তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ছবি: সংগৃহীত।
সিবিআইয়ের আচরণে তিনি ‘মর্মাহত’। বিশেষত তদন্তকারী অফিসারের ব্যবহারকে কার্যত ‘অমানবিক’ বলে অভিহিত করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।
মঙ্গলবার সকালে তাঁর বাড়িতে তলবি নোটিস পাঠানোয় অনুব্রত সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তকারী অফিসার সুশান্ত ভট্টাচার্যের ব্যবহারকে ‘অমানবিক’ বলে বর্ণনা করেছেন চিঠিতে। বুধবার সকালে ই-মেল আর আইনজীবী মারফত তাঁর গরহাজিরার কারণ এবং ওই মন্তব্য সংবলিত চিঠি পৌঁছয় সিবিআইয়ের কাছে।
কেন ‘মর্মাহত’? কেন ‘অমানবিক’? অনুব্রতের বক্তব্য, রবিবার তিনি অসুস্থ শরীরে প্রায় ২০০ কিলোমিটার রাস্তা পেরিয়ে কলকাতায় পৌঁছন। সোমবার এসএসকেএম (পিজি) হাসপাতালে স্বাস্থ্যপরীক্ষার পরে বোলপুরের বাড়িতে ফিরে মঙ্গলবার সকালে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার পরে আবার বুধবার তাঁকে ডাকা হয়েছে। এই ‘অমানবিক’ ব্যবহারের জন্যই তিনি ‘মর্মাহত’। তাঁকে পরীক্ষা করে স্থানীয় চিকিৎসকেরা দু’সপ্তাহ সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাই তিনি বুধবার জিজ্ঞাসাবাদে মুখোমুখি হতে পারছেন না।
চিঠিতে অনুব্রতের দাবি, তিনি আইনের শাসন মেনে চলেন। তিনি শান্তিপ্রিয় প্রবীণ নাগরিক। তিনি যে বেশ কয়েক বছর ধরে অসুস্থ, সেটা তদন্তকারীদের জানা। এর মধ্যে একটু সুস্থ হয়ে তিনি তদন্তকারীদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। দিয়েছিলেন চিকিৎসার রিপোর্টও। অনুব্রতের আরও দাবি, তিনি কোনও ভাবেই গরু পাচার কাণ্ডে জড়িত নন। একটু সুস্থ হয়েই তদন্তকারীদের মুখোমুখি হবেন বলে এ দিন জানান তিনি। তবে ঠিক কবে মুখোমুখি হবেন, চিঠিতে সেটা স্পষ্ট নয় বলে তদন্তকারীরা জানান।
সিবিআই সূত্রের খবর, অনুব্রতের এই জবাব এবং এসএসকেএম ও বোলপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসার রিপোর্ট দিল্লিতে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে প্রশ্ন করা হতে পারে বোলপুরের চিকিৎসকদের।
এক সিবিআই-কর্তা বলেন, ‘‘এসএসকেএমে চিকিৎসকেরা সোমবার অনুব্রতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, তাঁর বার্ধক্যজনিত রোগ রয়েছে। ওষুধেই তিনি সুস্থ থাকবেন। তার পরে রাতারাতি পরিস্থিতি বদলে গেল? মঙ্গলবার সকালে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন? বোলপুর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পূর্ণ বিশ্রামের পরামর্শ দিলেন? বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
সিবিআই সূত্রের দাবি, গরু পাচার মামলায় গত বছর মার্চ থেকে এ-পর্যন্ত অনুব্রতকে দশ বার তলব করা হয়েছে। তিনি শুধু জিজ্ঞাসাবাদের সময়েই অসুস্থতার রিপোর্ট পেশ করে যাচ্ছেন। অথচ গত দেড় বছরে নানা সামাজিক অনুষ্ঠান, প্রশাসনিক বৈঠক এবং নির্বাচনের প্রচারে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণের তথ্য আছে। সেই সব রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বৈঠক, নির্বাচনী প্রচারসভার ভিডিয়ো সংগ্রহ করা হয়েছে। অনুব্রতের ফেসবুক পেজ নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হয়।
তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, অনুব্রত যে গরু পাচারে জড়িত, সেই বিষয়ে নানা তথ্য তাঁদের হাতে পৌঁছেছে। গরু পাচার চক্রের মূল চক্রী বলে অভিযুক্ত এনামুল হক এবং অনুব্রতের দেহরক্ষী সেহগাল হোসেনের বয়ান নথিভুক্ত করা হয়েছে। অনুব্রতের আয়করের নথি ও সম্পত্তির হিসেব যাচাই করা হয়েছে। আয়ের সঙ্গে সম্পত্তির সামঞ্জস্যের ক্ষেত্রে নানা ধোঁয়াশা রয়েছে।
অনুব্রত যত বার অসুবিধায় পড়েছেন, তত বারই আয়োজন করেছেন মহাযজ্ঞের। শোনা যাচ্ছে, এ বারেও নাকি বাড়ির ছাদে প্যান্ডেল বাঁধা হচ্ছে। তবে সেটা যজ্ঞ করার জন্যই কি না, স্পষ্ট নয়। ফিসচুলার সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় অনুব্রত এ দিন তাঁর বাড়িতে বোলপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালের কর্ণধার মলয় পীঠের সঙ্গে কথা বলেন। মলয়বাবু বলেন, “ফিসচুলার সমস্যা বেড়ে যাওয়ায় কী করলে ভাল হয়, সেই বিষয়ে পরামর্শ করার জন্য উনি আমাকে ডেকেছিলেন। আমাদের হাসপাতালে ডাক্তার কেমন আছেন, হঠাৎ কোনও প্রয়োজন হলে কী ব্যবস্থা রয়েছে— সবই জানতে চান উনি। ওঁর সঙ্গে এটুকুই কথা হয়েছে।” সারা দিন বাড়িতেই ছিলেন অনুব্রত।