প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঘোষিত কর্মসূচির জন্য রবিবার কলেজ স্ট্রিট থেকে ‘অমৃত কলস’ নিয়ে মিছিল বিজেপি নেতাদের। নিজস্ব চিত্র।
স্বাধীনতা দিবসে ‘মেরি মাটি, মেরি দেশ’ কর্মসূচির ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তারও আগে, ৩০ জুলাই তাঁর ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে সেই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। দিল্লিতে দু’দিনের সমাপ্তি অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে সোমবার। মঙ্গলবার সেই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার কথা মোদীর। কর্মসূচিতে যোগ দিতে রবিবারের মধ্যেই সব রাজ্যের মাটি নিয়ে বিজেপি কর্মীদের দিল্লি পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল। তেমনটা জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকও। বেশির ভাগ রাজ্য থেকে মাটি ইতিমধ্যেই পৌঁছেও গিয়েছে। তবে বাংলার মাটি কিছুটা দেরিতে পৌঁছবে দিল্লি। রবিবার বিকেলে বিশেষ ট্রেনে রাজ্যের হাজার খানেক বিজেপি কর্মী বাংলার মাটি নিয়ে রওনা দিয়েছেন। ট্রেন ঠিকঠাক চললে পৌঁছবেন সোমবার বিকেলে।
যা পরিকল্পনা তাতে দেশের বিভিন্ন জায়গার মাটি আর গাছ দিয়ে দিল্লিতে তৈরি হবে একটি নতুন বাগান। মোদীই তার নামকরণ করেছেন। ‘অমৃত বাটিকা’ নামের সেই বাগান তৈরি হবে নয়াদিল্লির জাকির হোসেন মার্গে ‘ন্যাশনাল ওয়ার মেমোরিয়াল’ চত্বরে। ইন্ডিয়া গেটের কাছে একটি নতুন পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলাই কি মোদীর উদ্দেশ্য? বিজেপি বলছে, প্রধানমন্ত্রী অতীতে যে ‘এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত’ স্লোগান দিয়েছেন তারই অঙ্গ হবে এই বাগান। গোটা ভারতের উপস্থিতি থাকবে একটি এলাকার মধ্যে। মোদীর ‘মেরা মাটি, মেরা দেশ’ কর্মসূচির অঙ্গ হিসাবে শহিদদের গ্রামে গ্রামে শিলালিপি স্থাপনও করা হয়েছে। মূলত সরকারি কর্মসূচি হলেও লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এই ‘মেরি মাটি, মেরা দেশ’ নিয়ে সব রাজ্যেই ঝাঁপিয়ে পড়ে বিজেপি। বাংলাতেও জেলায় জেলায় মাটি সংগ্রহ চলে। গ্রামের মাটির পাশাপাশি শহরাঞ্চলের বিশেষ জায়গার মাটিও সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়। সেই মতো দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দির থেকে এবং কলকাতার কালীঘাটের মাটি যাচ্ছে দিল্লি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পাশাপাশি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের বাড়ির মাটিও সংগ্রহ করেন। গোটা রাজ্যের মাটি গত বৃহস্পতিবারেই কলকাতায় এসে যায়। ঠিক ছিল অন্য রাজ্যের মতো বাংলা থেকে ২৭ অক্টোবর দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেবে মাটি ভরা ‘অমৃত কলস’। তবে বাংলায় লক্ষ্মীপুজোর আবহ থাকায় দিন পিছিয়ে তা রওনা দিল রবিবার।
রবিবার কলেজ স্ট্রিট থেকে ‘অমৃত কলস’ নিয়ে একটি মিছিল করে ধর্মতলায় আসে বিজেপি। সেখানে ছোট সভায় বক্তৃতা করেন সুকান্ত মজুমদার, দিলীপ ঘোষরা। কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও দেখা যায়নি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। এর পরে বিকেল ৪টে ৫৫ মিনিটে কলকাতা স্টেশন থেকে ছাড়া বিশেষ ট্রেনে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেয় বাংলার মাটি। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৭ তারিখের বদলে ২৯ তারিখ বাছার ক্ষেত্রে লক্ষ্মীপুজো ছাড়াও একটি কারণ ছিল এই ট্রেন। আগে থেকেই যাত্রীর চাপ থাকায় রেল একটি বিশেষ ট্রেন চালানোর ঘোষণা করে। সেই ট্রেনেই বিজেপি কর্মীদের দিল্লি যাওয়ার টিকিট কাটা হয়। ট্রেনটির দিল্লি পৌঁছানোর কথা সোমবার বিকেল ৩টে ২০ মিনিটে। দলের পক্ষে নয়াদিল্লি স্টেশনে বাংলার মাটি নিয়ে যাওয়া বিজেপি কর্মীদের স্বাগত জানানোর কথা বাঁকুড়ার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের। এর পরে প্রস্তাবিত অমৃত বাটিকায় যাবে মাটি। রাজ্য থেকে যাওয়া বিজেপি কর্মীরা কর্মসূচি শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে বিশেষ ট্রেনে নয়া দিল্লি থেকে রওনা দেবেন। ট্রেনটি কলকাতায় আসবে শুক্রবার মধ্যরাতে।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’দিনের কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন থাকবে দিল্লিতে। মোদী ছাড়াও হাজির থাকবেন বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। যা পরিকল্পনা তাতে দেশের ৩৬টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৭৬৬ জেলার ২০ হাজার প্রতিনিধি যোগ দেবেন। বাংলা-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে পৌঁছবে আট হাজারের বেশি ‘অমৃত কলস’।