মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেহ গ্রামে ফেরে। তার পরেই এ দিন সকাল থেকে চড়িদা মোড়ে অবরোধ শুরু হয়। ‘মানভূম ভূমিজ ও মুন্ডা কল্যাণ সমিতি’র বাঘমুণ্ডি শাখা তাতে শামিল হয় বলে জানা গিয়েছে। একই সঙ্গে ছিলেন মৃতের পরিজনেরাও।
যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে ঝালদা-বাঘমুণ্ডি রাস্তা অবরোধ। নিজস্ব চিত্র
চোলাই তৈরি ও বিক্রির অভিযোগে ধৃত এক যুবকের অস্বাভাবিক মৃত্যুতে সরব হল বিরোধীরা। আবগারি দফতর তাঁকে গ্রেফতার করার পরে, মারধরে মৃত্যু হয়েছে শিকারি মুড়া (২৬) নামে পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির ওই যুবকের, সোশ্যাল মিডিয়ায় এই অভিযোগ করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী। ঘটনার তদন্তের দাবিতে বুধবার ঝালদা-বাঘমুণ্ডি রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয় কিছু বাসিন্দা। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়া বলেন, ‘‘শুভেন্দু সব কিছুতেই রাজনীতির রং দেখেন। প্রশাসন বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। আমরাও চাই, এ বিষয়ে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ তদন্ত হোক।’’ তবে পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস সেলভামুরুগন জানান, রাত পর্যন্ত এই ঘটনা নিয়ে কোনও অভিযোগ পুলিশের কাছে জমা পড়েনি।
পুরুলিয়া জেলা আবগারি দফতরের সুপার অলোক সাহার দাবি, ‘‘১৬ ফেব্রুয়ারি সকাল সওয়া ৮টা নাগাদ ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়। তাঁকে কোনও প্রকার মারধর করা হয়নি। সে দিনই পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হয়। তখন কোনও সমস্যা ছিল না। মৃত্যুর ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।’’ পুরুলিয়া মেডিক্যালে সূত্রে জানা যায়, ২০ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই যুবকের। হাসপাতালের সুপার সুকোমল বিষয়ী বলেন, ‘‘অসুস্থ অবস্থায় ওই অভিযুক্তকে ভর্তি করানো হয়েছিল। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পেলে, মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে শিকারিকে বাঘমুণ্ডির রবিডি গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে আবগারি বিভাগের ঝালদা চক্র। সে দিনই তাঁকে পুরুলিয়া আদালতে তোলা হলে, জেল হেফাজতে পাঠানো হয়। পুরুলিয়া সংশোধনাগারের সুপার স্বপনকুমার দাস জানান, সে রাতে ওই যুবককে সংশোধনাগারে আনা হয়। তখন দেখা হয়, তাঁর কাঁপুনি রয়েছে। পর দিন তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্তের জামিন মঞ্জুর হয়। তবে গোটা বিষয়টি নিয়ে এর থেকে বেশি কিছু তাঁর জানা নেই বলে দাবি করেছেন তিনি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেহ গ্রামে ফেরে। তার পরেই এ দিন সকাল থেকে চড়িদা মোড়ে অবরোধ শুরু হয়। ‘মানভূম ভূমিজ ও মুন্ডা কল্যাণ সমিতি’র বাঘমুণ্ডি শাখা তাতে শামিল হয় বলে জানা গিয়েছে। একই সঙ্গে ছিলেন মৃতের পরিজনেরাও। তাঁদের দাবি, ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত, ক্ষতিপূরণ ও পরিবারের এক জনের কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। জানা গিয়েছে, মৃত যুবকের মা ভাদু শিকারির অভিযোগ, ‘‘ছেলেকে মারতে-মারতে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তার পর থেকে আমাদের আর কিছু জানা ছিল না। রবিবার এক সিভিক ভলান্টিয়ার খবর দেন, আমার ছেলে মারা গিয়েছে! কী ভাবে মৃত্যু হল, জানতে চাই।’’ ‘মানভূম ভূমিজ ও মুন্ডা কল্যাণ সমিতি’র বাঘমুণ্ডি শাখার সম্পাদক সুরেশ সিং বাবুর এ নিয়ে অভিযোগ, ‘‘ওই যুবককে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা এই নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করছি।’’
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাওড়ার আনিস-কাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে শুভেন্দু দাবি করেন, বাঘমুণ্ডির এই ঘটনা সে পর্যায়েই পড়ে। একই ভাবে পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতোরও দাবি, ‘‘এই ঘটনার ব্যাপারে যা শুনেছি, তা অত্যন্ত অমানবিক। সম্পূর্ণ ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত দাবি করছি ।’’