ফাইল চিত্র।
গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে এক সাক্ষাৎকারে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন বিষয়টি নিয়ে। এ বার আইনি পদক্ষেপও করলেন অমর্ত্য সেন। বিশ্বভারতীতে অবৈধ ভাবে জমি দখল রাখা নিয়ে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সংবাদমাধ্যমের কাছে যে ‘মিথ্যা অভিযোগ করেছেন’, অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করতে বলেছেন তিনি। তাঁর হয়ে ‘স্যান্ডার্সন অ্যান্ড মর্গ্যান’-এর আইনজীবী ইতিমধ্যেই উপাচার্যকে বিষয়টি জানিয়েছেন। এবং সে কথা উল্লেখ করে উপাচার্যকে একটি চিঠিও লিখেছেন নোবেলজয়ী।
চিঠিতে উপাচার্যের প্রতি অমর্ত্য সেনের বক্তব্য, “বিস্ময়কর অভিযোগটির সমর্থনে আপনি কোনও যুক্তি দেখাতে পারেননি। এখন বলছেন, ১৯৪০ সালে আমার বাবা বিশ্বভারতীর কাছ থেকে যে জমি দীর্ঘমেয়াদি লিজ় নিয়েছিলেন, তার সঙ্গে মিলিয়ে দেখার জন্য আপনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে প্রতীচীর জমি মেপে দেখার অনুরোধ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অশোক মাহাতো হুমকি দিয়েছেন, অতিরিক্ত জমি দখল করে থাকলে, (আমার বিরুদ্ধে) আইনি পদক্ষেপ করা হবে।” তাঁর মতে, “স্পষ্টতই ৮০ বছরের পুরনো একটি দলিলের এমন অপব্যবহারের উদ্দেশ্য হয়রান করা বা তার চেয়েও খারাপ কিছু।”
প্রতীচী বাড়িতে লিজ়ের অতিরিক্ত ১৩ ডেসিমেল জমি থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে চিঠিতে অমর্ত্য সেন উল্লেখ করেছেন, বিশ্বভারতীর কাছ থেকে নয়, বাজার থেকে তাঁর বাবা অনেকটা জমি কিনেছিলেন। যা তাঁদের বসতজমির সঙ্গে যুক্ত করা হয়। সেই জমি কেনার রেকর্ড রেজিস্ট্রি করা হয়েছিল সুরুল মৌজায়। কেনা জমির জন্য প্রতি বছর তিনি খাজনা ও পঞ্চায়েতের কর দিয়ে থাকেন। তাই লিজ়ের বাইরে অতিরিক্ত জমির খোঁজ মিললে ‘আইনি পদক্ষেপের যে হুমকি’ বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রার দিয়েছেন, তা ‘দুরভিসন্ধিমূলক’।
জমি বিতর্ক নিয়ে গত মাসেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অমর্ত্য সেনের কাছে গোটা রাজ্যের হয়ে ক্ষমা চেয়েছিলেন। তবে বিশ্বভারতীর তরফে ওই অভিযোগ থেকে সরে আসার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি। উপাচার্যকে লেখা চিঠিতে ক্ষোভের সঙ্গে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ লিখেছেন, “জানি না আপনি আপনার সহকর্মীদের সঙ্গে কী ব্যবহার করেন, তবে আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি, ছলচাতুরিতে আমি ক্লান্ত।” উদাহরণ হিসেবে অমর্ত্য সেন উল্লেখ করেছেন, “উপাচার্য দাবি করেছিলেন, আমি নাকি জুন (২০১৯) মাসে শান্তিনিকেতন থেকে তাঁকে ফোন করেছিলাম। জুনের ২ বা ১৪‒ এমন দু’টি তারিখও উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, আমি নাকি নিজেকে ভারতরত্ন বলে পরিচয় দিয়েছি, যা অকল্পনীয়। যখন জানানো হল, গোটা জুন মাসটাই আমি বিদেশে ছিলাম, তখন উপাচার্যের দফতর চটজলদি গল্পটা বদলে দিয়ে দাবি করে, জুন কিংবা জুলাইয়ে ফোন করেছিলাম। বলেছিলাম ওই কথাগুলিই।”
চিঠির শেষে প্রবীণ অর্থনীতিবিদ লিখছেন, “নতুন নতুন মিথ্যা সাজিয়ে নিজেদের অপরাধবোধ আর না-বাড়িয়ে, বিশ্বভারতীর উচিত আমার আইনজীবী যেমনটি বলেছেন, সেই মতো মিথ্যা অভিযোগগুলি অবিলম্বে প্রত্যাহার করা।”
বিশ্বভারতীর এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিশ্বভারতীর জমি এবং জমি দখল একটি বড় বিষয়। গত ১৫ বছরে বহু কমিটি ও অভ্যন্তরীণ অডিট হয়েছে এই বিষয়ে। তেমনই একটি অডিটের কথা উপাচার্য একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠকে জানান। কিছু ব্যক্তি নিজস্ব স্বার্থসিদ্ধির জন্য সেই তথ্যকে অহেতুক বড় করছে। ব্যক্তি অমর্ত্য সেনকে হেনস্থা করা বা তাঁর বিষয়টিকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে দেখার কোনও অভিপ্রায় বিশ্বভারতীর নেই।’’