—প্রতীকী ছবি।
প্রথমে সামান্য উঁচু সীমানা পাঁচিল দেওয়া হল। কয়েক মাসের অপেক্ষা। কেউ ‘আপত্তি’ না করলে, আচমকা নির্মাণ শুরু। দ্রুত ঝাঁ চকচকে রিসর্ট গড়ে উঠল। শুরু পর্যটকদের আনাগোনা। রিসর্টে থাকেন এক জন ম্যানেজার এবং দু’তিন জন কর্মী, যাঁরা স্থানীয় যুবক। মালিক কে? অনেক ক্ষেত্রেই ম্যানেজার বা কর্মীরা উত্তর দেন, “দাদার রিসর্ট।” এই ‘দাদা’ বা কোনও ক্ষেত্রে ‘ম্যাডাম’-দের অধিকাংশ কলকাতায় থাকেন বলে দাবি করা হয়। জলপাইগুড়ির লাটাগুড়ি এলাকায় জঙ্গল লাগোয়া বহু সরকারি জমি জবরদখলের ‘মডেল’ মোটের উপরে এমনই, দাবি স্থানীয় সূত্রের। তবে প্রথা মেনে জমি কিনে অথবা লিজ়ে নিয়ে রিসর্ট গড়ে, ধীরে ধীরে আশপাশের সরকারি জমি দখল করে সম্প্রসারণের ‘নজির’ও রয়েছে, দাবি স্থানীয়দের একাংশেরই।
ডুয়ার্সে সরকারি জমি ‘জবরদখল’ করে তৈরি এমন কিছু রিসর্ট কর্তৃপক্ষের হাতে কাগজপত্র রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তা বহু বছর আগে কোনও গ্রাম পঞ্চায়েত অথবা সরকারি সংস্থার দেওয়া জমি ব্যবহারের ‘ছাড়পত্র’। প্রশাসনের দাবি, একমাত্র জেলাশাসকের অফিসের বিশেষ নির্দেশে অথবা নজরদারিতে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের অনুমতি ছাড়া, জমি ব্যবহারের কোনও ছাড়পত্রই বৈধ নয়। ‘ভুয়ো’ বা ‘অবৈধ’ কাগজ তৈরি করে জমি দখল করে রিসর্ট তৈরি হয়েছে— এমন উদাহরণও রয়েছে। সম্প্রতি ‘নবান্ন’ থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি জমি দখল নিয়ে কড়া হুঁশিয়ারি দেওয়ার পরে, এমন একাধিক তথ্য জেলা প্রশাসনের নজরে এসেছে। বুধ এবং বৃহস্পতিবার লাটাগুড়িতে বেশ কিছু রিসর্টে অভিযান চালান ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকেরা। অভিযানকারী আধিকারিকেরা রিসর্টগুলির কর্তৃপক্ষকে দ্রুত জমির কাগজপত্র নিয়ে বিভাগীয় দফতরে দেখা করার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রশ্ন উঠেছে, এত দিন কি প্রশাসন চোখ বুজে ছিল? প্রশাসন সূত্রের দাবি, ব্যবস্থা নেওয়ায় বাধা হন ‘প্রভাবশালীরা’। ‘প্রভাবশালীদের’ মধ্যে শাসক ও বিরোধী দলের নেতাদের নামও রয়েছে। রয়েছে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী এবং এক সময়ে উত্তরবঙ্গে কর্মরত প্রশাসনের পদস্থ ব্যক্তিদের নামও। এরা নামে-বেনামে বহু রিসর্টের মালিক বলে দাবি।
নিয়ম অনুযায়ী, রিসর্টের ক্ষেত্রে জেলা পরিষদের ছাড়পত্র প্রয়োজন। তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি মহুয়া গোপ নিজেই জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ। তিনি বলেন, “জেলা পরিষদে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, বহু রিসর্টের ভবনের নকশার অনুমোদন নেই। প্রশাসনকে জানিয়েছি। আগেও জানিয়েছিলাম। তখন কাজ হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে, প্রশাসন জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে।’’
সরকারি জমি দখল করে রিসর্ট গড়ায় তৃণমূল নেতাদের একাংশের নাম জড়ানো নিয়ে মহুয়া বলেন, “নিয়মনীতি না মেনে জমি দখল শুরু হয়েছে বাম আমল থেকে। তখন যথেচ্ছ ভাবে জমি দখল হলেও, প্রশাসন কিছু করেনি।” সিপিএমের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক সলিল আচার্যের প্রতিক্রিয়া, “কথাটা সত্যি নয়। নিজেদের সরকারের ভাবমূর্তি বাঁচাতে তৃণমূলের একটা ঢাল তো লাগবে।”