মুখ্যমন্ত্রী ভুয়ো নথি দেখিয়েছেন বলে দাবি করলেন শুভেন্দু অধিকারী। ফাইল চিত্র।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের বাড়ি ‘প্রতীচী’র জমি বিতর্কে মুখ্যমন্ত্রী ‘ভুয়ো’ নথি তুলে ধরেছেন বলে দাবি করলেন শুভেন্দু অধিকারী। বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে বিরোধী দলনেতা দাবি করেছেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কাগজগুলি দেখিয়েছেন, তা ভুয়ো।’’ এই প্রসঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘এই জন্য রাজ্য সরকারকে সবাই ভুয়ো বলছে।’’
জমি দখলের অভিযোগ ঘিরে অমর্ত্য সেন এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘাত চরমে উঠেছে। এই আবহে গত সোমবার বীরভূম সফরে গিয়ে প্রথমে নোবেলজয়ীর বাড়িতে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে অমর্ত্যের সঙ্গে বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলেন মমতা। জমি বিতর্কে নোবেলজয়ীই সঠিক কথা বলছেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে সরকারি নথিও দেখান তিনি। ১৯৮৪ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কোন দাগের কোন জমি দিয়েছিল তার বিবরণ পাঠ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে মমতা বলেছিলেন, ‘‘যে জমিটা লিজ়ে দেওয়া হয়েছিল তা ১.৩৮৮ একর। আর ওরা (বিশ্বভারতী) বলছে ১.২৫ একর। ‘এল আর’ রেকর্ড বলছে, ১.৩৮ একর। তাই অমর্ত্য সেন ঠিক বলছেন। ১৯৫৬ সালের ‘আরএস’ রিপোর্টেও একই তথ্য রয়েছে।’’ এই তথ্য প্রকাশ করেই মমতা বলেছিলেন, ‘‘আমি ছোট্ট একটা ছক্কা মেরে গেলাম।’’
মুখ্যমন্ত্রীর ওই সরকারি নথি ‘ভুয়ো’ বলে বৃহস্পতিবার দাবি করলেন শুভেন্দু। তাঁর বক্তব্য, ‘‘লিজ় জমি হস্তান্তরযোগ্য নয়। লিজ়টা ছিল স্বর্গীয় আশুতোষ সেনের (অমর্ত্য সেনের বাবা)। তিনি মারা যাওয়ার পর লিজ় খতম। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কাগজগুলি দেখিয়েছেন, সেগুলি ভুয়ো। এই জন্য রাজ্য সরকারকে সবাই ভুয়ো বলছে।’’ যার জেরে জমি বিতর্কে ‘নথি’ নিয়ে এ বার রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হল। জমি বিতর্কে মুখ্যমন্ত্রী যে নথি দেখিয়েছেন তা ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বলে আগেই দাবি করেছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী।
জমি বিতর্কে মুখ্যমন্ত্রী নথি দেখানোর আগে এই সংক্রান্ত আর একটি সরকারি নথি প্রকাশ্যে আসে। যার সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। তাতে দেখা গিয়েছে, শান্তিনিকেতনের ১.৩৮ একর জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ় দেওয়া হয়েছিল অমর্ত্যের বাবা প্রয়াত আশুতোষ সেনকে। প্রকাশ্যে আসা সরকারি নথির প্রেক্ষিতে বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় বলেছিলেন, ‘‘প্রশাসনের কাছে যে নথি রয়েছে, সেই অনুযায়ী অমর্ত্য সেনের পরিবারের নামে ১ একর ৩৮ শতক জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ়ে রয়েছে।’’ জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের এক সূত্রেরও দাবি ছিল, সেন পরিবারকে যে ১.২৫ একর জমিই লিজ় দেওয়া হয়েছিল, তার সপক্ষে কোনও ‘রেকর্ড’ নেই। তার প্রেক্ষিতেই রবিবার বিশ্বভারতী দাবি করে, ১৯৪৩ সালের চুক্তি অনুযায়ী, আশুতোষকে ১.২৫ একর জমি লিজ় দিয়েছিল বিশ্বভারতী। ১.৩৮ একর নয়। মমতা অবশ্য অন্য দাবি করেছেন। সেই দাবির সপক্ষে নথিও দেখিয়েছেন। আর সেই নথিই এ বার ‘ভুয়ো’ বলে দাবি করে নতুন বিতর্ক উসকে দিলেন শুভেন্দু।
বিশ্বভারতীতে গৈরিকীকরণের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে মমতাকে কটাক্ষ করেছেন দিলীপ ঘোষ। টুইটারে বিজেপির সর্বভারতীয়-সহ সভাপতি লিখেছেন, ‘‘ওয়াশিং পাউডার দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে ধুয়ে দিয়েছে বিশ্বভারতী। এত অপমানিত আগে কখনও হননি। বহিরাগত হয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছেন। অনাহুত হয়ে গিয়েছেন ওখানে। জমি মাফিয়াদের বাঁচাতে বীরভূমে গিয়েছেন তিনি।’’