South Dinajpur

চোখে ফিরছে স্বপ্ন, হাতের অপেক্ষায় রিয়াজ

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া কৃত্রিম হাতের প্রতিশ্রুতি পূরণ হতে চলেছে। ওই হাত তৈরির উপকরণ ইংল্যান্ড থেকে রাজ্যে এসে পৌঁছেছে। তাই তড়িঘড়ি ডাক পড়েছে রিয়াজের।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০২৪ ০৮:১১
Share:

মায়ের সঙ্গে রিয়াজ। — নিজস্ব চিত্র।

প্রায় দশ মাস আগের দুর্ঘটনা পুরো জীবনটাই ওলটপালট করে দিয়েছিল। উচ্চমাধ্যমিকে ভূগোল নিয়ে পড়ার ইচ্ছা থেকে নিজের রোজগারে বাইক কিনে চালানোর শখ— সব স্বপ্নই চুরমার হয়ে গিয়েছিল। হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পরে শিক্ষকেরাও জানিয়েছিলেন, একটি হাত না থাকায় প্র্যাক্টিকাল করতে সমস্যা হবে। তাই ভূগোল নিয়ে পড়া যাবে না। ইতিহাস নিয়ে পড়া শুরু করে নতুন জীবনের পথে নেমেছে রিয়াজ আফ্রিতি। এখন অপেক্ষা, ‘নতুন হাত’-এর।

Advertisement

গত জুনে বেঙ্গালুরু থেকে বাড়ি ফেরার পথে বালেশ্বর ট্রেন দুর্ঘটনায় বাঁ হাত হারায় যশবন্তপুর এক্সপ্রেসের জেনারেল কামরার যাত্রী ওই কিশোর। দিন কয়েক আগে দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুর সৈয়দপুর নয়াপাড়ার বাড়িতে বসে একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্র বলল, “কৃত্রিম হাত লাগিয়ে দেওয়া হলে সারাক্ষণ আর গায়ে চাদর চাপা দিয়ে ঘুরতে হবে না।”

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া কৃত্রিম হাতের প্রতিশ্রুতি পূরণ হতে চলেছে। ওই হাত তৈরির উপকরণ ইংল্যান্ড থেকে রাজ্যে এসে পৌঁছেছে। তাই তড়িঘড়ি ডাক পড়েছে রিয়াজের। মঙ্গলবার ছেলেকে এসএসকেএমের ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন (পিএমআর) বিভাগে ভর্তি করেছেন রুহুল আলম। ওই হাসপাতালেই কাঁধের নীচ থেকে হাত কেটে বাদ দেওয়া হয়েছিল রিয়াজের।

Advertisement

চোখে মুখে খুশির ছোঁয়া রিয়াজের। ওই কিশোরের কথায়, “হোক কৃত্রিম, তাও তো নিজের হাত।” সে জানায়, অনেক চেষ্টাতেও ক্ষতবিক্ষত হাত বাঁচাতে না পেরে চিকিৎসকেরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, কৃত্রিম হাতেও এখন অনেক কাজ করা যায়। আর সেই হাত লাগানোর প্রস্তুতির জন্য গত বছর কালীপুজোর আগে সে ভর্তি হয়েছিল এসএসকেএমের পিএমআর বিভাগে। কী ভাবে বাঁ কাঁধ নাড়াচাড়া করতে হবে, দীর্ঘ দিন ধরে সেই ব্যায়াম শেখানো হয়েছিল। কাঁধের নীচ থেকেই কৃত্রিম হাত লাগবে এ বার। হাসপাতালে রিয়াজের হাতের মাপ নিয়ে, বিদেশ থেকে আনা উপকরণ দিয়ে তৈরি হবে ওই কৃত্রিম অঙ্গ। তারপরে তা রিয়াজের শরীরে লাগানো হবে, জানান পিএমআরের বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিক।

রুহুল বিশেষ হোমগার্ডের চাকরি পেয়েছেন। চাষবাস করে কোনও মতে সংসার চলত আগে। পরিবারের কিছুটা সুরাহা করতে মাধ্যমিকের পরে রিয়াজ এক পড়শির মাধ্যমে বেঙ্গালুরুতে যায় ঠিকা শ্রমিকের কাজে। পাশের খবর পেয়ে ছোট ভাই রজব আলিকে নিয়ে গ্রামে ফিরছিল। তখনই রেল দুর্ঘটনা।

তপ্ত দুপুরেও গায়ে চাদরের মতো করে জড়ানো গামছা ঠিক করতে করতে রিয়াজ জানায়, আচমকা বিকট শব্দে চারিদিক কেঁপে উঠেছিল। পরক্ষণেই বুঝতে পারে, ট্রেন উল্টেছে। চাপা পড়েছে আরও অনেকে। অনেক ক্ষণ পরে কোনও মতে নিজেই ভাঙা জানলা দিয়ে বেরিয়ে আসে রিয়াজ। ক্ষতবিক্ষত হাত। কিন্তু তখন ভাইকে উদ্ধার করার চিন্তা।

মা রেজানা বিবি বলেন, “ছোট ছেলের থেকেই খবর পাই, ওদের ট্রেন উল্টে গিয়েছে। ভিডিয়ো কলে দেখি রিয়াজের হাতটা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তার পরেই ওদের বাবা লোকজন নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।” বালেশ্বর, কটকের হাসপাতাল ঘুরেও তেমন চিকিৎসা না মেলায় শেষে ছেলেকে নিয়ে সোজা পিজিতে চলে আসেন রুহুল। তাঁর কথায়, “তখনও হাতের চারটে আঙুল নড়ছিল। কিন্তু পিজিতে আসার পরে ডাক্তারেরা পরীক্ষা করে দেখেন হাতটি মৃত। জানান, তাড়াতাড়ি অস্ত্রোপচার করা গেলে, হাতটা বাঁচানো যেত।”

বাইক চালানোর শখ রয়েছে। কিন্তু উপায় নেই। তাই বন্ধুরাই বাইকে চাপিয়ে ঘুরতে নিয়ে যায় রিয়াজকে। পড়াশোনা শেষে ব্যবসা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে রিয়াজ বলেন, “কবে আবার দুটো হাত একসঙ্গে দেখব, তারই অপেক্ষা করছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement