অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
গত ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে বাংলায় প্রচারে এসে মেরুকরণের অঙ্কেই জোর দিয়েছিলেন বিজেপি নেতারা। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তা আরও শানিত করেছিলেন তাঁরা। আর একটি লোকসভা ভোটের আগে বাংলায় এসে বুধবার ধর্মতলার সভা থেকে সেই পুরনো অস্ত্রেই শান দিতে চাইলেন অমিত শাহ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষণে জায়গা পেল সুরাবর্দি খান থেকে গোপাল মুখোপাধ্যায় (গোপাল পাঁঠা), সিএএ, অনুপ্রবেশ-সহ নানা শব্দবন্ধ। যা থেকে আরও এক বার স্পষ্ট যে, বিজেপি ‘ধ্রুপদী কৌশল’ থেকে কোনও ভাবেই সরবে না। যা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ করে তৃণমূল বলেছে, ‘ভুল চিরকুট’ নিয়ে শাহ ধর্মতলায় চলে এসেছিলেন।
বুধবার ধর্মতলার ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনের সভা থেকে শাহ বক্তৃতা শুরুই করেন সুরাবর্দি, গোপাল পাঁঠার প্রসঙ্গ তুলে। দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই ময়দানেই সুরাবুর্দি খান ডায়রেক্ট অ্যাকশন প্ল্যানের কথা বলেছিলেন। আবার এই ময়দানেই সুরাবর্দির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন গোপাল মুখোপাধ্যায়। যে কারণে পশ্চিমবঙ্গ আজ ভারতের মধ্যে রয়েছে।’’
তবে অনেকে বলছেন, মেরুকরণের রাজনীতি করা ছাড়া বিজেপির আর কোনও উপায়ও নেই। কারণ, সাম্প্রতিক সমস্ত নির্বাচনের ফলাফলের বিশ্লেষণ বলছে, সংখ্যালঘু ভোট একচেটিয়া ভাবে টেনে নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে বিজেপিকে মেরুকরণের রাজনীতির উপর জোর দিতেই হবে।
বুধবারের সভা থেকে শাহ আবার অনুপ্রবেশ নিয়ে সরব হন তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘‘বাংলায় বেলাগাম অনুপ্রবেশ চলছে। অসমে বিজেপির সরকার রয়েছে। সেখানে অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আর বাংলায় কী হচ্ছে? সমাজমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ থেকে যারা আসছে, তাদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড করে দেওয়া হবে। কিন্তু রাজ্য পুলিশ চুপ করে বসে রয়েছে।’’ যা নিয়ে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘অনুপ্রবেশ হলে তা সীমান্ত দিয়ে হয়। সীমান্ত সামলায় অমিত শাহের বিএসএফ। তা হলে তো ওঁর আগে নাকখত দেওয়া উচিত!’’
সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় আরও এক বার নাগরিকত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) বলবৎ করার কথা বলেছেন শাহ। বুধবারের সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘সিএএ দেশের আইন। তা বলবৎ হবেই। তাকে কেউ রুখতে পারবে না।’’ সেই সঙ্গে শাহ আরও বলেন, ‘‘সিএএ চালু হলে বাংলাদেশ থেকে এ পারে আসা কোনও হিন্দুর কোনও সমস্যা হবে না। এই মাটিতে আপনার-আমার যতটা অধিকার, তাঁদেরও ততটাই অধিকার।’’ প্রসঙ্গত, মতুয়া অধ্যুষিত অঞ্চলে সিএএ ছিল গত লোকসভা ভোটের মূল ইস্যু। তা কেন বলবৎ হচ্ছে না তা নিয়ে বনগাঁ, রানাঘাট এলাকায় ক্ষোভও রয়েছে। যা নিয়ে মাঝে এক প্রকার বিদ্রোহ করেছিলেন বনগাঁর সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। তিনি অবশ্য এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
তবে পাশাপাশিই বিজেপির দুই প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং রাহুল সিংহ বাংলার সংখ্যালঘুদের বার্তা দিতে চেয়েছেন। দিলীপ বলেন, ‘‘গত বার মুসলিমরা ভোট দেননি। কিন্তু তা-ও বিজেপি (সারা দেশে) ৩০৩টি আসন পেয়েছিল। সরকারে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই সংখ্যালঘুদের জন্যও প্রকল্প করেছেন। তাঁরা তা পেয়েছেন। বাংলায় সে সব আটকে দিয়েছে তৃণমূল। মোদীর আগে কেউ সংখ্যালঘুদের কানাকড়িও দেয়নি। সবাই ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ছলচাতুরি করেছে। তাই আপনাদেরও ভাবতে হবে।’’ রাহুলও বোঝাতে চান, সংখ্যালঘুদের ভোটের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। যারা এই কাজ করছে, তাদের চিহ্নিত করতে হবে।
তবে সামগ্রিক ভাবে মেরুকরণের একাধিক বিষয়কেই ভাষণের বর্শাফলক করেছিলেন শাহ। পাল্টা তৃণমূলের তরফে কুণাল বলেন, ‘‘এই সব কথাই অমিত শাহ-সহ বিজেপি নেতারা ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের সময় ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করতে করতে বলতেন। আমার মনে হয়, সেই পুরনো চিরকুট পকেটে নিয়ে তিনি এসেছিলেন। তাই ফের ভাঙা রেকর্ড বাজিয়ে গিয়েছেন।’’