প্রতীকী ছবি।
প্রথমে গুনিন, পরে সালিশি সভায় একাধিক মহিলাকে ‘ডাইনি’ বলে অপবাদ দেন মোড়ল, মাতব্বরেরা— এই অভিযোগ উঠেছে মালদহের আদিবাসী-প্রধান গ্রাম ইন্দ্রসোহেলে। সেই ঘটনার প্রতিবাদ করেন ওই মহিলাদের এক জনের ছেলে। অভিযোগ, তার পরেই মারধর করা হয় তাঁকে। আক্রান্ত প্রতিবাদী ছেলে গাজল গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। ঘটনার তদন্তের পাশাপাশি গ্রামবাসীদের মধ্যে সচেতনতার প্রচার শুরু করেছে পুলিশ।
গাজল ব্লক সদর থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরেই আলাল গ্রাম পঞ্চায়েতের ইন্দ্রসোহেল গ্রাম। বিদ্যুৎ, পানীয় জলের পরিষেবা পৌঁছেছে, তবে এখনও গ্রামের রাস্তাঘাট কাঁচা। ৯০ শতাংশ বাড়িই মাটির। বহু বাড়িতে শৌচাগারও নেই। শিক্ষার হার মাত্র ৩০ শতাংশ। গ্রাম থেকে হাই স্কুলের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার। বিদ্যুতের আলো গ্রামে পৌঁছলেও ‘কুসংস্কারের’ ছায়ায় আজও ডুবে রয়েছে ইন্দ্রসোহেল।
স্থানীয়দের দাবি, কিছু দিন ধরেই জ্বর, সর্দি, কাশির মতো উপসর্গে ওই গ্রামের বহু মানুষ ভুগছেন। অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে। তার পরেই দিন তিনেক আগে দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে এক ‘জানগুরুকে’ (গুনিন) গ্রামে ডেকে আনা হয়। গ্রামবাসীদের দাবি, জানগুরু গ্রামে এসে ১৫ জন মহিলাকে ‘ডাইনি’ বলে দাগিয়ে দেন। অভিযোগ, এর পরেই ওই মহিলাদের গ্রামছাড়া করার প্রস্তুতি শুরু হয়। এ দিন গ্রামে সালিশি সভা বসে। অভিযোগ, সেই সভাতেই মোড়ল, মাতব্বরেরাও ‘ডাইনি’ অপবাদ দিয়ে ওই মহিলাদের গ্রামছাড়া করার নিদান দেন। অভিযোগ, সেখানেই প্রহৃত ওই যুবকের মাকেও ‘ডাইনি’ অপবাদ দেওয়া হয়।
এ দিন সালিশি সভায় এ সবেরই প্রতিবাদ করেন ওই যুবক। অভিযোগ, তাঁকে বাঁশ, লাঠি দিয়ে মারধর করা হয়। ঘটনায় হইচই পড়ে যায় গ্রামে। গ্রামবাসীদের একাংশ তাঁকে উদ্ধার করে গাজল গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করেন। প্রহৃত যুবক বলেন, “গ্রামে অসুখ হচ্ছে। এর জন্য আমার মাকে দায়ী করা হয়েছে। ডাইনি বলে কিছু হয় না। সভায় সে কথা বলতেই আমার উপরে মোড়ল, মাতব্বরদের কয়েক জন চড়াও হন। থানায় সমস্ত কিছু জানানো হয়েছে।”
মোড়ল দাসু হাঁসদা বলেন, ‘‘আমার বলার কিছু নেই।’’ প্রধান তৃণমূলের লক্ষ্মী হালদার বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সদস্যের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নেব। কুসংস্কার বন্ধে সচেতনও করা হবে।’’
এই ঘটনার পরে পুলিশ, সিভিক কর্মীদের গ্রামে নিয়ে গিয়ে প্রচার চালানো হয়। পুলিশি সহায়তা কেন্দ্রও বসানো হয়েছে ওই গ্রামে। বিজ্ঞান মঞ্চের তরফেও প্রচার চালানো হবে বলে জানিয়েছেন ওই সংগঠনের সহ-সভাপতি সুনীলকুমার সরকার। মালদহের পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে।”