্রামে হানা দিয়ে আল কায়দা জঙ্গি সন্দেহে ধৃত ৬ জনকে আলাদা করে জিজ্ঞাসাবাদ করে বার বার ওই পদ্মা বাঁকের কথা উঠে এসেছে বলে এনআইএ সূত্রে জানা গিয়েছে।

সে দাবি যে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়, আশপাশের গাঁ-গঞ্জের মানুষও তা মেনে নিচ্ছেন। জলঙ্গি বাজারের এক ফল বিক্রেতা বলছেন, ‘‘পদ্মার বাঁকে ওই মসজিদে প্রতি সপ্তাহে বৈঠক বসত। সেখানে মইনুল নিয়ম করে যেত। তবে গ্রামের সাধারণ মানুষ ধর্মপ্রাণ হলেও সে দিক তেমন মাড়াত না। কারণ ওই মসজিদে মইনুলের মতো গোঁড়া মানুষজনই যেত।’’

Advertisement

মধুবোনার এক বৃদ্ধ বলছেন, ‘‘ধর্ম তো আমরাও মেনে চলি বাবা। নিয়ম করে পাঁচ ওয়ক্তের নমাজ পড়ি। জুম্মা বারে মসজিদে যাই। তবে পদ্মার বাঁকে ওই মসজিদে বিশেষ লোকজন যেত!’’

আরও পড়ুন: সহজেই মিলছে ওয়্যারলেস সেট, বাহিনীর বার্তা ফাঁসের আশঙ্কা

এই ‘বিশেষ’ লোকজনদের তালিকায় মধুবোনার মইনুল মণ্ডল ছাড়াও মুর্শিদ হাসান, আতিউর রহমানের আনাগোনাও লক্ষ্য করছেন স্থানীয় এক গ্রামবাসী। বলছেন, ‘‘টিভিতে ছবি দেখে ওদের বেশির ভাগকেই চিনতে পেরেছি। জলঙ্গি বাজারের শেষ প্রান্তে আমার চায়ের দোকান। রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। বৈঠক সেরে ওদের দল বেঁধে ফিরতে দেখেছি আমি।’’ ওই মসজিদ এবং তার লাগোয়া নির্জন নদী-পাড়ের সাপ্তাহিক বৈঠক ছাড়াও মাসে একটি বিশেষ বৈঠক হত ওই মসজিদে, গ্রামবাসীদের এমনই দাবি। জলঙ্গির এক পরিচিত মুসল্লি (যিনি নিয়মিত নমাজ পড়েন, প্রয়োজনে নমাজ পড়ান) বলছেন, ‘‘ওই মসজিদের নমাজিদের কথাবার্তায় ধর্মের চেয়েও জেহাদের আলোচনা হত বেশি। আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি ওখানে মাসে বিশেষ বৈঠক করতে বাইরে থেকে লোক আসত। পরিচয় দেওয়া হত, বাইরের ইমাম! কিন্তু খোঁজ নিয়েছি তা নয়। শুনেছি ডোমকল শহরের কোথাও একটা ওদের ত্রৈমাসিক বৈঠকও হত। ভাবগতিক ভাল না লাগায় আমি ওই মসজিদে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলাম।’’

এনআইএ-র দাবি, ওই মসজিদে ‘মাথা মোড়ানোর’ কাজ হত। এলাকার তরুণ, কিশোরদের নিয়েও বৈঠক হত নিয়মিত। ধর্মীয় শিক্ষা ধর্মীয় কবিতা আবৃত্তি, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা— এ সবের পাশাপাশি সুকৌশলে জেহাদের পাঠ দেওয়া হত সেখানে। লকডাউনের আবহে রুজির উপায়ে টান পড়েছে। সেই সুযোগে বেকার ছেলেপুলেদের মাথা মুড়োতে বৈঠকও বড় ঘনঘন হত বলেই জানাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। মইনুলদের গ্রেফতারের পরে পদ্মার বাঁক এখন এড়িয়ে চলাই সমীচীন মনে করছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।

যেমন সমীচীন মনে করেছেন গর্ত বুজিয়ে ফেলা! জঙ্গি সন্দেহে ধৃত কালীনগরের আবু সুফিয়ানের ঘরের মধ্যে পেল্লাই গর্ত এখন এনআইএ-র সন্দেহের গহ্বর। তারা মনে করছে আবু সুফিয়ানের মতো ‘বিশেষ’ লোকেরা ওই ‘বিশেষ’ কারণেই ওই গভীর গর্ত খুঁড়েছিল। বুধবার জেলা পুলিশের কর্তারাও গর্তের চরিত্র উদ্ধারে দু’জন রাজমিস্ত্রিকে সঙ্গে নিয়ে সুফিয়ানের বাড়িতে যান। এলাকায় অন্য কোনও বাড়িতে এমন গর্ত রয়েছে কিনা তা-ও খতিয়ে দেখেন তাঁরা। সেই রাজমিস্ত্রিরা পরে জানান সেপটিক ট্যাঙ্ক তৈরি করতে এমন গর্ত লাগে না। তাঁদের এক জনের কথায়, ‘‘সেপটিক ট্যাঙ্ক লোহার পাত দিয়ে মোড়া হয় নাকি? এত গভীর গর্তই বা কাটতে হবে কেন?’’ তবে গর্ত-বিতর্ক এড়াতে এখন অনেকেই শৌচাগারের জন্য গর্ত খুঁড়েও বুজিয়ে ফেলছেন বলে খবর! ডোমকলের এক রাজমিস্ত্রি বলছেন, দু’দিন আগেই দিনভর পরিশ্রম করে একটি বাড়িতে সেপটিক ট্যাঙ্কের জন্য গর্ত তৈরি করে এসেছিলাম। রবিবার সে বাড়ি গিয়ে দেখলাম মাটি দিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির কর্তা বললেন, ‘এখন গর্ত খুঁড়ে কাজ নেই বাপু!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement