এই গাড়ি করেই অনুব্রতকে নিয়ে যাওয়া হয় সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে। নিজস্ব চিত্র ।
দিন দিন অনুব্রতের নিরাপত্তা বাড়াচ্ছে সিবিআই। বাড়ছে তাঁকে নিয়ে যাতায়াতের গাড়ির বহরও। এর পিছনে নিরাপত্তার কারণ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে অনুব্রতের অসুস্থতা।
গত ১১ অগস্ট বোলপুরে তাঁর নিচুপট্টির বাড়ি থেকে অনুব্রতকে গ্রেফতার করে সিবিআই। সে দিন তাঁকে প্রথমে আসানসোলের ইএসএল গেস্ট হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পর আসানসোলে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে। একটি সাদা সুইফট ডিজায়ার গাড়িতে চাপানো হয়েছিল তাঁকে। তাঁর সঙ্গে গাড়িতে ছিলেন দু’জন সিবিআই আধিকারিক। দু’টি আলাদা গাড়িতে জনা ছয়েক সিআরপিএফ জওয়ান ছিলেন নিরাপত্তার দায়িত্বে। সে দিন আদালত অনুব্রতকে হেফাজতে রাখার অনুমতি দেওয়ার পর, তাঁকে আসানসোল থেকে কলকাতায় নিয়ে আসতে বেশ ঝক্কি পোহাতে হয়েছিল সিবিআই আধিকারিকদের। দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক বার প্রবল যানজটে আটকে যায় কনভয়। প্রায় সাড়ে সাত ঘণ্টা লেগে গিয়েছিল অনুব্রতকে নিয়ে নিজাম প্যালেস পৌঁছতে।
এর পর গত শনিবার (২০ অগস্ট) আবার আসানসোলের বিশেষ আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল অনুব্রতকে। ছ’টি গাড়িতে নিরাপত্তার কারণে জনা কুড়ি সিআরপিএফ জওয়ানকে সঙ্গে নেওয়া হয়েছিল। অনুব্রতকে নিয়ে যাওয়া হয় অপেক্ষাকৃত বড় এবং আরামদায়ক ইনোভা গাড়িতে চাপিয়ে।
বুধবারের কনভয় আরও বড়। অনুব্রতকেও নেওয়া হয়েছে আরও একটু বেশি আরামদায়ক এমজি হেক্টর গাড়িতে। সঙ্গে সাতটি গাড়িতে রয়েছেন প্রায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান। আরও দুটি গাড়িতে রয়েছেন সিবিআই আধিকারিকরা। সিবিআই সূত্র বলছে, অনুব্রতের গাড়ি বদলানোর পিছনে রয়েছে তাঁর শরীর এবং স্বাস্থ্য। মেদবহুল, ভারী চেহারার অনুব্রতের হাঁটা, চলা, বসায় সমস্যা রয়েছে। নানা ধরনের অসুস্থতাও রয়েছে। অর্শ, ফিসচুলার সমস্যার জন্য নরম গদিওয়ালা গাড়িতে চাপতেন তিনি। সিবিআই-ও তাঁর সুবিধা-অসুবিধার কথা মাথায় রেখেই ব্যবস্থা করেছে আরামদায়ক গাড়ির।
সিবিআই সূত্রের খবর, অনুব্রতকে গ্রেফতারের দিন সঙ্গে থাকা আধিকারিকরা তাঁর ‘দাপট’-এর আঁচ বুঝতে পারেননি প্রথমে। কিন্তু আদালতে তাঁর পক্ষে-বিপক্ষে জমায়েত, হইচই, স্লোগান, পাল্টা স্লোগান ইত্যাদি দেখার পর আরও সতর্ক হয়েছে তদন্তকারী কেন্দ্রীয় সংস্থা। কোনও অপ্রীতিকর কিছু যাতে না ঘটে, তার জন্য অতিরিক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে রাজ্য পুলিশও। বুধবার সকাল থেকেই কোনও সাধারণ মানুষকে আদালত চত্বরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আদালতে যাঁদের কাজ আছে, এক মাত্র তাঁরাই উপযুক্ত প্রমাণ দিয়ে ঢুকতে পারছেন। আদালত কক্ষেও ঢুকতে দেওয়া হবে কেবল অনুব্রত এবং আইনজীবীদের।
ঘটনাচক্রে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে অনুব্রতের মামলার শুনানি চলছে যাঁর এজলাসে, সেই বিচারক রাজেশ চক্রবর্তীকে পাঠানো হুমকি চিঠি নিয়েও এখন শোরগোল চলছে। চিঠিতে লেখা হয়েছিল, অনুব্রতকে জামিন না দিলে বিচারককে সপরিবারে মাদক মামলায় ফাঁসানো হবে। বুধবার আদালতে বাড়তি সতর্কতার এটিও অন্যতম কারণ।