উদ্ধার করা হচ্ছে হাতিটিকে। বাগরাকোটে। ছবি: দীপঙ্কর ঘটক
তখন শুক্রবার শেষ রাত। লিস রিভার চা বাগানের পাতিবাড়ি ডিভিশনের এলাকা জুড়ে শুধুই ধোঁয়া। তা হলে কি ঝরা পাতায় আগুন লেগে গেল? প্রথমে এমনটাই ভেবেছিলেন স্থানীয় চা শ্রমিকেরা। কিন্তু ভুল ভাঙল বুনো হাতিদের সমবেত গর্জনে। হাতিরা শুঁড় আর পা আছড়াচ্ছে, আর তাতেই ধুলোর কুণ্ডলী আকাশে পাক খাচ্ছে। এত রাগ কেন ওদের? কারণ বোঝা গেল শনিবার ভোরে। সেই দলের একটি হাতি দলছুট হয়ে জাতীয় সড়ক টপকে গিয়ে বাগরাকোট চা বাগান লাগোয়া পরিত্যক্ত কর্মী আবাসের সেপটিক ট্যাঙ্কে পড়ে গিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও বন দফতর সূত্রে পরে জানা যায়, দলের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হাতিটি শেষ রাতেই সম্ভবত সেপটিক ট্যাঙ্কটিতে পড়ে যায়। আশিস থাপা, রবিন লামার মতো স্থানীয়েরা জানান, সকাল থেকেই ওই ট্যাঙ্কটি থেকে তাঁরা জোর শব্দ শুনতে পাচ্ছিলেন। শেষে সাহসে ভর করে কয়েক জন এলাকাটি দেখতে যান। গিয়ে দেখা যায়, ওই সংকীর্ণ ট্যাঙ্কটিতে পড়ে রয়েছে হাতিটি। তার নড়াচড়ারও বিশেষ জায়গা নেই।
খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে আসেন মালবাজার বন্যপ্রাণ স্কোয়াড, মংপং রেঞ্জ এবং তারঘেরা রেঞ্জের বনকর্মীরা। বাগরাকোট সেনা ছাউনির জওয়ানেরা, মালবাজার থানার ওসি অসীম মজুমদার, এসএসবি জওয়ান— সকলের সামনেই হাতিটিকে উদ্ধারের কাজ শুরু হয়। এ দিকে জাতীয় সড়কের অন্য ধারে পাতিবাড়ি ডিভিশনে তখনও হাতির দল রাগে ফুঁসছে। পরে স্থানীয়েরা জানান, হাতিদের ভাবগতিক একেবারে ভাল লাগেনি তাঁদের। এলাকার চা বাগানের কাজও সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় চা শ্রমিক সোমা ওরাওঁ বলেন, “মনে হচ্ছিল, ট্যাঙ্কে পড়ে যাওয়া হাতিকে না ফেরাতে পারলে আমাদের ঘর, বাড়ি ওরা আস্ত রাখবে না।”
সকাল ন’টাতেই বড় যন্ত্র দিয়ে ট্যাঙ্কের দেওয়াল ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। দু’ঘণ্টার চেষ্টায় বেলা ১১টার একটু পরে দেওয়াল ভেঙে মাটি কেটে একটি র্যাম্প বানানো হয়। সেটা ধরে ধীরে ধীরে উপরে উঠে আসে হাতি। জাতীয় সড়ক পার করিয়ে দিয়ে মূল দলটির সঙ্গে মিশিয়েও দেওয়া হয় তাকে। স্বস্তি ফেরে বাগানে। বন দফতরের তরফে জানানো হয়, সেটি ছিল স্ত্রী হাতি, বয়স বছর সাতেক। হাতিটি সুস্থ অবস্থাতেই নিজের দলে ফিরেছে। সন্ধ্যার পরে দলটি মংপংয়ের জঙ্গলে ফিরেছে বলেও খবর।