(বাঁ দিক থেকে) যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় মেন হস্টেল বিল্ডিং এবং ধৃত হিমাংশু কর্মকার। —নিজস্ব চিত্র।
খবরের চ্যানেলগুলোতে চোখ রাখলে মিনিটে মিনিটে ‘ব্রেকিং নিউজ়’-এ যাদবপুরে ছাত্রের মৃত্যু নিয়ে নতুন নতুন তথ্য। হস্টেলের একের পর এক আবাসিককে (প্রাক্তনীও) গ্রেফতারির খবর। উৎকণ্ঠায় ছেলেকে ফোন করেছিলেন মা। শুক্রবার রাতে মায়ের ফোনে পেয়ে বিরক্তই হন হিমাংশু কর্মকার। মাকে টিভি না দেখার পরামর্শ দেন তিনি। ছেলের সঙ্গে মায়ের ওই কথোপকথনের বেশ খানিক ক্ষণ কেটে গিয়েছে। আবার টিভির পর্দায় চোখ রেখেছিলেন প্রৌঢ়া মিতালি কর্মকার। এ বার ছ্যাঁৎ করে উঠল বুক। শুনলেন ছেলেও গ্রেফতার! তার পর আর বাড়িতে থাকেননি প্রৌঢ়া। এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে গিয়েছেন তিনি।
যাদবপুরকাণ্ডে শুক্রবার আরও তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে রয়েছেন হিমাংশু কর্মকার নামে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী। মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের নিমতিতায় তাঁর বাড়ি। পরিবারে আছেন এক ভাই, দিদি এবং মা। বাবা মারা গিয়েছেন বছর দশেক আগে। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে হিমাংশুর পড়াশোনা নবোদয় বিদ্যালয়ে। তার পর থেকে এ পর্যন্ত পড়াশোনার সূত্রে বাড়ির বাইরেই থাকেন তিনি। হিমাংশুর দিদিও কলকাতায় পড়াশোনা করেন। মা স্থানীয় শেরপুর শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষিকা। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিমাংশু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অঙ্কে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। মাস দুই হল অন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পিএইচডি করছেন তিনি। তবে থাকতেন যাদবপুরের হস্টেলেই। শুক্রবার রাতে হিমাংশুর গ্রেফতারির খবর চাউর হতে অবাক প্রতিবেশীরা। স্থানীয়েরা অবশ্য বলছেন, ‘‘হিমাংশু খুব ভাল ছেলে।’’
হিমাংশুর গ্রেফতারির খবর পাওয়ার পর থেকে নিমতিতার কর্মকারপাড়ায় তাঁর বাড়িতে তালা পড়েছে। শনিবার সকালে ওই তালাবন্ধ বাড়ির সামনেও ভিড় করতে দেখা গেল পড়শিদেরা। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছেন তাঁরা। এক জনের কথায়, ‘‘এত মিশুকে, সর্বদা হাসিমুখের ছেলেটি কী ভাবে এমন ঘটনায় জড়িয়ে পড়ল!’’
হিমাংশুর বাবা রঞ্জয় কর্মকারের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবারের রোজগেরে শুধু মা। স্বল্প আয়ে সংসার সামলে, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যয়ভার সামলাচ্ছেন। কিন্তু সেই কষ্ট কখনও সন্তানদের বুঝতে দিতে চাননি মিতালি। শনিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি ফোনে বলেন, ‘‘বার বার ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম (যাদবপুরকাণ্ড নিয়ে)। ও বলেছিল, ‘টিভি দেখা বন্ধ করো তো! ও সবে কিছু হবে না।’’’
গবেষণারত ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন মায়ের। ছেলে জানিয়েছিলেন উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। ইতিমধ্যে বিদেশ থেকে চাকরির সুযোগও এসেছে। কিন্তু এক রাতেই বদলে গিয়েছে কর্মকার বাড়ির পরিবেশ। ছেলের গ্রেফতারি নিয়ে আর কিচ্ছু বলতে চাইলেন না তাঁর মা। ফোনের ও পার থেকে খানিক নিস্তব্ধতা। তার পর ফোনটা কেটে গেল।