তৃপ্ত: বাবা অভিজিৎবাবু ও মা কাকলীদেবীর সঙ্গে অন্বেষা। —নিজস্ব চিত্র।
গত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিনই নিজের লক্ষ্য ঠিক করে রেখেছিল আশালতা বসু বিদ্যালয়ের ছাত্রী অন্বেষা দাস৷ ৬৮০৷ কাগজে ৬৮০ লিখে নিজের ঘরের দেওয়ালে টাঙিয়ে রেখেছিল সে৷
টেস্ট পরীক্ষায় ৬৬০ পেতেই সেই কাগজ কুচিকুচি করে ছিড়ে ফেলে অন্বেষা৷ কিন্তু শনিবার দেখা গেল গত বছর যে লক্ষ্য ঠিক করেছিল অন্বেষা, তার চেয়েও তিন নম্বর বেশি পেয়ে তার নম্বর দাড়িয়েছে ৬৮৩৷
সেই ৬৮৩ নম্বর পেয়েই এ বারের মাধ্যমিকে মেধা তালিকায় প্রথম দশের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে অন্বেষা৷ রাজ্যে অষ্টম সে৷ জলপাইগুড়ি জেলায় প্রথম৷ জলপাইগুড়ি শহরের বাবুপাড়া এলাকায় একটি আবাসনে থাকে অন্বেষা৷ বাবা অভিজিৎ দাস এলআইসি-র কর্মী৷ মা কাকলী দাস দেশবন্ধুনগর আর আর ১ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা৷
ছোটবেলা থেকেই ভাল ছাত্রী অন্বেষা৷ শিশু নিকেতন স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করে আশালতা বসু বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় সে৷ দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে প্রতিবারই ক্লাসের পরীক্ষায় প্রথম হয়ে আসছে সে৷ তবে কোনদিনই অবশ্য ঘড়ি ধরে পড়াশোনা করেনি সে৷ অন্বেষার কথায়, ‘‘টেস্ট পরীক্ষার পর থেকে আট-দশ ঘণ্টা করে পড়তে শুরু করি৷’’
পড়াশোনার পাশাপাশি গল্পের বই পড়া পছন্দ অন্বেষার৷ আর প্রিয় গল্প সত্যজিৎ রায়ের ফেলুদা৷ প্রফেসর শঙ্কুটা এখনও পড়া হয়ে ওঠেনি৷ ‘‘ওটা পড়ার ইচ্ছে রয়েছে,’’ জানাল সে।
ঘুরে বেড়ানো সবচেয়ে পছন্দের অন্বেষার৷ এ মাসেই শিলং যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তার৷ আর মাধ্যমিকে এত ভাল ফলের পুরস্কারস্বরূপ পুজোয় তার বহুদিনের শখ রাজস্থান ঘুরতে যাওয়া পূরণ হতে চলেছে৷ বাবুপাড়ায় নিজেদের আবাসন হলেও বাবা অফিস ও মা স্কুলে বেরিয়ে যাওয়ার পর অন্বেষার সারাদিন কাটে রেসকোর্স পাড়ায় দাদু দিদার বাড়িতেই৷
এ দিন সকালেও সেখানেই ছিল সে৷ লক্ষ্য পূরণ হবে না ধরে নিয়ে সকাল থেকে টিভিও চলেনি। কিন্তু বাড়ির নীচতলায় ভাড়া থাকা এক দম্পতি প্রথম টিভিতে অন্বেষার নাম শুনতে পেয়ে ছুটে উপরে যান৷ তারপরই বাড়িতে শুরু হয় উৎসব৷ অন্বেষার বাবা অভিজিৎবাবুর কথায়, ‘‘কতটা খুশি হয়েছি বলে বোঝাতে পারবো না৷’’ মা কাকলীদেবী জানালেন, ‘‘আমরা কখনও পড়াশোনা বা অন্য কোন বিষয় নিয়ে মেয়েকে চাপ দিইনি৷ কিন্তু বিশ্বাস ছিল ও ভাল করবেই৷’’ অন্বেষার বাড়িতে এ দিন দুপুরের মেনু তার পছন্দের মালাই চিংড়ি৷ আর রাতের থাকছে বিরিয়ানি৷
মার্কশিট নিতে স্কুলে পৌঁছতেই অন্বেষাকে নিয়ে এ দিন উৎসবে মেতে ওঠেন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও সহপাঠীরা৷ অন্বেষার এখন একটাই লক্ষ্য, আরও ভাল করে পড়াশোনা করে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হওয়া৷
কাগজে এদিন সেটা না লিখলেও মনের ভিতরে গেঁথে ফেলেছে সে৷