রক্তাল্পতা যাচাই আদিবাসী পড়ুয়াদের

কাজটা শুরু হয়েছিল সাত জেলার একলব্য আবাসিক বিদ্যালয়ে। এ বার সব জেলাতেই অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে। ওই সব পড়ুয়ারা ‘সিক্‌লসেল অ্যানিমিয়া’ বা রক্তাল্পতায় ভুগছে কি না, ভুগলে কত শতাংশ পড়ুয়া ভুগছে, সেটা যাচাই করাই এই রক্তপরীক্ষার উদ্দেশ্য।

Advertisement

সোমনাথ চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:১৭
Share:

কাজটা শুরু হয়েছিল সাত জেলার একলব্য আবাসিক বিদ্যালয়ে। এ বার সব জেলাতেই অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের রক্ত পরীক্ষা করা হচ্ছে। ওই সব পড়ুয়ারা ‘সিক্‌লসেল অ্যানিমিয়া’ বা রক্তাল্পতায় ভুগছে কি না, ভুগলে কত শতাংশ পড়ুয়া ভুগছে, সেটা যাচাই করাই এই রক্তপরীক্ষার উদ্দেশ্য।

Advertisement

আদিবাসী কল্যাণ ও স্বাস্থ্য দফতর যৌথ ভাবে এই কাজ করছে। রক্তপরীক্ষার যন্ত্রপাতি এবং কিট কিনতে আদিবাসী কল্যাণ দফতরের তরফে ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতরকে ২০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে।

রক্তে লোহিতকণিকা কমে গেলে চিকিৎসাবিদ্যার পরিভাষায় সেটাকেই বলে ‘সিক্‌লসেল অ্যানিমিয়া’। স্বাস্থ্য ও আদিবাসী কল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, আদিবাসী ছেলেমেয়েরা বিয়ে করেন মূলত নিজেদের গোষ্ঠীর মধ্যেই। সেই সূত্রে ছোট বেলা থেকে তাঁদের মধ্যে সিক্‌লসেল অ্যানিমিয়ার প্রবণতা বেশি। এটা জানার পরেই স্কুলজীবনেই রক্তপরীক্ষার ব্যবস্থা হয়েছে, যাতে শৈশব থেকে এটা প্রতিরোধ করা যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই কাজ হচ্ছে বলে জানান আদিবাসী কল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।

Advertisement

নবান্ন সূত্রের খবর, সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রামে শবর ও লোধা পরিবারের কয়েক জনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর কারণ হিসেবে বলা হয় মূলত মদ্যপান এবং অপুষ্টির কথা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শুধু শবর, লোধাদের এলাকায় নয়, সব জেলারই আদিবাসী গ্রামগুলিতে প্রয়োজনীয় সরকারি পরিষেবা দিতে হবে।

চন্দ্রিমাদেবী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের সিক্‌লসেল অ্যানিমিয়া যাচাইয়ে রক্তপরীক্ষার কাজ অনেক আগেই শুরু হয়। সেই রিপোর্ট দেখার পরে সারা রাজ্যেরই আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের রক্ত পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’’

এক সরকারি কর্তা জানান, রাজ্যে সাতটি একলব্য বিদ্যালয় সাত জেলা— ঝাড়গ্রাম, জলপাইগুড়ি, দক্ষিণ দিনাজপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, আলিপুরদুয়ার ও বীরভূমে। সেই সব আবাসিক বিদ্য়ালয়ে মূলত আদিবাসী পড়ুয়ারা পড়াশোনা করে এবং থাকে। ‘পাইলট প্রজেক্ট’ হিসেবে ওই স্কুলগুলিতেই রক্তপরীক্ষার কাজ শুরু হয়। সেই রিপোর্ট দেখার পরে সরকার অনুভব করে, প্রতিটি জেলাতেই আদিবাসী পড়ুয়াদের রক্তাল্পতার সমস্যার মোকাবিলায় বিশেষ ভাবে রক্ত পরীক্ষা করা জরুরি।

রক্তপরীক্ষার কাজে জেলাশাসক এবং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সহযোগিতা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের এক কর্তা জানান, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এই কাজ করছেন। জেলাশাসক এবং সিএমওএইচ-রা ছাত্রছাত্রীদের দিনক্ষণ এবং কোথায় রক্ত পরীক্ষা করা হবে, তা জানিয়ে দিচ্ছেন। সেই সব দিনে চিকিৎসকেরা গিয়ে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করছেন। তার পরে স্বাস্থ্য দফতর একটি রিপোর্ট কার্ড দিচ্ছে। তাতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে, কোন পড়ুয়ার কী রকম খাওয়াদাওয়া করা দরকার, কী ওষুধের প্রয়োজন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement