রানাঘাটের ছাতিমতলা মাঠে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার। ছবি: প্রণব দেবনাথ।
রাজ্যে ডিসেম্বর মাসে অশান্তি হতে পারে বলে কয়েক দিন ধরেই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার আরও এক ধাপ এগিয়ে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘কেউ কেউ ভিআইপি নিরাপত্তা নিয়ে গাড়িতে অস্ত্র আনছে। ভিআইপি গাড়ি করে যেন রাজ্যে অস্ত্র না ঢোকে।’’ অশান্তির প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘‘এনআইএ (ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি) ঢুকেছে এ সব করার জন্য।’’
বৃহস্পতিবার নদিয়া জেলার প্রশাসনিক সভায় এই দু’টি বিষয়কে নির্দিষ্ট করে সামনে এনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সূত্রেই ওই সভায় উপস্থিত রাজ্য পুলিশের শীর্ষ কর্তাদের উদ্দেশে মমতার নির্দেশ, “এ সব দিকে নজর রাখতে হবে। বাইরে নাকাতল্লাশি বাড়াতে হবে। সব জায়গায় তল্লাশি বাড়াও।” মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “বিহার থেকে হাজার টাকায় অস্ত্র আসছে। ও-পার থেকে চলে আসছে। এখান-সেখান থেকে চলে আসছে। এগুলো সামলাতে হবে।’’
বুধবারই পূর্ব মেদিনীপুরে গিয়ে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় বাহিনীর ঘেরাটোপে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নন্দীগ্রামে অস্ত্র ও টাকা নিয়ে ঢুকছেন। তাঁর গাড়িতে তল্লাশি করার দাবিও তোলেন তিনি। এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের পরে শুভেন্দু বলেন, ‘‘একবার নয়, পুলিশ একশো বার বিরোধী দলনেতার গাড়িতে তল্লাশি করতে পারে। তবে ভিডিয়োগ্রাফির মাধ্যমে আইপিসি এবং সিআরপিসি মেনেই তল্লাশি করতে হবে। আর পুলিশকে তৃণমূল বেতন দেয় না। তারা সরকারের টাকায় বেতন পান।’’ সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য হবে।’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুর মতো নেতারা সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক বার দাবি করেছেন, ডিসেম্বরে এ রাজ্যে সরকার পড়ে যাবে। সে দিকে ইঙ্গিত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘কেউ কেউ বলে বেড়াচ্ছে ডিসেম্বর মাসে ধামাকা হবে। পরিকল্পনা করেছে। এ রাজ্যেও বড়রকমের অশান্তি বাঁধানোর চেষ্টা হতে পারে।’’ তার পরেই মমতার বার্তা, “স্পর্শকাতর জায়গাগুলো দেখে রাখুন। এটাই (ওদের) একমাত্র পথ। কিন্তু এটা বাংলার পথ নয়। চৈতন্যদেবের মাটিতে দাঁড়িয়ে বলছি, জীবন শান্তির।”
ভোটার তালিকা সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “যাঁরা ভোটার তালিকার কাজ করছেন, তাঁরা সবার নাম তুলবেন।’’ জাতধর্ম নির্বিশেষে যোগ্য কারও নামই যেন তালিকা থেকে বাদ না যায়, সে ব্যাপারেও সতর্ক করেছেন তিনি। তাঁর দাবি, “একটা চক্রান্ত চলছে। কোনও কোনও জায়গায় সীমান্ত এলাকায় ৩০ শতাংশ লোকের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। আমাদের রাজ্যে নয়, অন্য রাজ্যে। কাজেই সেখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।” ভোটার তালিকা ঠিক মতো হচ্ছে কি না তা দেখতে আধিকারিকদের ‘সারপ্রাইজ ভিজিট’-এর নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
অশান্তির আশঙ্কা সম্পর্কে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্তের মন্তব্য, ‘‘উনি ভয় পেয়েছেন দেখে ভাল লাগছে। আমরা তো শুধু বলেছি ডিসেম্বরে ঠান্ডা পড়বে, ওঁর সরকার কাঁপবে। আর তো কিছু বলিনি। বাকি কথা তো উনিই বলছেন। বাংলার মানুষ ২ মে ২০২১ থেকে শান্তি দেখেছে। উনি কি সেই শান্তির কথা বলছেন? শ্মশানের শান্তি?’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নভেম্বর ডিসেম্বরে গ্রামে গ্রামে পঞ্চায়েত দুর্নীতির হিসেব চাইবে মানুষ। কত খেলে, কত পেলে এই নিয়ে আলোচনা চলবে।’’