বোলপুরের সিয়ান এলাকায় খামারবাড়ির ভিতরে চাষজমি। নিজস্ব চিত্র।
গরুপাচার মামলায় গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই নামে-বেনামে বিপুল সম্পত্তির অভিযোগে সিবিআইয়ের আতশ কাচে অনুব্রত মণ্ডল। এই আবহেই বোলপুরে এক বিরাট খামারবাড়ির হদিস মিলল রবিবার। কেয়ারটেকারের দাবি, ওই খামারবাড়ি অনুব্রতর। এ দিনই আবার শান্তিনিকেতনে বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা অনুব্রতকে বিঁধে অভিযোগ করলেন, ‘‘আমি যা কাগজপত্র পেয়েছি তাতে উনি তিন-চার হাজার কোটি টাকার মালিক। শাসক দলের এক জন জেলা সভাপতির এত সম্পত্তি কী ভাবে হল?’’
বোলপুর সিয়ান এলাকায় প্রায় ৫০ বিঘা জমিতে ওই খামারবাড়িটি রয়েছে। সেটি ‘কেষ্টজেঠু’ তথা অনুব্রত মণ্ডলের বলেই দাবি করেছেন সেখানকার কেয়ারটেকার। তবে সরকারি নথিতে ওই সম্পত্তি কার নামে তা জানা যায়নি। বছর কুড়ি আগে ওই খামারবাড়ি অনুব্রত কেনেন বলে দাবি করেছেন বাড়ির কেয়ারটেকার। সেখানকার জমিতে ধান ছাড়াও বিভিন্ন আনাজের চাষ হয়। একটি পুকুরের পাশাপাশি শিব মন্দিরও রয়েছে। শিবরাত্রির সময় অনুব্রত সেই বাড়িতে আসতেন বলে দাবি কেয়ারটেকারের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কেয়ারটেকার বলেন, ‘‘আমরা এই বাড়ি কুড়ি বছর ধরে দেখাশোনা করছি। উনি গ্রেফতার হয়ে যাওয়ায় সত্যিই খুব খারাপ লাগছে।”
এর আগে ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়া প্রাক্তন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের একাধিক জমি-বাড়ির হদিস মিলেছিল বীরভূমে। এ বার এই খামারবাড়ির কথা প্রকাশ্যে আসতেই অনুব্রতর বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে বিরোধীরা। তেমন কোনও প্রশাসনিক পদে না থেকে কী ভাবে তাঁর এই বিপুল সম্পত্তি হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধী সব দল।
এ দিন শান্তিনিকেতনে নিজের বাড়িতে অনুব্রতকে বিঁধে বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা বলেন, ‘‘আমি যখন তৃণমূলে ছিলাম তখন শুনতাম উনি বলতেন আমার একঘর টাকা হবে। এটা নাকি ওঁর স্বপ্ন ছিল। এখন তো এক ঘর নয়, এক জেলা টাকা হয়ে গিয়েছে! ফলে পাপের ঘড়া ভরে গিয়ে যা হওয়ার তাই হচ্ছে।’’
অনুব্রতর ‘ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা’ শাসক দলের নেতাদেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অনুপম। তিনি বলেন, ‘‘এর মধ্যে বিধায়ক থেকে শুরু করে সব রকম মানুষজন রয়েছেন। খুব তাড়াতাড়ি তাঁদের একটি নামের তালিকা আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দেব।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ বলেন, “শুধু অনুব্রতর বলে নয়, সব তৃণমূল নেতার সম্পত্তি আয়ের উৎস ছাড়াই গড়ে উঠেছে। আরও অনেক কিছু বেরোবে। কেবল সময়ের অপেক্ষা।” এ বিষয়ে জেলা তৃণমূলের কেউ মুখ খুলতে চাননি।