ফাইল ছবি
দেওয়াল থেকে পলেস্তারা খসে পড়েছে। দেওয়ালে ইতিউতি গজিয়েছে চারা গাছ। বেলঘরিয়ার আব্দুল লতিফ স্ট্রিটের বাড়ি কিংবা বাড়ির বাসিন্দা মিনতি মুখোপাধ্যায় টালিগঞ্জের অভিজাত আবাসনের ফ্ল্যাট থেকে অনেক দূরে! যে ফ্ল্যাটে নগদ ২১ কোটি টাকা, বহুমূল্য গয়না কিংবা কয়েক লক্ষ বিদেশি মুদ্রা উদ্ধারের সূত্রে মিনতির বড় কন্যা অর্পিতা রাজ্যে আলোচনার কেন্দ্রে।
শহরতলির গলি থেকে মহানগরের কেন্দ্রে এসে মডেলিং, অভিনয় জগতে নাম লেখানো এবং সেখানে বড় মাপের সাফল্য না-পেলেও এত সম্পত্তি, প্রভাব বৃদ্ধির পিছনে মন্ত্রীর সঙ্গে পরিচিতির তত্ত্ব খারিজ করতে চাইছেন না অনেকেই। ব্যাখ্যা হিসেবে বলা হচ্ছে, একদা বেলঘরিয়ার দেওয়ানপাড়ার বাসিন্দা অর্পিতা একটি মিশনারি স্কুল থেকে পাশ করে ভর্তি হয়েছিলেন মধ্য কলকাতার কলেজে। স্নাতক হওয়ার পরে যুক্ত হন মডেলিংয়ে। সেখানেই অভিনয়ে হাতেখড়ি। একাধিক ওড়িয়া, তামিল সিনেমায় অভিনয় করেছেন অর্পিতা। চলতি শতকের প্রথম দশকের শেষে তাঁর দু’টি সিনেমা ‘পার্টনার’ এবং ‘মামা-ভাগ্নে’ মুক্তি পেয়েছিল।
উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতায় নেল আর্টের সালোঁ-ও খোলেন তিনি। অভিনয় এবং মডেলিংয়ের সূত্রেই গত দশকের মাঝামাঝি নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে ওঠে তাঁর। ওই পুজো কলকাতায় ‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পুজো’ হিসেবেই পরিচিত। তাই পুজোর মাধ্যমেই অর্পিতার সঙ্গে মন্ত্রীর পরিচিতি। ক্রমে তা ‘ঘনিষ্ঠতা’য় গড়ায় বলে ইডি সূত্রের দাবি। নাকতলার পুজোর প্রচারের মুখও হয়ে ওঠেন তিনি। পুজো হোক বা ভোটের প্রচার, দু’জনকে অনেক সময়ে একসঙ্গে দেখা যেত। শনিবার সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, পুজোর মঞ্চে বসে থাকা অর্পিতাকে (মঞ্চে ছিলেন পার্থও) মুখ্যমন্ত্রী জিজ্ঞেস করছেন, তিনি ওড়িশায় ছবি করেছেন কি না, ওড়িয়া বলতে পারেন কি না? এ-ও বলেন, বাংলার মেয়ে, ওড়িশায় কাজ করেছে। কয়েক দিন আগে তৃণমূলের একুশে জুলাই সমাবেশেও মঞ্চের ধারেকাছেই দেখা গিয়েছিল তাঁকে।
উত্তর শহরতলির আর একটি আবাসনেও অর্পিতার ফ্ল্যাট রয়েছে বলে ইডি সূত্রের দাবি। তবে আর একটি সূত্রের দাবি, এর আগে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের সামনে দু’বার হাজিরাও দিয়েছিলেন তিনি। তাই পার্থবাবুর সঙ্গে তাঁর যোগসূত্র একেবারে অজানা ছিল না।
মেয়ের সম্পত্তি বা মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠতা’ সম্পর্কে কোনও ব্যাখ্যাই দিতে পারেননি মা। তিনি এখনও থাকেন আব্দুল লতিফ স্ট্রিটে। শনিবার সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘‘মেয়ে সিরিয়াল করত, প্রযোজনায় যুক্ত ছিল। ওড়িশায় বই-টই করেছে। আর কিছু জানি না।’’ তিনি আরও বলেন,‘‘ওর বাবা কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরি করতেন। চাকরি থাকাকালীন মারা যান। এর পর ওই চাকরি করার জন্য অর্পিতাকে বলা হয়েছিল। আমি বলেছিলাম চাকরিটা কর, কিন্তু করল না।’’