বাড়িতে সালেমের জন্য অপেক্ষায় বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র।
উলুবেড়িয়া সংশোধনাগারে অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে গিয়ে কাউকেই চিনতে পারেননি হাওড়ার নিহত ছাত্রনেতা আনিস খানের বাবা সালেম খান। শুক্রবার সন্ধ্যায় টিআই প্যারেড সেরে বাড়ি ফিরে এমনটাই জানালেন তিনি। দুপুর ৩টে নাগাদ অভিযুক্তদের শনাক্ত করতে জেলে গিয়ে আনিসের মোবাইল ফোনটি জমা দেন তিনি। বাড়িতে তখন সালেম খানের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। ফিরে এসে তাঁদের সঙ্গেও কথা বলেন সালেম।
আনিস-কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া হোমগার্ড কাশীনাথ বেরা এবং সিভিক ভলান্টিয়ার প্রীতম ভট্টাচার্যকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে উলুবেড়িয়া আদালত। কলকাতা হাই কোর্টও আনিসের রহস্য-মৃত্যুর মামলা স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে গ্রহণ করে বৃহস্পতিবার টিআই প্যারেডের নির্দেশ দিয়েছে। সেই মতোই শুক্রবার সিট-এর সদস্যদের সঙ্গে উলুবেড়িয়া জেলে গিয়েছিলেন সালেম। ফিরে এসে তিনি জানান, জেলে যে দুই অভিযুক্তকে তাঁর সামনে দাঁড় করানো হয়েছিল, তাঁদের কাউকে তিনি চিনতে পারেননি। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁদের চিনতে পারব, তাঁদের এখানে দেখতে পাইনি।’’
বুধবারও ওই দুই ব্যক্তির গ্রেফতার হওয়ার দিন সালেম জানিয়েছিলেন, অভিযুক্তদের তিনি চিনতে পারছেন না। বৃহস্পতিবার কাশীনাথ আর প্রীতমকে উলুবেড়িয়া আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময় সিআইডি-র সদর দফতর ভবানী ভবন থেকে যখন বার করা হয়, সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে বলেছিলেন, তাঁরা ওসি-র নির্দেশ পালন করেছেন ঠিকই, কিন্তু ওই রাতে আনিস কী ভাবে মারা গেলেন, তা জানেন না। নিজেদের সম্পূর্ণ নির্দোষ বলেও দাবি করেন ওই দু’জন।
শুক্রবার বিকেলের পরেই আনিসের বাড়িতে পৌঁছে গিয়েছিলেন বিমান ও সূর্যকান্ত। সালেম টিআই প্যারেড সেরে ফিরলে তাঁর সঙ্গে কথা বলে পরিবারের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান তাঁরা। টিআই প্যারেডে সালেম যে অভিযুক্তদের চিনতে পারেননি, সে প্রসঙ্গে বিমান বলেন, ‘‘আসল মাথাদের ধরে নিয়ে আসুন, তবে না চিনতে পারবে! আসল মাথারা কোথায়? তাঁদের তো ধরতে হবে। এটাই তো পরিবারের বক্তব্য।’’ বিমান-সূর্যকান্তেরা বেরিয়ে গেলে ভাঙড়ের বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিও আসেন আনিসের বাড়িতে। তিনিও সালেম ও আনিসের দাদা সাবির খানের সঙ্গে কথা বলেন। আনিসের পরিবারকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন নওশাদ।
উলুবেড়িয়া জেলে বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলে অভিযুক্তদের শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ মেনে সেখানেই আনিসের মোবাইল ফোনটি জমা দেন সালেম। সূত্রের খবর, এর পর সেটি হায়দরাবাদে পাঠানো হবে। সেখানে সেন্ট্রাল ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে ওই মোবাইলটির পরীক্ষা করা হবে। মোবাইল পরীক্ষার সময় উপস্থিত থাকবেন ন্যাশনাল ইনফর্মেটিক সেন্টারের এক জন প্রতিনিধি।
প্রসঙ্গত, বাড়ির তিন তলার ছাদ থেকে আনিসের ফোন উদ্ধার হওয়া সত্ত্বেও সেটিকে প্রথমে পুলিশের হাতে তুলে দিতে রাজি হননি সালেম। তিনি অবশ্য জানিয়েছিলেন, আদালত যদি বলে, তবেই তাঁরা ফোনটি পুলিশের হাতে তুলে দেবেন। নয়তো সিবিআই-কেই দেবেন। এর পর হাই কোর্টের নির্দেশেই রাজ্যের তদন্তকারী দলের হাতে মোবাইল তুলে দিলেন সালেম।