Pisciculture

মাছ চাষে আগ্রহ আরও বাড়াতে নিগম চালু হলেও বাস্তবে ঘটছে উল্টোটাই

মৎস্য দফতরের এক আধিকারিকের পর্যবেক্ষণ, ‘‘খাদ্য দফতরের সাম্প্রতিক দুর্নীতির বেশির ভাগ উৎস খাদ্য নিগম। যেখানে দুর্নীতির জালে খোদ প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জেলে।”

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:২৩
Share:

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

মাছ চাষের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ বাড়ানোর পাশাপাশি বিজ্ঞানসম্মত ভাবে নতুন প্রজাতির মাছ চাষের লক্ষ্যে রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগম চালু হয়েছিল ১৯৬৬ সালে। পথ চলা শুরু হওয়ার পরে নিগম ধীরে ধীরে সমৃদ্ধও হচ্ছিল। কিন্তু অভিযোগ, ২০১৮ সালের পর থেকেই নিগমের অবনতি চোখে পড়ার মতো। এক দিকে মৎস্যমন্ত্রীর ভাই, সচিবের গাড়িচালক-সহ দফতরের একাধিক শীর্ষ আধিকারিকের নামে গাড়ি ভাড়া বাবদ নিয়ম
বহির্ভূত ভাবে মৎস্য উন্নয়ন নিগমের কোষাগার থেকে লক্ষাধিক টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, আয়ের উৎসের কথা না ভেবে শুধু খরচের জন্যই কি নিগম পরিচালিত?

Advertisement

মৎস্য দফতরের এক আধিকারিকের পর্যবেক্ষণ, ‘‘খাদ্য দফতরের সাম্প্রতিক দুর্নীতির বেশির ভাগ উৎস খাদ্য নিগম। যেখানে দুর্নীতির জালে খোদ প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জেলে। মৎস্য উন্নয়ন নিগমের বিরুদ্ধেও অতীতে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সেগুলির যথাযথ তদন্ত হলে অনেক তথ্যই বেরিয়ে আসবে।’’

মৎস্য উন্নয়ন নিগমের মাধ্যমে অনলাইনে কলকাতা ও শহরতলির মানুষ রান্না করা রকমারি
মাছ থেকে শুরু করে কাঁচামাছ ঘরে বসে পেতেন। কিন্তু ২০১৮ সালের পর থেকে সেই অনলাইন পরিষেবা বন্ধ। বছরের বিভিন্ন পার্বণ, উৎসবে নলবনে মৎস্য নিগম ন্যায্য মূল্যে
রকমারি ভোজনের ব্যবস্থা করত। কিন্তু সে সবও আজ অতীত। নিগমকে আর্থিক ভাবে সমৃদ্ধ করতে গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন মেলা, উৎসবে খাবারের স্টল বসত। কিন্তু এ বার সে সব কিছু হচ্ছে না। নিগম সূত্রের খবর, গত বছর কলকাতা বইমেলায় মৎস্য নিগম স্টল দিয়ে ৩০ লক্ষ টাকা আয় করেছিল। কিন্তু এ বছর বইমেলায় নিগমের কোনও স্টল বসছে না। নিগমের এক আধিকারিকের অভিযোগ, ‘‘আমাদের আয়ের বড় উৎস ছিল বিভিন্ন মেলা, উৎসবে খাবারের স্টল বসানো। কিন্তু কর্তৃপক্ষের চূড়ান্ত অবহেলায় নিগম আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’’ নিগমের আর এক আধিকারিকের অভিযোগ, ‘‘নিগম থেকে
কী ভাবে টাকা খরচ করা যায়, সেটা নিয়ে ব্যস্ত কর্তৃপক্ষ। অথচ, নিগমের আয় কী ভাবে বাড়ানো যায় তা নিয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহী নন তাঁরা।’’

Advertisement

২০২২-’২৩ অর্থবর্ষের বাজেটে রাজ্য মৎস্য উন্নয়ন নিগমের জন্য বরাদ্দ ছিল প্রায় সাত কোটি টাকা। ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি টাকায়। বিরোধীদের অভিযোগ, মাছ চাষের লক্ষ্যে বাজেট বরাদ্দ বাড়লেও নিগম উল্টো পথেই হাঁটছে। মৎস্য দফতরের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, বিলুপ্তপ্রায় মাছ যেমন পাবদা, কই, সরপুঁটি ইত্যাদির উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন প্রজাতির মাছের বৈজ্ঞানিক চাষ বরাবরই নিগমের বিভিন্ন জলাশয়ে হত। সারা রাজ্যে ২১টি প্রকল্পে প্রায় সাড়ে সাতশো হেক্টর এলাকা জুড়ে নিগম মাছ চাষ করে। অভিযোগ, ২০১৮ সালের পর থেকে নিগমের বিভিন্ন প্রকল্প কার্যত মুখ থুবড় পড়েছে। নিগমের এক আধিকারিকের অভিযোগ, ‘‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে না দাঁড়ালে প্রকল্পগুলির অবস্থা আরও রুগ্‌ণ হবে।’’

এ বিষয়ে জানতে চেয়ে মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী ও মৎস্য উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিশ্বনাথকে একাধিক বার ফোন ও মেসেজ করলেও কেউ উত্তর দেননি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement