R G Kar Medical College and Hospital

RG Kar Hospital: দুই পুরুষ আয়ার ‘মার’, আরজিকরে মৃত্যু রোগীর

হাসপাতালের শয্যা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন মৃত। তার পরই তাঁকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২১ ০৫:৫৯
Share:

পুরুষ আয়ার মারে স্বামীর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পূর্ণিমা দাসের। —নিজস্ব চিত্র।

পুরুষ আয়ার মারধরের জেরে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বুধবার সকালের এই ঘটনায় হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি টালা থানাতেও অভিযোগ করেছেন গোপাল দাস নামে বছর পঞ্চাশের ওই রোগীর স্ত্রী পূর্ণিমা দাস।

Advertisement

পুলিশ জানায়, এই অভিযোগের ভিত্তিতে মৃতদেহের ময়না-তদন্ত হচ্ছে। আজ, বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত দুই পুরুষ আয়াকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে। হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষও বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। একটি তদন্ত কমিটিও গড়া হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রের খবর।

পুলিশি সূত্রের খবর, দত্তপুকুরের বাসিন্দা পূর্ণিমাদেবী জানান, তাঁর স্বামী বাগুইআটি-উল্টোডাঙা রুটে অটো চালাতেন। গত ৩ জুন কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে দত্তপুকুর ও বামুনগাছির মধ্যে একটি গাড়ি গোপালবাবুর অটোয় ধাক্কা মারে। গোপালবাবুর বুক ও পিঠের কয়েকটি হাড় ভেঙে যায়। চোট লাগে কোমরেও। শরীরের বাঁ দিকে রক্ত জমাট বেঁধে যায় বলেও জানান পূর্ণিমাদেবী। বারাসত হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে কলকাতার কোনও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে বলা হয়। গত ১৪ জুন আরজি করে ভর্তি করে সে-দিনেই তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। কয়েক দিন আইসিইউ-এ থাকলেও পরে তাঁকে পুরুষদের সার্জারি ওয়ার্ডের জেনারেল বেডে সরানো হয়েছিল। পূর্ণিমাদেবীর দাবি, তাঁর স্বামীকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়ার কথাও বলেছিলেন চিকিৎসকেরা। বাড়িতে থাকলেও বেল্ট পরে তিনি কিছু কাজকর্ম করতে পারবেন বলে চিকিৎসকেরা জানান।

Advertisement

পূর্ণিমাদেবীর দাবি, গত মঙ্গলবার স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি জানান, তাঁকে বিমল ও পাপ্পু নামে দু’জন আয়া মারধর করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সোমবার গভীর রাতে হাসপাতালের শয্যা থেকে পড়ে গিয়েছিলেন আমার স্বামী।

সেই অপরাধেই ওঁকে ধরে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। বুকের যে-দিকে অস্ত্রোপচার হয়েছিল, সে-দিকের পিঠ মেরে ফুলিয়ে দেওয়া হয়। তবে এটাই প্রথম নয়, এর আগেও ওঁকে মারধর করা হয়েছিল।’’ পূর্ণিমাদেবী জানান, অভিযোগ জানানোর পরে এক চিকিৎসক গিয়ে ওই আয়াদের বলেছিলেন, ‘আমরা রোগীকে সুস্থ করে তোমাদের হাতে দিচ্ছি, যাতে তিনি আরও দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। সেখানে তোমরাই এমন কাণ্ড ঘটাচ্ছ!’

পূর্ণিমাদেবীর দাবি, মঙ্গলবার তিনি ওই দুই আয়াকে চেপে ধরায় তাঁরা বলেন, ‘ও কিছু নয়। ওতে কিছু হবে না!’’ প্রতিবাদ করায় সে- রাতে স্বামীর জন্য আর কোনও আয়া পাননি বলে অভিযোগ পূর্ণিমাদেবীর। তিনি বলেন, ‘‘উল্টে আমায় বলা হয়েছে, একটা শর্তে আপনার স্বামীকে দেখতে পারি। রাতে তাঁর কিছু হয়ে গেলে আমাদের দায়ী করা যাবে না।’’

পুরুষ ওয়ার্ডে মহিলাদের থাকতে দেওয়া হয় না। রাতে আয়া না-পেয়ে তিনি নিজেই মাঝেমধ্যে গিয়ে স্বামীকে দূর থেকে দেখে এসেছেন বলে জানান পূর্ণিমাদেবী। ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ পাশের শয্যার এক রোগী ফোন করে জানান, গোপালবাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। পূর্ণিমাদেবীর অভিযোগ, হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীরা অত ভোরে তাঁকে ঢুকতে দেননি। ৫টা ৫৫ মিনিট নাগাদ গোপালবাবুকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার পরেই আয়ার মারধরে তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন পূর্ণিমাদেবী।

অভিযুক্ত দুই আয়ার সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা যায়নি। আর জি করের সুপার মানস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কোনও আয়া সরকারি কর্মী নন। তাঁদের নিয়োজিত করেন রোগীর পরিবারের লোকেরাই। তাই রোগীর সঙ্গে তাঁর কী কথা হচ্ছে, তা জানা বা দেখা সম্ভব হয় না। তবে এই ঘটনায় পুলিশি তদন্তে হাসপাতালের তরফে সব রকমের সহযোগিতা করা হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement