শুক্রবার বীরভূমে আসছেন অমিত শাহ। ফাইল চিত্র।
চৈত্র সংক্রান্তিতে বীরভূম আসছেন অমিত শাহ। গরু পাচার মামলায় অনুব্রত মণ্ডল গ্রেফতার হওয়ার পর এই প্রথম বীরভূমে পা রাখছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তা ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বাড়তি উন্মাদনা রয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে শুক্রবার সিউড়ির বেণীমাধব মাঠে তাঁর সভা করার কথা। তার আগে চলছে শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই বাংলা সফরে এসে বীরভূমে আসার কথা ছিল শাহের। শেষমেশ তা হয়নি। ফেব্রুয়ারি মাসেও শাহ আসতে পারেন বলে বিজেপি সূত্রে খবর মিলেছিল। কিন্তু সেই সূচিও বাতিল হয়ে যায় কোনও কারণে। গেরুয়া শিবিরের দাবি, এ বার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসছেনই। শাহের সম্ভাব্য সফরসূচি ঘিরে সাজ সাজ রব জেলা সদরে। সভামঞ্চ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সভা সংলগ্ন এলাকা ছেয়ে গিয়ে গিয়েছে দলীয় পতাকা, কাটআউট, পোস্টারে। সব ব্যবস্থাপনা খতিয়ে দেখতে বৃহস্পতিবার কড়া রোদের মধ্যে দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা গেল রাজ্য ও জেলা নেতাদের।
বিজেপি সূত্রে খবর, শুক্রবার ১টা নাগাদ কপ্টারে সিউড়িতে নামবেন শাহ। সেখান থেকে সিউড়ি সার্কিট হাউসে গিয়ে খাওয়াদাওয়া সারবেন। তার পর অম্বেডকর জয়ন্তী উপলক্ষে সিউড়ির জেলা তথ্য সংস্কৃতি দফতরে এসে সিধো কানহুর মূর্তি এবং বি আর অম্বেডকরের মূর্তিতে মাল্যদান করবেন। এর পরেই বেণীমাধব মাঠে শাহের সভা করার কথা। সভা শেষে সিউড়ি সড়ক ধরে বিজেপির নতুন কার্যালয়ে পৌঁছবেন শাহ। ওই কার্যালয় উদ্বোধনের পর বিজেপির জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর বৈঠক করার কথাও রয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা জানান, জেলার মণ্ডল সভাপতিদের সঙ্গেও বৈঠক করতে পারেন শাহ।
রাজ্য-রাজনীতির সাম্প্রতিক সময়ের প্রেক্ষাপটে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে শাহের বীরভূম সফর আলাদা ভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। কারণ বিভিন্ন মামলায় ইডি ও সিবিআইয়ের বিশেষ নজরে রয়েছে বীরভূম। এই জেলার তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত গরু পাচার মামলায় এখনও তিহাড় জেলে বন্দি। অনুব্রত-ঘনিষ্ঠেরা প্রায়ই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ডাক পাচ্ছেন। বীরভূমে শাসক দলের ন’জনের কোর কমিটি তৈরি করে দিয়েছেন স্বয়ং তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতাও জেলার সংগঠন নিজে দেখার কথা বলেছেন। তার পরেও দলনেত্রীর তৈরি কমিটিতে সমন্বয়ের অভাব দিন দিন প্রকট হচ্ছে। প্রকাশ্যে আসছে ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’। শুধু তা-ই নয়, অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার পর বেশ কয়েক বার বীরভূমে এসে সভা করে গিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারেরা। এ বার সেই বীরভূমে দাঁড়িয়ে শাহ কী বার্তা দেন, সেই দিকেই তাকিয়ে জেলা নেতৃত্ব এবং কর্মী-সমর্থকেরা।
যদিও বিজেপির একাংশের মত, শাহের লক্ষ্য পঞ্চায়েত ভোট নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নজরে রয়েছে লোকসভা ভোট। দলের এক রাজ্য নেতা বলেন, ‘‘২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে নজরে রেখে এখন থেকেই ঝাঁপাতে চাইছে দল। গত লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়া ১৪৪টি আসনকে পাখির চোখ করা হয়েছে। সেই তালিকায় রয়েছে বীরভূম লোকসভা আসনটিও। প্রতিটিতে হেভিওয়েটরা সভা করবেন। অমিত শাহের বীরভূম সফর দিয়েই তার সূচনা হচ্ছে।’’ জেলা সভাপতি ধ্রুবও বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে বৈঠকে আসন্ন পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচনের গতিপথ বাতলে দিতে পারেন অমিতজি। তা ছাড়া, গত বিধানসভা নির্বাচনের ধাক্কা সামলে উঠতে কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করাও জরুরি।’’
শাহের সফর নিয়ে জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য তথা জেলা মুখপাত্র বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘অমিত শাহ আসছেন যে দলের প্রোগ্রামে, বীরভূম জেলায় সেই দলের পায়ের তলায় কোনও মাটি নেই। শুধুমাত্র হাওয়া গরম করতেই অমিত শাহ আসছেন। বিজেপি নেতাদের মুখে যে ভাবে হুমকির কথা শোনা যাচ্ছে, তাতে উনি আসার পরে একটু সাহস পেয়ে ওঁরা ঝগড়াঝাটি ঝামলা আরও বেশি করে করবে। মানুষ বিজেপিকে ভোট দেবে না। এই হাওয়া গরম করাই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য।’’