ঝুঁকি: বোলপুর হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করাতে ভিড়। বুধবার। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
সর্দি-কাশি, জ্বর, পেটে ব্যাথার মতো নানা সমস্যায় এখনও গাঁ-গঞ্জের মানুষ স্থানীয় ডাক্তারের উপরে ভরসা করেন। করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এখন সেই ডিগ্রিহীন চিকিৎসকদের ঠিক ভাবে কাজে লাগানোর ভাবনা নিল রাজ্য প্রশাসন।
বুধবারই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বিভিন্ন জেলার জেলাশাসক ও সিএমওএইচদের করোনা বিষয়ক বৈঠক হয়। সেখানে ওই প্রসঙ্গ উঠে। বীরভূম স্বাস্থ্য জেলার সিএমওএইচ হিমাদ্রি আড়ি জানাচ্ছেন, স্থানীয় মানুষকে কোভিড নিয়ে সচেতন করতে, ইমার্জেন্সি সার্ভিস দিতে এবং কোভিড আক্রান্তকে ঠিক সময়ে হাসপাতালে পাঠাতে গ্রামীণ ডিগ্রিহীন চিকিৎসকদের কাজে লাগানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দ্রুত তাঁদের নিয়ে ভার্চুয়াল ওরিয়েন্টেশন ট্রেনিংও হবে।
গত বছরে কোভিড সংক্রমণ বাড়ার সময়ও একই ভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা হয়েছিল। সে বার বলা হয়েছিল করোনা উপসর্গ রয়েছে বা বাইরে থেকে এসে চিকিৎসার জন্য তাঁদের কাছে এসেছেন, এমন রোগীর চিকিৎসার ঝুঁকি না নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে জানাতে। প্রায় ৪০০ জন ডিগ্রিহীন গ্রামীণ চিকিৎসককে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছিল। এবারের প্রেক্ষিতটা আরও ভয়াবহ। জেলায় হু হু করে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। তার পরেও করোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব দেখা যাচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে কারও কোভিডের লক্ষণ দেখা গেলেও অনেকেই টেস্ট কারাচ্ছেন না বা চিকিৎসার আওতায় আসছেন না। ফলে জটিলতা বাড়ছে। বা এমন সময়ে চিকিৎসার আওতায় আসছেন ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। যেহেতু শারীরিক অসুস্থতায় বহু ক্ষেত্রেই মানুষ গ্রামীণ চিকিৎসকদের কাছে যান। এমন কোনও রোগী এলে তাঁরা এই ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করেন এবং জরুরি পরিষেবাটুকু দেন এবং সময়ে আক্রান্তকে সরকারি হাসপাতালে পাঠান, সেটা নিশ্চিত করতে চাওয়া হয়েছে।
এ দিকে, ক্রমবর্ধমান রোগীর সংখ্যা দেখে সিউড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালকে ৪০০ বেডের কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করার কাজ শুরু হয়েছে। প্রশাসনের তরফে অক্সিজেনের জোগান নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয়েছে। পাশাপাশি উপসর্গহীন ও মৃদু উপসর্গযুক্ত রোগীদের আইসোলেট করতে সিউড়ি শহরে জেলা ক্রীড়া সংস্থার ইন্ডোর স্টেডিয়ামকে উদ্যোগী হল প্রশাসন।
সেটা করতে হলে পরিকাঠামো গত কী কী প্রয়োজন সেটা খতিয়ে দেখতে বুধবারই ডেপুটি সিএমওএইচ, মহকুমাশাসক, ডেপুটি পুলিশ সুপার বিডিও সহ প্রশাসনের কর্তারা ইন্ডোর স্টেডিয়াম পরিদর্শন করেন। জানা গিয়েছে যে পরিকাঠামো ও পর্যাপ্ত শৌচাগার রয়েছে তাতে ১০০-১২০ বেডের সেফ হোম করা সেখানে সম্ভব বলেই মনে করছেন কর্তারা। প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন, আক্রান্তদের অনেকের বাড়িতেই নিজেকে সরিয়ে রাখার উপায় নেই। আলাদা শৌচাগার দূরের কথা আলাদা ঘরটুকুও নেই। ফলে সহজেই ওই আক্রান্তের থেকে ভাইরাস অন্যের শরীরে ছড়াচ্ছে। সেটা রুখতে এবং প্রয়োজন হলে যাতে দ্রুত আক্রান্তদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়, এই দুটি বিষয় মাথায় রেখে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা।