গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
আরজি করের আন্দোলনকে সামনে রেখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগের দাবি তুলেছে বিরোধীরা। রাস্তায় রাস্তায় ধর্নায়, অবস্থানে, মিছিলে প্রশ্ন উঠেছে তাঁর প্রশাসনের বিরুদ্ধেও। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সমালোচনার পরোয়া না করে রাজ্যের বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বললেন, ‘‘ধর্ষণের বিরুদ্ধে সমাজের এই আলোড়ন, এই জাগরণ ভাল বিষয়। এমনটাই হওয়া উচিত। আমি ওই আন্দোলনকে সমর্থন করি। আমিও বাকিদের মতোই সিবিআইয়ের কাছে ওই ঘটনার সুবিচার চাই।’’
মঙ্গলবার বিধানসভায় বিশেষ অধিবেশন ডেকে পাশ করানো হয় ধর্ষণ বিরোধী ‘অপরাজিতা মহিলা এবং শিশু বিল ২০২৪’। সেই বিল প্রসঙ্গে মমতা প্রথমেই বলেন, ‘‘দেশের প্রধানমন্ত্রী যা পারেননি আমরা তা পারলাম।’’ আরজি করের ঘটনার আবহে দেশে ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইনের দাবি উঠেছিল। মমতা তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘‘আজকের দিনটা ঐতিহাসিক। ১৯৮১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। মেয়েদের অধিকার সুরক্ষিত করার জন্য রাষ্ট্রসংঘের নারী বৈষম্য বিরোধী কমিটি হয়।’’ পরে মমতা বলেন, ‘‘এই বিলও একটা ইতিহাস তৈরি করল! দেশের প্রধানমন্ত্রী যা পারেননি। আমরা পারলাম। প্রধানমন্ত্রী দেশের লজ্জা! উনি মেয়েদের রক্ষা করতে পারেননি। আমরা সেটা করে দেখালাম।’’
মঙ্গলবার অপরাজিতা বিল পাশ হওয়ার আগে আলোচনা পর্বে মমতার সরকারের সমালোচনায় মুখর হন বিধানসভার প্রধান বিরোধী বিজেপির বিধায়কেরা। বিধানসভার মধ্যেই তাঁরা ‘‘দফা এক, দাবি এক, মমতার পদত্যাগ’’ স্লোগান তোলেন। পাল্টা জবাব দেন মমতাও। বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পদত্যাগের দাবি তোলেন। বিরোধীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘‘গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ, অসম, মণিপুরের নির্যাতনের বিচার হয়নি কেন? আগে নরেন্দ্র মোদীর পদত্যাগ চাই। তার পরে বাকি কথা।’’
মঙ্গলবার অপরাজিতা বিল পাশ হওয়া নিয়ে দু’ঘণ্টার বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছিল। সেই অধিবেশন উত্তাল হয়ে ওঠে বিধানসভায় শাসক বনাম বিরোধীদের বাগযুদ্ধে। বিলের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি বিরোধী এবং শাসকের বক্তব্য শোনার জন্য নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ করা হয়েছিল। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির দুই মহিলা বিধায়ক এবং বিরোধী দলনেতাকে তাঁদের বক্তব্য জানানোর জন্য সময় দেওয়া হয় এক ঘণ্টা। বাকি এক ঘণ্টা রাখা হয় মুখ্যমন্ত্রী, শাসকদলের এক জন মন্ত্রী এবং বিল পাশ সংক্রান্ত কার্যনির্বাহের জন্য। কিন্তু বিরোধীদের বলার পর যখন মুখ্যমন্ত্রী কথা বলতে ওঠেন, তখন আবার বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বিজেপির বিধায়কেরা।
বিল নিয়ে কথা বলতে উঠে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী একের পর এক আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে। তাঁর আমলে হওয়া ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনের খবরের প্রিন্টআউট জমা দিয়ে জবাব চান। শুভেন্দুর বক্তৃতার পরে বলতে উঠে মুখ্যমন্ত্রী মমতা প্রথমেই বলেন, ‘‘আমি কারও জ্ঞান শুনব না।’’ পরে অবশ্য বিরোধী দলনেতার তোলা প্রশ্নের পরিসংখ্যান-সহ জবাবও দেন। কামদুনির ঘটনায় দ্রুত চার্জশিট গঠন থেকে শুরু করে রাজ্যে ফাস্ট ট্র্যাক আদালত এবং সম্পূর্ণ মহিলা চালিত থানার উল্লেখ করে মমতা বলেন, ধর্ষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন হওয়াই উচিত। ধর্ষণের মতো ঘটনার বিরুদ্ধে সমাজের এই যে আলোড়ন এবং জাগরণ তাতে তাঁর পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। এর আগে দিল্লিতে যখন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল, তখন তিনিও তার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। মমতা বলেন, ‘‘আরজি করের ঘটনাতেও তিনি আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আছেন এবং তাঁদের মতোই সিবিআইয়ের কাছে বিচার চাইছেন।
মমতা বলেন, ‘‘আমাদের পুলিশ তদন্ত করছিল। যত দিন তদন্ত কলকাতা পুলিশের হাতে ছিল, আমি তদন্তের দিকে নজর রেখেছি। ফাঁসির দাবি তুলেছি। ১২ তারিখ নির্যাতিতার বাড়িতে যাই। যা যা তদন্তে উঠে এসেছিল, সেই সব তাঁর মা-বাবার কাছে পাঠানো হয়। আমি ওঁদের কাছে রবিবার পর্যন্ত সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু তার আগেই তদন্তভার সিবিআইকে দিল আদালত। এখন আমরাও সিবিআইয়ের কাছেই এর বিচার চাই।’’
মমতার বক্তব্যের পরে মঙ্গলবার ধ্বনিভোটে পাশ হয়ে যায় অপরাজিতা বিল। অপরাজিতা বিলে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে তা দ্রুত আইনে পরিণত করে কার্যকর করার ডাক দিয়েছিলেন শুভেন্দু। মমতা পাল্টা বলেন, ‘‘বিলে রাজ্যপাল সই করলেই তা আইনে পরিণত হবে। বিরোধী দলনেতা বরং রাজ্যপালকে বলুন বিলে সই করতে।’’