অনিতা বসু পাফ। — ফাইল ছবি।
ভারতে সাম্প্রতিক কোনও ঘটনার নাম করেননি তিনি। তবে ভারতের পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ উন্নয়নের জন্য অনুকূল নয় বলে উদ্বেগ গোপন করলেন না। বৃহস্পতিবার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনলাইন অনুষ্ঠানে এ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নানা আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন সুভাষচন্দ্র বসুর কন্যা অনিতা বসু পাফ। অর্থনীতির অধ্যাপিকা, অশীতিপর অনিতা জার্মানি থেকে বলেন, ‘‘সহিষ্ণুতার শর্তই হল ভিন্ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা। ধর্মে ধর্মে ঘৃণা ও বিভেদের চাষ করাটা ঝুঁকির। উদ্বেগের সঙ্গে দেখেছি, ভারতে সেই ঝুঁকির প্রবণতা বাড়ছে। আমার বাবার দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা ছিল।’’ এ দেশে ঢাকঢোল পিটিয়ে রামমন্দির-রাজনীতির পটভূমিতে সুভাষ-কন্যার মন্তব্য অনেকেই তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন।
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক তথা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত দাসের সঙ্গে কথা বলছিলেন অনিতা। তাঁর বাবার আদর্শ কেন আজকের ভারতের শাসক-শিবিরের থেকে আলাদা তা বিশদে ব্যাখ্যা করেন সুভাষ-কন্যা। তিনি বলেন, ‘‘ওঁর (সুভাষ) রাজনৈতিক গুরুরা ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন। বাবা ধার্মিক ছিলেন, কিন্তু ভিন্ধর্মীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বাবার চোখে ভাবীকালের ভারতের ধারণাটির মধ্যে ধর্মে ধর্মে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ছবিটাই আঁকা ছিল। তিনি শুধু এই ভাব প্রচার করতেন না, তাঁর আজ়াদ হিন্দ ফৌজে এর ফলিত প্রয়োগও ঘটিয়েছিলেন।’’
আজকের ভারতে সুভাষের আদর্শকে এক রকম বিকৃত বা আত্মসাতের চেষ্টা চলছে বলেও এ দিন অনিতা রাখঢাক না-করেই সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমি কিছুতেই মানতে পারি না যে, ইদানীং বাবা বা তাঁর মতো বরণীয়দের ভারতে এমন একটা ছাঁচে ফেলা হচ্ছে, যার সঙ্গে তাঁদের ছিটেফোঁটা সম্পর্ক নেই।’’
অনিতার কথায়, ‘‘কেউ কেউ বাবাকে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি মনে করতেন ভারত শুধু হিন্দুর নয়, মুসলিমের, শিখের, খ্রিস্টানের, বৌদ্ধের, জৈনের। বাবাকে ভারতের বর্তমান শাসকেরা ইদানীংকালে নানা সম্মান দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, দেখতে পাচ্ছি। আবার মেঠো লব্জে বলতে গেলে তাঁকে ‘হাইজ্যাক’ করার চেষ্টাও চলছে।’’
জওহরলাল নেহরুর বদলে সুভাষচন্দ্র দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলে কী কী হতে পারত, সেই প্রশ্নটিও করা হয়েছিল অনিতাকে। ধর্মনিরপেক্ষতার মতো বিষয়ে সুভাষ এবং নেহরুর রাজনৈতিক আদর্শের মিলের কথাই বলেন সুভাষ-কন্যা। তবে অনিতার সংযোজন, “এটা আমার ধারণা, দেশভাগ রুখতে না-পারলেও, বাবা থাকলে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আর একটু ভাল হত।”