অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ‘পশ্চিমবঙ্গ জনসংবাদ র্যালি’র ২৪ ঘণ্টা আগেই সে বিষয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগাম আক্রমণ শানিয়ে রাখল বাম ও কংগ্রেসও। মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, অনেক টাকা খরচ করে যাঁরা ‘ভার্চুয়াল ভাষণ’ দিচ্ছেন, তাঁরা বাস্তবের অবস্থা দেখতে কত বার বেরিয়েছেন? করোনা, লকডাউন এবং ‘আমপান’-এর জেরে তৈরি হওয়া বাস্তব পরিস্থিতি ছেড়ে ভোটের কথা ভেবে শাহেরা অনলাইন ময়দানে নেমে পড়েছেন বলে অভিযোগ বাম ও কংগ্রেসেরও।
বিপুল খরচের প্রশ্ন উড়িয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য পাল্টা দাবি করেছেন, করোনা এবং ‘আমপান’ সঙ্কটের প্রেক্ষিতে এ রাজ্য নিয়ে যেমন চর্চা হচ্ছে, তার পাশাপাশিই গণতান্ত্রিক অধিকারের উপরে আঘাত এবং রাজনৈতিক হিংসাও এখানে অব্যাহত। সেই প্রেক্ষাপটে আজ, মঙ্গলবার শাহের সভা পরিবর্তনের দিশা দেখাবে।
পশ্চিমবঙ্গের জনতার উদ্দেশে আজ বেলা ১১টায় দিল্লি থেকে অনলাইনে ভাষণ দেওয়ার কথা শাহের। তার আগে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ওরা (বিজেপি) এক লক্ষ লোককে নিয়ে ভার্চুয়াল করে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে। আমরা ২০ জন বিধায়ককে নিয়ে ভিডিয়ো কনফারেন্স করেছি। সেটা আমরা প্রায়ই করি। দু’টোর মধ্যে ফারাক রয়েছে। তিন মাসের মধ্যে যাঁরা ভার্চুয়ালের মাধ্যমে ভাষণ দিচ্ছেন, তাঁরা ক’বার বেরিয়েছেন?’’ আগামী ২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবসের বাৎসরিক সমাবেশও কি ভার্চুয়াল পদ্ধতিতেই হবে? মমতার জবাব, ‘‘আমার দল একটি সম্মিলিত পরিবার। সেখানে আলোচনা না করে কোনও মন্তব্য করতে পারব না। পরে এই সিদ্ধান্ত হবে। বিজেপি যা করতে পারে, আমরা তা পারি না। এটা খুব খরচসাপেক্ষ। বিজেপি সেই খরচ করতে পারে, আমরা পারি না।’’
আরও পড়ুন: লাদাখ নিয়ে জবাব সংসদেই: প্রতিরক্ষামন্ত্রী
দিলীপবাবুর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর হয়তো জানা নেই ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবের মাধ্যমে সভা করতে বিরাট খরচ হয় না। আমাদের কর্মীরা বুদ্ধির জোরে অনলাইন সভায় ব্যাপক সাফল্য পাচ্ছেন। প্রত্যেক পরিবারকে আবেদন করব, আপনারা ওই সভা শুনুন। কারণ, যে সব সমস্যা ৬০-৭০ বছরে কেউ সমাধান করতে পারেনি, শাহ সেগুলি ৬-৭ মাসে চুটকি বাজিয়ে সমাধান করে ফেলেছেন!’’ শাহের অনলাইন সভা আজ বিজেপির রাজ্য দফতর থেকে সম্প্রচার করা হবে প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে। দলীয় সূত্রের খবর, সংগঠনের জোরে উত্তরবঙ্গে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ মানুষের ওই সভা শোনার বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা-সহ একাধিক দাবি সংবলিত পোস্টার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে আজ শাহের অনলাইন সভা চলাকালীনই রাজ্যের নানা জায়গায় বিক্ষোভে নামার ডাক দিয়েছে সিপিএম। দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের দাবি, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকেরা কোনও সাহায্য পেলেন না, কিন্তু শাহ তাঁদের ধৈর্যের অভাব দেখতে পেলেন! ‘ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি’ কোনও সমাধান নয়। বাস্তবে মানুষের সামনে দাঁড়ানোর সাহস ওঁদের নেই।’’ বিজেপি এবং তৃণমূলের ‘মিথ্যাচার’-এর অভিযোগ তোলার পাশাপাশি সেলিম বলেছেন, ‘‘হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে শারীরিক দূরত্ব রেখে কাল (মঙ্গলবার) পথে নামব।’’
লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী এ দিন ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘করোনা এবং লকডাউনের মধ্যে অনলাইন সভার জন্য বিজেপি মোবাইল সেটও বিলি করছে। মুখ্যমন্ত্রীও ভোটের কথা ভেবে তাঁর দলকে নেমে পড়তে বলেছেন। এই সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে দু’দলের কাছে ভোটই প্রথম কথা।’’