ভাটপাড়ায় স্থানীয় এক বাসিন্দাকে আশ্বাস পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের। ছবি: টুইটার থেকে
ব্যাপক পুলিশি তৎপরতায় নির্বিঘ্নেই ভাটপাড়া সফর সারল তৃণমূলের পরিষদীয় প্রতিনিধিদল। ব্যারাকপুর থেকে ভাটপাড়া পর্যন্ত রাস্তার দু’ধার মুড়ে দেওয়া হয়েছিল ‘জয় শ্রীরাম’ লেখা ব্যানারে। কিন্তু বিজেপি-তৃণমূলের মুখোমুখি সংঘাত এ দিন আর ঘটতে দেয়নি ব্যারাকপুর কমিশনারেট। সিপির সঙ্গে বৈঠকে বসে অবিলম্বে অর্জুন সিংহকে গ্রেফতার করার দাবি তুলেছেন ফিরহাদ হাকিম। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বিজেপি সাংসদ বললেন, ‘‘সাহস থাকলে আমাকে গ্রেফতার করে দেখাক।’’
শুক্রবার দুপুর ২টো নাগাদ বিধানসভা থেকেই ভাটপাড়ার উদ্দেশে রওনা দেয় তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। নেতৃত্বে ছিলেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। দলে ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, ব্রাত্য বসু, পূর্ণেন্দু বসু, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য,সুজিত বসু, নির্মল ঘোষেরা।
ব্যারাকপুরের সাংসদ তথা এলাকার দোর্দণ্ডপ্রতাপ বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহ আগেই বলেছিলেন যে, ‘‘ভাটপাড়ায় যিনিই আসুন, মানুষ তাঁকে জয় শ্রীরাম শুনিয়ে দেবে।’’ একদিন নৈহাটি এবং আর এক দিন কাঁচরাপাড়া যাওয়ার পথে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ের দু’পাশে যে ভাবে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান তোলা হয়েছিল, এ দিনও বিজেপি সে রকম কিছু করার চেষ্টা করতে পারে বলে পুলিশের কাছে খবর ছিল। ব্যারাকপুর থেকে ভাটপাড়া পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে ‘জয় শ্রীরাম’ লেখা ব্যানার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সে সব ব্যানার পুলিশ সরায়নি। কিন্তু সকাল থেকে বিরাট বাহিনী নামিয়ে মহল্লায় মহল্লায় রুটমার্চ শুরু করে পুলিশ। যে রাস্তা দিয়ে তৃণমূলের প্রতিনিধিদলের ভাটপাড়ায় পৌঁছনোর কথা ছিল ছিল, সে রাস্তাতেও টহলদারি চালানো শুরু হয়। ফলে বিজেপি-তৃণমূলে কোনও মুখোমুখি সংঘাতএ দিন হয়নি। তবে তৃণমূলের প্রতিনিধিরা এ দিন সাধারণ মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়েন। এলাকায় চলতে থাকা লাগাতার হিংসা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন অনেকেই।
আরও পডু়ন: ‘বড় ঘোষণা করতে চলেছি’, মোদীর সঙ্গে বৈঠক নিয়ে মন্তব্য ট্রাম্পের, শুল্ক-সংঘাত থামার ইঙ্গিত?
বেশ কিছুটা এলাকা এ দিন হেঁটেই ঘোরেন ফিরহাদ, সুব্রত, জ্যোতিপ্রিয়রা। কঠোর নিরাপত্তায় মোড়া ছিল তাঁদের সেই সফর। তার মাঝেই স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন রাজ্যের মন্ত্রীরা। শুরুর দিকে নির্বিঘ্নই ছিল সফর। কিন্তু শেষ দিকে স্থানীয় বাসিন্দারা তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করতে থাকেন তৃণমূলের প্রতিনিধিদের ঘিরে। পুলিশ অবশ্য পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দেয়নি।
এলাকায় ঘোরার পরে ভাটপাড়া থানায় ঢোকেন তৃণমূল নেতারা। ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা সেখানে বৈঠকে বসেন ফিরহাদদের সঙ্গে। বৈঠক শেষে ফিরহাদ হাকিম জানান, অর্জুন সিংহকে গ্রেফতার করার দাবি জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশকে এলাকায় শান্তি ফেরাতে বলা হয়েছে। এলাকায় প্রচুর অস্ত্র মজুত রয়েছে। সে সব উদ্ধার করতে হবে এবং অর্জুন সিংহকে গ্রেফতার করতে হবে বলে পুলিশকে জানিয়েছি। এখানে অরাজকতা আমরা চলতে দেব না।’’ অর্জুন সিংহের ‘দুষ্কৃতী বাহিনী’ এলাকায় অশান্তি তৈরি করছে বলে ফিরহাদ এ দিন অভিযোগ করেন। বিহার এবং উত্তরপ্রদেশ থেকে লোক এনে অর্জুন এলাকায় অশান্তি পাকাচ্ছেন বলে তাঁর দাবি। অশান্তির যাবতীয় দায় তিনি বিজেপির ঘাড়ে চাপান এবং বলেন, ‘‘আজ আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করলাম। সাত দিন পরে আমরা আবার আসব, দেখব পরিস্থিতি ঠিক আছে কি না।’’
আরও পড়ুন: কসবা থানার এসআই-কে জাত তুলে কটাক্ষ, কনস্টেবলের বিরুদ্ধে এফআইআর
ফিরহাদ হাকিমকে অবশ্য পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন অর্জুন সিংহ। বাইরে থেকে লোক এনে অশান্তি সৃষ্টি করার যে অভিযোগ ফিরহাদ তাঁর বিরুদ্ধে তুলেছেন, সেই একই অভিযোগ অর্জুন তুলেছেন ফিরহাদের বিরুদ্ধে।‘‘মেটিয়াবুরুজ থেকে লোক ঢুকিয়ে ফিরহাদ এখানে অশান্তি ছড়াচ্ছেন,’’ দাবি অর্জুনের। আর তাঁর গ্রেফতারির যে দাবি তৃণমূল তুলেছে, সে প্রসঙ্গে অর্জুনের কটাক্ষ, ‘‘দেশের সংবিধানটা কি ফিরহাদের বাড়ির লোকেরা তৈরি করেছেন নাকি! দেশের আইন কি ফিরহাদের কথামতো চলবে!’’ ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদের কথায়: ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিছু করতে পারলেন না, ফিরহাদ হাকিম কী করবেন? ওঁর কী আছে? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পা চেটে মন্ত্রী হয়েছেন। ক্ষমতা থাকলে আমাকে গ্রেফতার করে দেখান।’’
প্রায় এক মাস ধরে চলতে থাকা লাগাতার অশান্তিতে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে, এ দিন তাঁদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন ফিরহাদ হাকিম। মৃতদের পরিজনদের চাকরি দেওয়া যায় কি না, তা-ও ভেবে দেখা হচ্ছে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন। মৃত বিজেপি কর্মী রামবীর ও ধর্মবীরের পরিবারকে নবান্নে ডাকা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
অন্য দিকে ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেন, ‘‘আমরা আজ পর্যন্ত ৩০০ কেজি বোমের মশলা, ১১ টি আআগ্নেয়াস্ত্র, প্রচুর বোমা ও সরঞ্জাম বাজেয়াপ্ত করেছি। এই ক'দিনে ২৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আরও কিছু দিন সময় লাগবে পরিস্থিতি আগের মতো পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে।’’
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।