— প্রতীকী চিত্র।
বিরোধীদের তরফে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল আগের দিনই। রাজ্যে ৬ বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সেই ‘প্রহসনে’র অভিযোগই ফিরে এল। বিরোধীদের অভিযোগ, পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শাসক দল যে ভাবে গা-জোয়ারি করে চলেছে, বাংলায় সুষ্ঠু নির্বাচন কার্যত অসম্ভব। শাসক তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে তুমুল কটাক্ষের সুরে বলেছে, ‘গো-হারা’ হার নিশ্চিত জেনে বিরোধীরা ‘নাটক’ করছে! উপনির্বাচনে ৬ আসনেই দলের জয় নিয়ে নিশ্চিত তৃণমূল।
উত্তরবঙ্গে সিতাই ও মাদারিহাট, উত্তর ২৪ পরগনায় হাড়োয়া ও নৈহাটি, পশ্চিম মেদিনীপুরের মেদিনীপুর এবং বাঁকুড়ার তালড্যাংরা কেন্দ্রে উপনির্বাচন ঘিরে বুধবার দিনভর বড় কোনও অশান্তির ঘটনা না-ঘটলেও শাসক দলের বিরুদ্ধে ‘গা-জোয়ারি ও জালিয়াতি’র অভিযোগে সরব হয়েছে সব বিরোধী দলই। বেশির ভাগ কেন্দ্রেই আগের রাত থেকে লোকজন এনে ভয় দেখানো এবং বহু বুথে বিরোধীদের এজেন্ট বসতে না-দেওয়া বা তাঁদের বার করে দেওয়াই মূল অভিযোগ। কেন্দ্রীয় বাহিনীর কার্যকারিতা নিয়ে যেমন ফের প্রশ্ন উঠেছে, তেমনই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দফতরে অভিযোগ জানিয়ে কোনও ফল মিলছে না বলেও বিরোধীরা সরব। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি অভিযোগ করেছেন, ‘‘নির্বাচন কমিশনের সিইও-র ভূমিকা অত্যন্ত খারাপ। কেন্দ্রীয় বাহিনী তালড্যাংরা, নৈহাটি, মেদিনীপুরে তুলনায় ভাল কাজ করেছে। কিন্তু সিতাই, মাদারিহাট, হাড়োয়ায় ভূমিকা খুবই খারাপ।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘আগামী ৩১ ডিসেম্বর আরিজ় আফতাব (সিইও) অবসর নেবেন। তার পরে ওই অফিস আমরা গঙ্গাজল, গোবরজল দিয়ে ধুয়ে আসব! মুখ্যমন্ত্রী ওঁকে আবার একটা পদ দেবেন!’’
তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের পাল্টা কটাক্ষ, ‘‘বিজেপির লোক নেই, কর্মী নেই। বুথে লোক দিতে না-পেরে বড় বড় কথা! আগে কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে কেঁদেছে, এ বার পেয়েও কাঁদছে! তৃণমূলের কর্মীরা প্ররোচনা এড়িয়ে ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন।’’
সিতাইয়ে তৃণমূল নেতা সময় বেঁধে বিরোধী এজেন্টদের বুথ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলছেন, তৃণমূলের প্রার্থী কেন্দ্রীয় বাহিনীকে বসে থাকতে বলছেন, নৈহাটিতে শাসক দলের প্রার্থী ৮০% ভোটদান নিশ্চিত করতে বলছেন, মাদারিহাটে বিজেপির প্রার্থীর গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ হচ্ছে, হাড়োয়ায় আইএসএফের প্রার্থীকে বিক্ষোভ দেখিয়ে বুথ থেকে বার করে দেওয়া হচ্ছে, এজেন্টদের তুলে দেওয়া হচ্ছে, মেদিনীপুরে বাইরের লোকজন ঢুকেছে— এই রকম নানা অভিযোগ সামনে এনে বিরোধীদের প্রশ্ন, এটা কি ‘সুষ্ঠু’ ভোট? উপনির্বাচনের দিনেই হাওড়ার শ্যামপুরে বিজেপির সভা করতে গিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘উপনির্বাচনে পুলিশ বনাম জনতা ভোট হয়েছে। তবে এর আগে যে চারটি উপনির্বাচন হয়েছে, তাতে যে ভাবে ভোট লুট হয়েছিল, এ বারে ততটা করতে পারেনি।’’ তাঁর দাবি, ‘‘হাড়োয়ায় সিপিএম-আইএসএফ কিছুটা লড়াই করেছে। কিন্তু পারেনি। বাকি জায়গায় বিজেপি লড়াই করেছে।’’ বিজেপির অভিযোগ, ভোটের আগের রাত থেকে দলের কর্মীদের নানা জায়গায় ধরপাকড় চালিয়েছে পুলিশ।
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর প্রশ্ন, ‘‘গোটা দেশে নির্বাচন ও উপনির্বাচন হচ্ছে। এমন অভিযোগ অন্য কোথাও নেই। এই ভোটে তো সরকার বদল হবে না! তবু মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারবেন না? বাংলায় মানুষ গণতন্ত্রকে ভরসা করলেও তৃণমূল ভয় পায়। পুলিশ ও তৃণমূল মিলে দখলের ব্যবস্থাই চলবে?’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারেরও মত, “ভোটের নামে এটা প্রহসন! কমিশনের দায়িত্ব ভোট-কেন্দ্রের ভিতরে। বাইরে আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব রাজ্য পুলিশের। সার্বিক ভাবে ভয়-ভীতির পরিবেশ ছিল। এজেন্টদের বসতে দেওয়া হয়নি। ভোটের আগের দিন ভয় দেখানো হয়েছে। বহু জায়গায় তৃণমূলের লোক ঢুকে ভোট দিয়েছে। এই ভাবে বাংলায় ভোট হতে থাকলে নির্বাচন করানোর দরকারই বা কী?’’
হাড়োয়ার ৩৭টি বুথে পুনর্নির্বাচনের দাবি করেছেন বামফ্রন্ট সমর্থিত আইএসএফ প্রার্থী। আইএসএফের চেয়ারম্যান নওসাদ সিদ্দিকীর অভিযোগ, “শাসক মানুষের মতামতের উপরে ভরসা রাখতে পারছে না। ক্ষমতা দেখিয়ে, বুথ দখল করে জিততে চাইছে। সর্বত্র তৃণমূল গুন্ডাদের দ্বারা ভোটকে প্রহসনে পরিণত করার চেষ্টা করেছে। কমিশনকে আরও দায়িত্ব নিতে হবে।’’
শাসক তৃণমূলের অবশ্য দাবি, ৬ আসনেই তাদের জয় নিশ্চিত। দলের নেতা কুণাল ঘোষের মন্তব্য, ‘‘গো-হারা হারবে জেনে নাটক করছে বিরোধীরা! মরিয়া হয়ে ভুয়ো ভোট দিতে গিয়ে ওরাই ধরা পড়েছে। যাঁরা সমায়িক ভাবে বিভ্রান্ত হয়ে মাদারিহাটে বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন, তাঁরাও এখন বীতশ্রদ্ধ।’’ তৃণমূলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার কমিশনে দু’টি চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, মাদারিহাটে বিজেপি এবং হাড়োয়ায় আইএসএফ ‘গুন্ডামি’ করেছে।