‘শঙ্কর’ চালকলটি ‘ভোলে ব্যোম’-এর ঠিক পাশেই। ফাইল ছবি
এ যেন ধান ভানতে শিবের গীতের খোঁজ।
‘শিবভক্ত’ অনুব্রত মণ্ডলের শিব নামাঙ্কিত চালকলগুলিতে এখন ধান ভানা ছাড়াও আর কী কাজ চলত, সরকারকে চাল বেচতে কোনও অনিয়ম হত কিনা, তারই খোঁজ করছে সিবিআই। আর সেটা করতে গিয়ে 'ভোলে ব্যোমে' হানা এবং চিঠি দেওয়া হয়েছে আর এক চালকল 'শিবশম্ভু'কে। শনিবার শিবের নামে আর একটি চালকল, ‘শঙ্কর রাইস মিলে’র হদিস মিলেছে বোলপুরে। অনুব্রত ‘নিয়ন্ত্রিত’ এই চালকলটিও সিবিআইয়ের নজরে আছে বলে সূত্রের খবর।
বিরোধীরা এ দিন দাবি করেছেন, খুঁজলে অনুব্রতের এমন চালকল অনেক বার হবে। তৃণমূলের তরফে পাল্টা বলা হয়েছে, সিবিআই চালকলে গাড়ি খুঁজে পাচ্ছে, অথচ এফআইআর থাকা সত্ত্বেও রাজ্য বিজেপির প্রথম সারির নেতাটিকে কেন খুঁজে পাচ্ছে না, সেটাই রহস্য।
‘শঙ্কর’ চালকলটি ‘ভোলে ব্যোম’-এর ঠিক পাশেই। কাগজেকলমে সেটির মালিক কে, তা জানা না গেলেও স্থানীয়দের অনেকের দাবি, জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলই সেটি ‘চালাতেন’। এলাকার বাসিন্দারা জানান, অনুব্রতের নামে না থাকলেও সেটিতেও তাঁর যোগাযোগ রয়েছে এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের যাতায়াত ছিল। তবে মাস দেড়-দু’য়েক ধরে চালকলটিও বন্ধ বলে জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। এ দিন সকালে ওই চালকলে গিয়ে একজন নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া কারও দেখা পাওয়া যায়নি। তবে ভিতরে বেশ কিছু কর্মীর উপস্থিতি আঁচ ৈকরা গিয়েছে।
এর মধ্যে সিবিআইয়ের তদন্তকারীদের দাবি, শুক্রবার ‘ভোলে ব্যোম’ চালকল থেকে প্রচুর নথি উদ্ধার হয়েছে। পাওয়া গিয়েছে একাধিক দামি গাড়ি। চালকলের নামে একাধিক ডাম্পার ও লরির হদিস পেয়েছেন তদন্তকারীরা। সেই সমস্ত লেনদেনই খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। দুর্গাপুরের গোপালমাঠের কাছে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি শো-রুম থেকে পাঁচটি ট্রাক কেনা হয়েছিল ‘ভোলে ব্যোম’ চালকলের নামে। শো-রুমের কর্ণধার পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বলেন, ‘‘আমাদের কাছ থেকে নিয়ম মেনে ৫টি ট্রাক কেনা হয়েছিল।’’ তিনি জানান, মোট দাম পড়েছিল প্রায় ১ কোটি ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রায় ৮৯ লক্ষ টাকা একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের সিউড়ি শাখা থেকে ‘আরটিজিএস’-এর মাধ্যমে মেটানো হয়েছিল। বাকি টাকা ‘ডাউন পেমেন্ট’ হিসাবে চালকল থেকে চেকে দেওয়া হয়েছিল।
সিবিআই সূত্রে খবর, ‘ব্যোম ভোলে’ চালকল থেকে পাওয়া নথি যাচাই করে দেখা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের খাদ্য দফতরের গণবণ্টন ব্যবস্থায় প্রায় কয়েক কোটি টাকার চাল অনুব্রতের চালকল থেকে কেনা হয়েছিল। রাজ্য সরকারের সঙ্গে ওই লেনদেন বেআইনিভাবে হয়েছিল কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। এই আবহে শঙ্কর চালকলও সিবিআই-নজরে রয়েছে বলে সূত্রের দাবি।
বোলপুরে জামবুনি যাওয়ার রাস্তায় ভুবনডাঙা সুকান্তপল্লি এলাকায় প্রায় ১০-১২ বিঘা জায়গার উপর রয়েছে ‘শিবশম্ভু’ চালকলটি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, চালকলটি বহু শরিকের মালিকাধীন থাকলেও বেশ কয়েক বছর আগে অনুব্রতর এক নিকটাত্মীয় সেটি ১২ বছরের জন্য লিজ নেন। তার পর থেকে ওই চালকলে অনুব্রত ঘনিষ্ঠদের আনাগোনা ছিল বলে স্থানীয়দের দাবি। সন্ধ্যার পর থেকে একাধিক দামি গাড়িরও চালকলে যাতায়াত ছিল বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। এ দিন চালকলের কোনও কর্মীই মুখ খুলতে চাননি। ‘ভোলে ব্যোম’ চালকলও এ দিন ছিল একেবারে সুনসান।
বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ এ দিন দাবি করেন, নামে-বেনামে অনেক চালকল আছে অনুব্রতের। এ দিন মেদিনীপুরে দিলীপ বলেন, ‘‘আমি শুনেছি ৬০টা চালকলে ওঁর শেয়ার আছে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও বলেন, ‘‘(অনুব্রত) সিবিআই হেফাজতে থাকলে আরও অনেক সম্পত্তির হদিস মিলবে।’’ তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেন, ‘‘একটা তদন্ত চলছে। এ নিয়ে বাইরে থেকে কোনও মন্তব্য করব না। তবে চালকলে ঢুকে গাড়ি খুঁজে পাচ্ছে আর নির্দিষ্ট মামলায় এফআইআর থাকা সত্বেও শুভেন্দু অধিকারীকে কেন খুঁজে পাচ্ছে না, তা বুঝতেপারছি না।’’
সহ প্রতিবেদন: শুভাশিস ঘটক