অনুব্রতের লটারি-দুর্নীতি নিয়ে চার্জশিটে কী দাবি ইডির? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
একের পর এক লটারি কেটেছেন। পেয়েছেন কোটি কোটি টাকা। বীরভূমে তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের লটারি-কাহিনি নিয়ে আগেও শোরগোল পড়েছে। বৃহস্পতিবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ আদালতে জমা পড়া তৃতীয় অতিরিক্ত চার্জশিটে ইডি দাবি করল, লটারি কেটে নয়, লটারির পুরস্কারপ্রাপকদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে টিকিট কিনে নিতেন বীরভূমের কেষ্ট। এ ভাবেই ২ কোটি টাকার পুরস্কার পাওয়ার আড়ালে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে।
আদালতে জমা পড়া চার্জশিটে কেন্দ্রীয় এজেন্সি দাবি করেছে, অনুব্রত এবং তাঁর কন্যা সুকন্যা আসল পুরস্কারপ্রাপকদের কাছ থেকে অনেকগুলি লটারির টিকিট কিনে নিয়েছিলেন। যে লটারিগুলিতে পুরস্কার উঠেছিল। ইডির দাবি, তদন্তে উঠে এসেছে, বোলপুরের লটারি বিক্রয়কেন্দ্র গাঙ্গুলি লটারি এজেন্সির সঙ্গে অনুব্রত বিশ্বজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে বোঝাপড়া করে নিয়েছিলেন। বোঝাপড়া অনুযায়ী, তার বিক্রিত টিকিটে কেউ পুরস্কার পেলেই লটারি বিক্রয়কেন্দ্র থেকে বিশ্বজ্যোতির মাধ্যমে সেই খবর পৌঁছে যেত অনুব্রতের কাছে। তার বদলে লটারি বিক্রয়কেন্দ্রকে কিছু কমিশন দেওয়া হত।
তার পর অনুব্রত তাঁরই কোনও বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে দিয়ে পুরস্কার বিজেতার সঙ্গে যোগাযোগ করাতেন। নগদ টাকার বিনিময়ে পুরস্কার ওঠা টিকিট কিনে নেওয়া হত। চার্জশিটে ইডির দাবি, এ ভাবেই অনুব্রত ও তাঁর কন্যা সুকন্যা ৫০ লক্ষ টাকার দু’টি এবং ১ কোটি টাকা পুরস্কারমূল্যের একটি লটারির টিকিট কিনে নিয়েছিলেন। এ ছাড়াও ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ সালের মধ্যে সুকন্যা ৭৫ লক্ষ ৫৩ হাজার এবং ৫৬ লক্ষ টাকা লটারিতে জিতেছেন বলে ইডির দাবি।
ইডির চার্জশিটে দাবি করা হয়েছে যে, অনুব্রত জেরায় জানিয়েছেন, তিনি এবং কন্যা সুকন্যা মোট ১০-১২ বার লটারি জিতেছেন। তার মধ্যে ২০১৮ সাল থেকে ৫-৬ বার লটারিতে পুরস্কার জিতেছে তাঁর পরিবার।
প্রসঙ্গত, ইডি লটারির দোকানের মালিক রামপ্রদীপ গঙ্গোপাধ্যায় ওরফে বাপি গঙ্গোপাধ্যায়কে জেরা করে জানতে পারে যে, অনুব্রতের ঘনিষ্ঠ বিশ্বজ্যোতিকে তিনি চেনেন বোলপুর পুরসভার একজন কাউন্সিলর হিসাবে। এ ছাড়াও অনুব্রতের গৃহপরিচারককেও এ ভাবেই তিনি চেনেন। তিনি নিজে তিন বার অনুব্রতকে পুরস্কার জেতানোর ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। তার মধ্যে দু’টি ছিল ৫০ লক্ষ পুরস্কারমূল্যের এবং একটি ১ কোটি টাকার। বাপি তদন্তকারীদের আরও জানিয়েছিলেন যে, বিশ্বজ্যোতিই লটারির আসল পুরস্কারপ্রাপকদের হাতে নগদ টাকা তুলে দিতেন, বিনিময়ে নিয়ে নিতেন পুরস্কার জেতা লটারির টিকিটটি।